আদর্শ শাসকের গুণাবলি by হাবীবুর রহমান খান

ওমর বিন আবদুল আজিজ (রহ.) যখন খলিফা নিযুক্ত হলেন তখন তিনি পুণ্যবান সাধক হাসান বসরীর (রহ.) কাছে চিঠির মাধ্যমে ন্যায়পরায়ণ শাসকের গুণাবলি জানতে চেয়েছিলেন। উত্তরে হাসান বসরী লিখেছিলেন, ন্যায়পরায়ণ শাসক মূলত ওই রাখালের মতো, যে তার পশুপালের ওপর সর্বোচ্চ সহানুভূতিশীল ও মহানুভবের অধিকারী হয়।


তাদের জন্য সবুজ-শ্যামল বিচরণভূমি অনুসন্ধান করে। ক্ষতিকারক গাছপালা থেকে ফিরিয়ে রাখে। হিংস্র জন্তুর আক্রমণ থেকে বাঁচায় এবং অত্যধিক ঠাণ্ডা ও উষ্ণতা থেকে হেফাজত করে।
হাসান বসরী বলেন, হে আমীরুল মুমিনীন, ন্যায়পরায়ণ শাসক স্নেহশীল পিতার মতো, যে পিতা নিজের কলিজার টুকরো সন্তান-সন্ততির সর্ববিষয়ে খেয়াল রাখেন। সন্তান ছোট হলে সবসময় তার জন্য দৌড়ঝাঁপ করতে থাকেন, আর বড় হলে শিক্ষা-দীক্ষার সুব্যবস্থা করেন। সারাজীবন মাথা-পায়ের ঘাম একাকার করে অর্থ উপার্জন করে মৃত্যুর সময় সবকিছু প্রিয় সন্তান-সন্ততির জন্য রেখে পরপারে পাড়ি জমান।
তিনি বলেন, সুশাসক মমতাময়ী মায়ের মতো, যে মা নেক কষ্ট স্বীকার করে বড় যন্ত্রণা সহ্য করে সন্তান গর্ভে ধারণ করেন, এরপর জীবনবাজি রেখে সন্তান প্রসব করেন। দুই-আড়াই বছর পর্যন্ত কত ত্যাগ-তিতিক্ষা, কষ্ট ও বেদনা সহ্য করে দুধপান করানোসহ সামগ্রিক বিষয়ে কষ্ট স্বীকার করে প্রতিপালন করেন। সন্তান সজাগ ও চেতনার পূর্বেই মা সজাগ হয়ে যান। কখনও তিনি দুধপান করান আবার কখনও অবারিত করেন। সন্তানের প্রশান্তিতে মা শান্তি পান। সন্তানের সুস্থতা ও নিরাপত্তায় মা স্থিরতা বোধ করেন। আর তার অসুস্থতায় মা পেরেশান ও দুশ্চিন্তাগ্রস্ত হয়ে পড়েন।
তিনি আরও বলেন, আদর্শ শাসক এতিমদের হেফাজতকারী, নিঃস্বদের অর্থের ব্যবস্থাকারী ও তাদের রেখে যাওয়া সন্তান-সন্ততির প্রতিপালনকারী হয়ে থাকে। ততদিন পর্যন্ত যতদিন না তারা নিজেদের রুটি-রোজগারের ব্যবস্থা করতে পারে। ন্যায়পরায়ণ, সুবিচার শাসক তো পাঁজরের খাঁচায় কলবের মতো। কেননা কলব শুদ্ধ হয়ে গেলে সর্বাঙ্গ শুদ্ধ হয়ে যাবে, আর তা নষ্ট হয়ে গেলে সর্বাঙ্গ নষ্ট হয়ে যায়।
অতএব হে আমীরুল মুমিনীন, আল্লাহ আপনাকে যে জিনিসের মালিক বানিয়েছেন, সে ব্যাপারে আপনি ওই গোলামের মতো হবেন না; মালিক যার বিশ্বস্ততার ওপর আস্থা রেখে নিজের সহায়-সম্পত্তি সংরক্ষণের দায়িত্ব দিলেন। কিন্তু সে গোলাম মালিকের সমস্ত মাল-সম্পদ এলোমেলো বিক্ষিপ্ত করে নষ্ট করে দিল, পরিবার-পরিজনকে কষ্ট ও ভর্ৎসনা দিয়ে তাড়িয়ে দিল। ফলে তারা ক্ষুধা ও দারিদ্র্যের স্বীকার হলো।
হে আমীরুল মুমিনীন, আমার শেষ কথা ভালো করে শোনো। ক্ষমতা কখনও কারও জন্য চিরস্থায়ী নয়। আজ তোমার হাতে তো কাল অন্যের হাতে। অতএব, জনগণের সঙ্গে আচার-ব্যবহার, রীতিনীতিতে সাম্যের মানদণ্ড অটুট রাখবে। তোমার কারণে যেন কখন কেউ কষ্ট না পায়। জনগণের সঙ্গে অসংযত ব্যবহার, রীতিনীতি পরিত্যাগ করবে, দুর্বলদের ওপর জবরদস্তি করবে না, নিজেকে শাসনকর্তা মনে করবে না। কেননা শাসনকর্তা কারও নৈকট্য, পরামর্শ ও অঙ্গীকারের প্রতি যত্নশীল হয় না। যদি তুমি দুর্বলদের প্রতি অবিচার করে অত্যাচারীদের মুক্ত করে দাও, তবে স্মরণ রেখ তার গোনাহ তোমার আমলনামায় পেঁৗছবে। আর তোমাকে যেন ওই লোক ধোঁকায় না ফেলে যে, এমন জিনিসে স্বস্তি পায় যাতে স্পষ্টত তোমাদের ক্ষতি হয়। আর তোমাদের পরকালের জিন্দেগিকে পদদলিত করে পার্থিব জীবনে স্বাদ আস্বাদন করতে চায়। শুধু নিজের ক্ষমতা ও দৈহিক শক্তির প্রতি লক্ষ্য না করে পুরো জাতির সামর্থ্য ও শক্তির প্রতি দৃষ্টিপাত করবে।
kmhabibur1985@yahoo.com

No comments

Powered by Blogger.