পবিত্র কোরআনের আলো-আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের অনুগত লোকেরা নবী-রাসুলদের সঙ্গী হবেন

৬৭. ওয়া ইযান লাআ-তাইনাহুম্ মিল্লাদুন্না আজরান আ'যীমা। ৬৮. ওয়া লাহাদাইনাহুম সিরাত্বাম মুছতাক্বীমা। ৬৯. ওয়া মান ইউতিয়ি'ল্লাহা ওয়াররাসুলা ফাউলায়িকা মাআ'ল্লাযীনা আনআ'মাল্লাহু আ'লাইহিম্ মিনান নাবিয়্যীনা ওয়াস্সিদ্দীক্বীনা ওয়াশ্শুহাদায়ি ওয়াস্সা-লিহীনা ওয়া হাছুনা উলা-য়িকা রাফীক্বা।


৭০. যা-লিকাল ফাদ্বলু মিনাল্লাহি ওয়া কাফা বিল্লাহি আ'লীমা।
[সুরা : আন নিসা, আয়াত : ৬৭-৭০]

অনুবাদ
৬৭. তাহলে আমিও আমার পক্ষ থেকে তাদের বড় ধরনের পুরস্কার দিতাম।
৬৮. আর আমি তাদের সরল পথ দেখিয়ে দিতাম।
৬৯. যারা আল্লাহ ও তাঁর রাসুলের আনুগত্য করে, তারা শেষ বিচারের দিন সেসব পুণ্যবান মানুষের সঙ্গে থাকবে। যাদের আল্লাহ তায়ালা প্রচুর নিয়ামত দান করেছেন; নিয়ামতপ্রাপ্ত সেইসব ব্যক্তি হচ্ছেন_ নবী-রাসুল, সিদ্দিক বা সত্যানুশীলনকারী, আল্লাহর পথে শাহাদাতবরণকারী এবং নেককার মানুষ, সাথি হিসেবে তাঁরা সত্যিই উত্তম।
৭০. এ হচ্ছে আল্লাহর পক্ষ থেকে পাওয়া সৌভাগ্য। জ্ঞানী হিসেবে আল্লাহ তায়ালাই যথেষ্ট।

