সড়ক-মহাসড়ক নিরাপদ হোক-মন্ত্রীদের বাগাড়ম্বর

রোম যখন পুড়ছিল, তখন সম্রাট নিরো নাকি বাঁশি বাজাচ্ছিলেন। আমাদের মন্ত্রীরা বাঁশি না বাজালেও মানুষের দুর্ভোগ-দুর্দশার মধ্যে বিতর্কে নেমেছেন। দীর্ঘদিন মেরামতের অভাবে সারা দেশের সড়ক-মহাসড়কগুলোর বড়ই দুরবস্থা।
ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কে অনির্দিষ্টকালের জন্য বাস চলাচল বন্ধ করে দিয়েছেন পরিবহন মালিকেরা। আরও কয়েকটি অঞ্চলের সঙ্গে ঢাকার যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। স্বাধীনতার চার দশকে কখনোই এই মহাসড়ক এভাবে বন্ধ থাকেনি। ঈদের আগে বন্ধ সড়ক-মহাসড়ক চালু করার ব্যবস্থা না করে মন্ত্রীরা পরস্পরকে দোষারোপ করে চলেছেন। যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন সড়ক-মহাসড়কের দুরবস্থার জন্য বিএনপি ও তত্ত্বাবধায়ক সরকারের পাশাপাশি অর্থ মন্ত্রণালয়কেও দায়ী করে বলেছেন, অর্থ মন্ত্রণালয় প্রয়োজনীয় অর্থ ছাড় না করায় সড়কগুলো মেরামত করা যায়নি। কয়েক মাস আগে জাতীয় সংসদে এ নিয়ে বিতর্কের সময়ও তিনি একই কথা বলেছিলেন। কিন্তু গতকাল সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত পাল্টা অভিযোগ করে বলেছেন, যোগাযোগমন্ত্রী ঠিক বলেননি।
মন্ত্রীদের এই পারস্পরিক দোষারোপ কি মানুষের দুর্ভোগ কমাতে পারবে? আমরা কার কথায় আস্থা রাখব? অর্থ মন্ত্রণালয় অর্থ ছাড় না করে থাকলে যোগাযোগমন্ত্রী সে কথাটি ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক বন্ধ হওয়ার আগে কেন বলেননি? কেন তিনি প্রধানমন্ত্রীর সহায়তা চাননি? সড়ক বন্ধ হওয়ার পর প্রধানমন্ত্রীকেই জরুরি বৈঠক করতে হলো! অনিয়মের কারণে বিশ্বব্যাংক ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়ক মেরামতের অর্থ ছাড় করেনি। এর দায়ও কি যোগাযোগমন্ত্রী অন্যের ওপর চাপাতে চাইছেন? চীনা কোম্পানির কাগজপত্র জালিয়াতি করে যে প্রতিষ্ঠানটি কাজ বাগিয়ে নিয়েছিল, সেই প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে কী ব্যবস্থা নিয়েছেন তিনি? এখনো তাদের কার্যাদেশ বাতিল করা হলো না কেন? মন্ত্রণালয়ের কাজে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহি থাকলে অর্থ ছাড়ে সমস্যা হওয়ার কথা নয়।
আসলে দেশের বিদ্যমান সড়ক-মহাসড়ক নিয়ে যোগাযোগমন্ত্রীর কোনো মাথাব্যথা নেই। তিনি ব্যস্ত আছেন উড়ালসড়ক, পাতালসড়ক, পদ্মা সেতুর মতো বড় বড় প্রকল্প নিয়ে। সেগুলোরও প্রয়োজন আছে, কিন্তু তাই বলে বিদ্যমান সড়কগুলো মেরামত না করার যুক্তি কী?
মানুষের দুর্ভোগ নিয়ে রাজনৈতিক বিতর্ক যেমন কাম্য নয়, তেমনি প্রত্যাশিত নয় মন্ত্রীদের বাগাড়ম্বরও। সরকার তথা মন্ত্রীরা ঠিকমতো দায়িত্ব পালন করছেন কি না, সেসব নিয়ে জাতীয় সংসদে আলোচনা হবে, দলীয় ফোরামেও আলোচনা হতে পারে। কিন্তু মন্ত্রীরা এত কথা না বলে কাজ করে দেখালেই ভালো। সংসদীয় গণতন্ত্রে মন্ত্রিসভা যৌথভাবে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ।
গতকালের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী বন্ধ হয়ে যাওয়া সড়কগুলো ঈদের আগে সচল করার নির্দেশ দিয়েছেন। আমরা আশা করব, সেই নির্দেশ যথাযথভাবে পালিত হবে। একই সঙ্গে গত আড়াই বছরে সড়ক খাতে যেসব অনিয়ম, অব্যবস্থা ও দুর্নীতির অভিযোগ এসেছে, সেগুলো তদন্ত করতে বিশেষজ্ঞদের নিয়ে একটি উচ্চপর্যায়ের কমিটি গঠন করা হোক। নিরাপদ ও টেকসই সড়ক যোগাযোগ গড়ে তুলতে এর বিকল্প নেই।

No comments

Powered by Blogger.