লিমনের এগিয়ে চলা by মো. আক্কাস সিকদার

র‌্যাব গুলি করার পর মনে করেছিলাম, আমি হয়তো মারা যাব। কোনোমতে বেঁচে থাকলেও বাকি জীবন ভিক্ষা করে খেতে হবে। কিন্তু প্রথম আলোসহ অন্যান্য সংবাদপত্র ও টেলিভিশন আমাকে নিয়ে প্রতিবেদন করার পর সবকিছু পাল্টে যেতে থাকে। প্রতিদিন অনেক সাধারণ মানুষ আমাকে ফুল ও ফল দিয়ে যেতেন। তখন আবার নতুন করে স্বপ্ন দেখা শুরু করি। মানুষের ভালোবাসাই আমাকে স্বপ্ন দেখাতে শেখায়।’


কথাগুলো বলছিল র‌্যাবের গুলিতে বাঁ পা হারানো ঝালকাঠির রাজাপুর উপজেলার সাতুরিয়া গ্রামের দিনমজুর তোফাজ্জেল হোসেনের ছেলে লিমন হোসেন। পা হারানোর পর র‌্যাবের দুটি ‘মিথ্যা’ মামলা নিয়েও মনোবল হারায়নি লিমন। কৃত্রিম পা নিয়ে স্বপ্ন দেখেছে সামনে এগিয়ে চলার।
লিমনের সেই স্বপ্ন আজ পূরণ হতে চলেছে। সারা দেশে আজ রোববার থেকে শুরু হওয়া এইচএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় সেও অংশ নেবে। পরীক্ষা দেবে পিরোজপুরের কাউখালী উপজেলার সরকারি বালক উচ্চবিদ্যালয় কেন্দ্রে।
গতকাল শনিবার কাউখালীর ভাড়া বাসায় কথা হয় লিমনের সঙ্গে। লিমন বলে, ‘চিকিৎসা শেষে বাড়ি আসার পর উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষা দেওয়ার আগ্রহ প্রকাশ করলে অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিন মাহমুদ স্যার আমার ফরম পূরণ ও ক্লাস করার ব্যবস্থা করে দেন। ফরম পূরণের টাকাও অন্য শিক্ষার্থীদের চেয়ে কম নেয় কলেজ কর্তৃপক্ষ।’
কাউখালীর কাঁঠালিয়া পিজিএস বহুমুখী স্কুল ও কলেজের অধ্যক্ষ নাসির উদ্দিনের আশা, লিমন পরীক্ষায় মোটামুটি ভালো করবে। আর সহপাঠী রাতুল মজুমদার দোয়া করছে, যাতে লিমনের পরীক্ষা ওর চেয়েও ভালো হয়।
লিমনের ভাই হেমায়েত হোসেন বলেন, ‘লিমন গত বছরই দুই পায়ে ভর করে পরীক্ষা দিতে পারত। র‌্যাবের নিষ্ঠুরতার কারণে এক পায়ে ভর করে এবার পরীক্ষা দিতে হচ্ছে। ওর এক পায়ে হাঁটার দৃশ্য দেখলেই কান্না আসে।’
গত বছরের ২৩ মার্চ উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষার ১২ দিন আগে সাতুরিয়া গ্রামের বাড়ির পাশে র‌্যাবের গুলিতে আহত হয় লিমন। পরে জীবন বাঁচাতে চিকিৎসকেরা তার বাঁ পা কেটে ফেলেন। ক্রসফায়ারের প্রচলিত গল্পের আদলে র‌্যাবের সঙ্গে বন্দুকযুদ্ধের অভিযোগ করে লিমনের বিরুদ্ধে দুটি মামলা করা হয়। একটি অস্ত্র আইনে, অন্যটি সরকারি কাজে বাধাদানের অভিযোগে। লিমনকে সন্ত্রাসী বানানোর চেষ্টা করে র‌্যাব। লিমনের ওপর এই নিষ্ঠুরতার খবরে দেশব্যাপী সমালোচনার ঝড় উঠলে রাজাপুর থানার পুলিশ তড়িঘড়ি করে গোপনে অস্ত্র মামলায় লিমনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করে। দুটি মামলাতেই প্রতি মাসে ঝালকাঠি জেলা সদরে গিয়ে লিমনকে আদালতে হাজিরা দিতে হয়। অপরদিকে র‌্যাব সদস্যদের বিরুদ্ধে লিমনকে হত্যাচেষ্টার অভিযোগে তার মা যে মামলা করেছিলেন, সেই মামলার তদন্তে কোনো অগ্রগতি নেই।
এ ব্যাপারে লিমনের মা হেনোয়ারা বেগম জানান, সরকার লিমনের নামে দায়ের করা দুটি মিথ্যা মামলা এখনো প্রত্যাহার করেনি। মিথ্যা মামলার অভিযোগ মাথায় নিয়েই লিমনকে পরীক্ষা দিতে হচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.