ব্যাখ্যা
৬৭ ও ৬৮ নম্বর আয়াত দুটি আগের আয়াতের ধারাবাহিকতায় নাজিল হয়েছে। অর্থাৎ আল্লাহ তায়ালা যেসব উপদেশ দিয়েছেন মানুষ যদি সেগুলো মেনে চলে, তবে আল্লাহ তাদের আরো বড় ধরনের পুরস্কার দেবেন এবং তাদের সরল পথ দেখিয়ে দেবেন। সরল পথ পাওয়াই মানবজীবনের শ্রেষ্ঠ পাওয়া। সরল পথই আল্লাহর পথ এবং আল্লাহর সন্তুষ্টির পথ। ৬৯ নম্বর আয়াতটির শানেনুজুল এ রকম : কোনো কোনো সাহাবি রাসুল (সা.)-এর খেদমতে হাজির হয়ে বলতেন, দুনিয়ায় রাসুল (সা.)-কে দেখার ইচ্ছা হওয়া মাত্র তাঁর খেদমতে হাজির হয়ে দর্শন লাভ করতে পারি। কিন্তু বেহেশতে রাসুলের স্থান হবে অনেক ওপরে, সম্মানের অনেক উঁচু আসনে তিনি সমাসীন থাকবেন, সেখানে আমরা কিভাবে রাসুলের দর্শন লাভ করব? এর জবাবে এ আয়াতটি নাজিল হয়।
এই প্রশ্ন সংগত কারণেই পরবর্তী উম্মতের পক্ষ থেকেও আসে। সম্মানিত সাহাবিরা পৃথিবীতে রাসুলে কারিমের দর্শন লাভ করেছেন, কিন্তু পরবর্তী উম্মতের নেককার ব্যক্তিরা রাসুলের দর্শন কিভাবে লাভ করবেন? এ প্রশ্নের জবাবও এ আয়াতে রয়েছে। পরকালে আল্লাহ তায়ালা সর্বযুগের নেককার বান্দাদের নবী-রাসুল, সিদ্দিক ও শহীদগণের সঙ্গী করবেন। তাঁরা আধ্যা@ি@@@ক দৃষ্টিতে রাসুলকে দেখতে পাবেন। তাঁরা সিদ্দিক ও শহীদদেরও অনুরূপ দেখতে পাবেন, এমনকি তাদের সঙ্গেই অবস্থান করবেন। সঙ্গী হিসেবে তাঁরা এসব লোককেই পাবেন। সেটা এক বিরাট সৌভাগ্যের ব্যাপার। এখানে সর্বযুগের নেককার লোকদের জন্য উচ্চতর মর্যাদা ও সৌভাগ্যদানের কথা বলা হয়েছে। নেককার লোকেরা উচ্চ সম্মানপ্রাপ্ত লোকদের সঙ্গে স্থান পাবেন; মহান মানুষরাই হবেন তাঁদের সঙ্গী। এটা নেককার লোকদের জন্য পরম সৌভাগ্যের। মানুষের প্রকৃত মর্যাদা শুধু ধন-সম্পদ বা ভোগবিলাসের মাধ্যমে পরিমাপ করা যায় না। মর্যাদার আসল স্থান হলো সমাজে সে কেমন লোকদের সঙ্গে কী পরিবেশে থাকে? এখানে পরকালে প্রকৃত মোমেন বা আল্লাহর প্রিয় ব্যক্তিরা কেমন পরিবেশে কাদের সঙ্গে অবস্থান করবেন সেটাই মৌলিক ব্যাপার।
৬৯ নম্বর আয়াতের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা নেক্কার বান্দাদের আশ্বস্ত করেছেন যে, তাঁদের অবস্থান হবে নবী-রাসুল, সিদ্দিক বা সত্যানুশীলনকারী এবং আল্লাহর পথে শাহাদাত বরণকারীদের সঙ্গে। এখানে প্রকৃত সম্মানের অধিকারী মানুষদের তালিকাই দেওয়া হয়েছে। সর্বোচ্চ সম্মানের অধিকারী নবী-রাসুলগণ এবং তাঁদের মধ্যে সর্বশেষ নবী হজরত মুহাম্মদ (সা.) সর্বোচ্চ মর্যাদার অধিকারী। উম্মতে মোহাম্মদীর শ্রেষ্ঠজনদের এখানে আশ্বস্ত করা হচ্ছে যে শেষ বিচারের দিন তাঁরা সৃষ্টিজগতের শ্রেষ্ঠ মানব হজরত মুহাম্মদ (সা.)-এর সানি্নধ্য লাভ করবেন এবং তিনি সবার জন্য আল্লাহর দরবারে সুপারিশ করবেন।
৭০ নম্বর আয়াতে বলা হয়েছে, এটা আল্লাহর পক্ষ থেকে দান করা সৌভাগ্য এবং আল্লাহ তায়ালা পরিপূর্ণ জ্ঞানী। আসলে পরিপূর্ণ জ্ঞান একমাত্র আল্লাহ তায়ালার কাছেই সংরক্ষিত। মানুষ খুব সামান্য কিছুই জানে। এখানে আল্লাহর অনুগ্রহে যাঁরা ওহীর মাধ্যমে জ্ঞান লাভ করেছেন, তাঁরা আল্লাহর প্রকৃত জ্ঞানের কিয়দংশের অধিকারী। আল্লাহ তায়ালা অনুগ্রহ করেই তাঁদের এই সৌভাগ্য দান করেছেন এবং নবীদের যাঁরা অনুসরণ করেন, তাঁদেরও আল্লাহ তায়ালা অনুরূপ সৌভাগ্যের অংশীদার করেছেন।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী

No comments

Powered by Blogger.