ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়’-সমাবর্তনে তারুণ্যের জয়গান

কালো রঙের টুপিগুলো উড়ছে। আনন্দে আত্মহারা সবাই। দেশের শীর্ষ বিদ্যাপীঠ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে শিক্ষার সমাপনী সনদ নিয়েছেন তাঁরা। উচ্চশিক্ষার কৃতিত্বের স্বীকৃতি পাওয়ার উচ্চ্ছ্বাস ছড়িয়ে দিয়েছেন তাঁরা পুরো ক্যাম্পাসে।
গতকাল শনিবার ছিল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬তম সমাবর্তন।


সকাল থেকেই ক্যাম্পাসে জড়ো হন বিশ্ববিদ্যালয়ের ইতিহাসে সবচেয়ে বড় এ সমাবর্তনে অংশ নেওয়া শিক্ষার্থীরা। এবারের সমাবর্তনে অংশগ্রহণ করেছেন ১৬ হাজার ৮২৬ জন গ্র্যাজুয়েট, পিএইচডি ও এমফিল ডিগ্রিপ্রাপ্ত, স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী-গবেষক এবং প্রায় তিন হাজার অতিথি।
শিক্ষাজীবন আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ। প্রিয় ক্যাম্পাসকে স্মৃতির ফ্রেমে বেঁধে রাখতে শিক্ষার্থীরা ছিলেন তৎপর। কালো রঙের বিশেষ গাউন পরে ক্যাম্পাসময় ছুটে বেড়িয়েছেন তাঁরা। চৈত্রের খরতাপ হার মেনেছিল তারুণ্যের জয়গানে। অপরাজেয় বাংলার পাদদেশ, রাজু ভাস্কর্য, স্বোপার্জিত স্বাধীনতা, কার্জন হল, কলাভবনসহ প্রতিটি স্থানই সরব ছিল তাঁদের প্রাণখোলা আড্ডায়।
তবে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার মহা পরিচালক প্যাসকেল ল্যামিকে সমাবর্তন বক্তা করায় সমাবর্তন বর্জন করেছেন প্রগতিশীল ও বামপন্থী ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতা-কর্মীরা। ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ মিছিলও করেছেন তাঁরা। দাহ করেছেন প্যাসকেল ল্যামির কুশপুত্তলিকা।
রাষ্ট্রপতি ও বিশ্ববিদ্যালয়ের আচার্য মো. জিল্লুর রহমানের নেতৃত্বে বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্জন হল থেকে সমাবর্তনের শোভাযাত্রা শুরু হয়ে বেলা সাড়ে ১১টায় কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে হাজির হলে শুরু হয় মূল অনুষ্ঠান। রাষ্ট্রপতি অনুষ্ঠানে সভাপতিত্বও করেন।
জাতীয় সংগীত পরিবেশনের পর সমাবর্তন অনুষ্ঠানের উদ্বোধন ঘোষণা করেন তিনি। এরপর বিভিন্ন ধর্মীয় গ্রন্থ থেকে পাঠ করা হয়। প্যাসকেল ল্যামিকে ডক্টর অব লজ দেওয়ার ঘোষণা দিয়ে পরিচিতি পাঠ করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক। রাষ্ট্রপতি তাঁর কাছে ডক্টর অব লজ ডিগ্রির পত্র ও ক্রেস্ট তুলে দেন।
এরপর পিএইচডি ডিগ্রিপ্রাপ্ত ১০০ জন ও এমফিল ডিগ্রিপ্রাপ্ত ৫৩ জনের নাম ঘোষণা করা হয়। স্বর্ণপদকপ্রাপ্ত শিক্ষার্থী-গবেষকদের হাতে পদক তুলে দেন রাষ্ট্রপতি। এ সময় করতালিতে মুখর হয়ে ওঠে অনুষ্ঠানস্থল।
রাষ্ট্রপতি তাঁর বক্তব্যে স্নাতকদের উদ্দেশে বলেন, ‘আমাদের স্বাধীনতার ইতিহাসে ছাত্রসমাজের গৌরবময় অবদান রয়েছে। ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন থেকে শুরু করে ঊনসত্তরের গণ-অভ্যুত্থান, একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ—প্রতিটি গণতান্ত্রিক আন্দোলনে তারা অবদান রেখেছে। তাদের আত্মত্যাগের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে স্বাধীন-সার্বভৌম দেশ। ছাত্রসমাজের অতীতের সেই গৌরব এখন অনেকটাই ম্লান।’
তিনি বলেন, ছাত্ররা দেশের চালিকাশক্তি, জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষা এবং সামনে এগিয়ে যাওয়ার অবলম্বন। ছাত্রদের গৌরবময় অতীত এখন প্রতিফলিত হয় না। ব্যক্তি বা ক্ষুদ্র দলীয় স্বার্থে ছাত্রসংগঠনগুলোর অন্তর্দলীয় কোন্দলে জড়িয়ে পড়া জাতি প্রত্যাশা করে না। অতীত গৌরবকে ধারণ করে জাতির গঠনমূলক কাজে অবদান রাখার জন্য তিনি ছাত্রদের প্রতি আহ্বান জানান।
প্যাসকেল ল্যামি তাঁর বক্তব্যে অনুন্নত দেশগুলোর সঙ্গে বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার কর্মকাণ্ডের বিভিন্ন দিক তুলে ধরেন। সোনার বাংলা গড়তে এই ডিগ্রিধারীরা সম্মিলিত প্রচেষ্টা চালাবে বলে আশা প্রকাশ করেন তিনি।
প্যাসকেল ল্যামির বক্তব্যজুড়ে শিক্ষার্থীদের জন্য প্রেরণাদায়ী কোনো কথা না থাকায় শিক্ষার্থীরা ক্ষোভ প্রকাশ করেন।
সমাবর্তনে অংশ নিতে আসা ফিন্যান্স বিভাগের শিক্ষার্থী কাজল আবদুল্লাহ বলেন, ‘একজন সমাবর্তন বক্তা বিশ্বের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে শিক্ষার্থীদের উৎসাহিত করতে বক্তব্য দেন। কিন্তু এবারের সমাবর্তন বক্তব্য শুনে মনে হয়েছে, বক্তা বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থার ব্র্যান্ডিং করতে এসেছেন।’
সমাবর্তনের আনুষ্ঠানিকতা শেষে শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসে ছড়িয়ে পড়েন। দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে তাঁরা বন্ধু, সতীর্থদের সঙ্গে আড্ডা দিয়ে কাটিয়েছেন সময়।

No comments

Powered by Blogger.