কার কাছে বিচার চাইব, মানবতা কোথায়?

‘মাত্র ২২ দিনের সংসার আমার। শিশুপার্কে বেড়াতে গিয়ে আমি আমার জীবনের সবচেয়ে বড় অবলম্বন আমার স্বামীকে হারিয়েছি। আমি কার কাছে বিচার চাইব? শিশুপার্কের মতো বিনোদন কেন্দ্রে কেন এত অব্যবস্থাপনা? মানবতা আজ কোথায়? কখন এ দেশের মানুষের মধ্যে বিবেকবোধ জাগ্রত হবে?

এজন্যই কি এ দেশের স্বাধীনতার জন্য লাখো শহীদ জীবন দিয়েছে, মা-বোন সম্ভ্রম হারিয়েছে?’ রোববার দুপুরে চট্টগ্রাম প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এসব প্রশ্ন তোলেন বিয়ের ২২ দিনের মাথায় দুর্ঘটনায় নিহত চট্টগ্রামের ব্যাংক কর্মকর্তা অনুপম চৌধুরীর স্ত্রী পাপিয়া চৌধুরী। দুর্ঘটনার পর পার্কে লুটপাটের শিকার হন তিনি।

গত ২৩ ফেব্রুয়ারি নগরীর আগ্রাবাদে কর্ণফুলী শিশুপার্কের কোস্টার রাইড থেকে ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হন অনুপম। পরদিন হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান তিনি।

রোববার সংবাদ সম্মেলনে সেদিনের দুর্ঘটনার বর্ণনা দিতে গিয়ে কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন সদ্য স্বামীহারা পাপিয়া চৌধুরী। এসময় পাপিয়া ও তার স্বজনদের আহাজারিতে সংবাদ সম্মেলনের পরিবেশ আবেগঘন হয়ে উঠে।

সংবাদ সম্মেলনে পাপিয়া জানান, অনুপম, পাপিয়া ও তাদের কয়েকজন আত্মীয় রোলার কোস্টারে ওঠার পর সিট বেল্ট বাঁধার আগেই সেটি যাত্রা শুরু করে। এতে তাদের সঙ্গে যাওয়া আট বছরের এক শিশু রাইড থেকে ছিটকে পড়েন। তাকে বাঁচাতে গিয়ে পাপিয়াও ছিটকে পড়ে যান। এতে তার হাত ভেঙ্গে যায় এবং তিনি মাটিতে লুটিয়ে পড়েন।

একই সময়ে ছিটকে পড়ে লোহার দণ্ডের সঙ্গে মাথায় আঘাত লেগে গুরুতর আহত হন অনুপম।

পাপিয়া জানান, তার স্বামীকে যখন কয়েকজন দর্শনার্থী আহত অবস্থায় ধরাধরি করে নিয়ে যাচ্ছিল তখন নিরাপত্তারক্ষীদের উপস্থিতিতে কয়েকজন লুটপাট শুরু করে দেয়। তারা পাপিয়ার মোবাইল সেট, নগদ আড়াই হাজার টাকা, দু’ভরি স্বর্ণালংকার, এমনকি ভেঙ্গে যাওয়া হাতের স্বর্ণ মোড়ানো শাঁখা পর্যন্ত নিয়ে যায়।

একথা বলেই কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন পাপিয়া চৌধুরী। তিনি বলেন, ‘এদেশের মানুষের মধ্য থেকে কি ন্যূনতম মানবতা, মানবিকতাও হারিয়ে গেছে? কেন পার্ক কর্তৃপক্ষ দ্রুত আমার স্বামীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করল না? কেন নিরাপত্তারক্ষীদের সামনে আমি লুটপাটের শিকার হলাম?’

পাপিয়া বলেন, ‘ঘটনার পর কর্ণফুলী পার্ক কর্তৃপক্ষ কোন ধরনের খোঁজ খবর রাখেনি। এমনকি অদ্যাবধি কোন সহানুভূতিও প্রদর্শন করেনি। আমরা কোন ক্ষতিপূরণ দাবি করি না। আমরা শুধু বিচার চাই।’

এদিকে এ ঘটনায় মামলা দায়ের করা হবে বলে সংবাদ সম্মেলনে জানান নিহতের বোন শম্পা চৌধুরী।

উল্লেখ্য, নিহত অনুপম চট্টগ্রামের হাটহাজারী উপজেলার ফটিকা গ্রামের জনৈক অমূল্য রতন চৌধুরীর ছেলে। নগরীর উত্তর নালাপাড়ায় তাদের বাসা।

সংবাদ সম্মেলনের শেষে পাপিয়াসহ নিহতের স্বজনরা বিচারের দাবিতে প্রেসক্লাবের সামনে মানববন্ধন করেন।

No comments

Powered by Blogger.