লোডশেডিং বনাম আর্থ আওয়ার by শেখ রোকন

বিদ্যুৎ বিভাগের বিরুদ্ধে নাগরিকের এন্তার অভিযোগ। অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা প্রভৃতি তো রয়েছেই; অনেকে মনে করেন, জনগুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা এই বিভাগ যদি ঠিকমতো কাজ করত, তাহলে বিদ্যমান সম্পদ ও কাঠামোতেও পরিস্থিতির উন্নয়ন সম্ভব হতো। জনপ্রত্যাশায় সাড়া দিয়েই কি-না জানি না, বৃহস্পতিবার তারা রীতিমতো সংবাদ সম্মেলন করে নতুন


কর্মসূচি দিয়েছিল_ শনিবার যেন নাগরিকরা এক ঘণ্টা নিষ্প্রদীপ থাকে। করিতকর্মা বিদ্যুৎ বিভাগের আহ্বানে সাড়া দিয়ে গতকাল রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত কেউ নিষ্প্রদীপ ছিল কি-না জানা নেই। তবে বিদ্যুতায়নের প্রশ্নে না ঘরকা না ঘাটকা এই দেশের বহু নাগরিকই যে বেশ কয়েক ঘণ্টা বিদ্যুৎহীন কাটিয়েছেন_ তা হলফ করেই বলা যায়।
জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রতিক্রিয়াজনিত ঝুঁকিতে প্রথম সারিতে থাকা একটি দেশে 'আর্থ আওয়ার' পালনের প্রতীকী তাৎপর্য রয়েছে বৈকি। কারণ বৈশ্বিক উষ্ণায়নের অন্যতম প্রধান অনুঘটক বিদ্যুৎ উৎপাদন ও এর মাত্রাতিরিক্ত ব্যবহার। বিদ্যুৎ সাশ্রয়ে জনসচেতনতা বৃদ্ধির জন্য, উষ্ণায়ন ও জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকিমুক্ত এক আলোকিত বিশ্বের পথ দেখানোর জন্যই পরিবেশবাদীরা মার্চের শেষ শনিবার ষাট মিনিটের প্রতীকী কর্মসূচি চালু করেছে। বিশ্বের অনেক শহরেই ওই দিন স্থানীয় সময় রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত অতি প্রয়োজনীয় ছাড়া বাকি বাতিগুলো নিভিয়ে রাখা হয়। বন্ধ থাকে অ-জরুরি বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম। কিন্তু দিনে কয়েক ঘণ্টা লোডশেডিংয়ের শিকার নাগরিকের প্রতি সেই আহ্বান যখন খোদ বিদ্যুৎ বিভাগ থেকে জানানো হয়, তখন সেটা তামাশা ছাড়া আর কী?
অনেকেই জানেন, পরিবেশ সংরক্ষণবাদী বৈশ্বিক সংস্থা ওয়ার্ল্ড ওয়াইড ফান্ড ফর নেচার, সংক্ষেপে ডবি্লউডবি্লউএফ বিশ্বব্যাপী এ কর্মসূচির প্রবক্তা ও সমন্বয়ক। আর্থ আওয়ার প্রথম উদযাপিত হয়েছিল ২০০৭ সালের ৩১ মার্চ অস্ট্রেলিয়ার সিডনিতে। ডবি্লউডবি্লউএফ ও সিডনি মর্নিং হেরাল্ড-এর উদ্যোগে সাড়া দিয়ে ওই নগরীর কমবেশি ২২ লাখ বাসিন্দা তাদের অ-জরুরি বাতি সন্ধ্যা সাড়ে ৭টা থেকে এক ঘণ্টার জন্য নিভিয়ে দিয়েছিল। পরের বছর বিপুল সাড়া পড়েছিল। সাত মহাদেশের ৩৫টি দেশের ৪০০ শহরে পালিত হয়েছিল আর্থ আওয়ার_ রাত ৮টা থেকে ৯টা। ২০০৯ সাল থেকে সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা পর্যন্ত আর্থ আওয়ার নির্দিষ্ট করা হয়। বাংলাদেশেও ২০১০ সাল থেকে বিচ্ছিন্নভাবে আর্থ আওয়ার পালিত হয়েছে। এবারই প্রথম সরকারি বিদ্যুৎ বিভাগ এগিয়ে এসেছে।
আর্থ আওয়ার নিয়ে প্রথম থেকেই কিছু প্রশ্ন উঠেছে। যেমন টিভি চ্যানেলগুলো কী করবে? সম্প্রচার বন্ধ রাখবে? বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই প্রশ্নও মৌলিক হয়ে ওঠে_ যে বৈদ্যুতিক সুইচ প্রাণহীন, সেটা বন্ধ করা হবে কীভাবে? বিদ্যুৎ বিভাগ বরং এই ঘোষণা কি দিতে পারত না যে, শনিবার রাত সাড়ে ৮টা থেকে সাড়ে ৯টা_ এই এক ঘণ্টা দেশের কোথাও বিদ্যুৎ বিভ্রাট হবে না?
বিদ্যুতের চাহিদা ও সরবরাহের ব্যবধান আমাদের অজানা নয়। উন্নয়নশীল একটি দেশে সেটা সম্ভবত স্বাভাবিক। তারপরও মাঝে মাঝে বিদ্যুৎ উৎপাদন চাহিদার কাছাকাছি চলে যায়। আর্থ আওয়ারকে সামনে রেখে বিদ্যুৎ বিভাগ বাকি ব্যবধানটুকু ঘুচিয়ে ফেলার চ্যালেঞ্জটিই কি নিতে পারত না? গ্যাস-ডিজেল-কয়লানির্ভর বিদ্যুৎ, কাপ্তাইয়ের সবেধন জলবিদ্যুৎ, হালের কুইক রেন্টাল_ সবকিছু ঠিক রেখে, বিচ্ছিন্নভাবে উৎপাদিত সৌরবিদ্যুতের সুষম বণ্টনের মাধ্যমে একটি ঘণ্টার জন্যও আমরা কি বিদ্যুতের লোডশেডিংমুক্ত হতে পারতাম না? এবার যাই হোক, বিদ্যুৎ বিভাগ কি আগামী বছরের জন্য চ্যালেঞ্জটি নেবে?
skrokon@gmail.com

No comments

Powered by Blogger.