সবার অংশগ্রহণে সুষ্ঠু নির্বাচন হোক-ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন

ঢাকা সিটি করপোরেশন উত্তর ও দক্ষিণে ভাগ করার সময় সরকারের পক্ষ থেকে জোরালো ভাষায় বলা হয়েছিল, ৯০ দিনের মধ্যে দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন করা হবে এবং সে অনুযায়ী যথারীতি আইনও সংশোধন করা হয়েছিল। কিন্তু বাস্তবে সেই নির্বাচন করা যায়নি এবং এখনো সরকারের মনোনীত প্রশাসকেরাই সিটি করপোরেশন চালাচ্ছেন।


গত মঙ্গলবার সিটি করপোরেশন আইন আবার সংশোধন করে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন ৯০ দিনের বাধ্যবাধকতা তুলে নিয়ে ১৮০ দিনে পুনর্বহাল করা হয়েছে। মে মাসের শেষ সপ্তাহে নির্বাচন করার প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে বলে বৃহস্পতিবার নির্বাচন কমিশন জানিয়েছে। সংবিধান অনুযায়ী সব স্থানীয় সরকার সংস্থা নির্বাচিত প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত হওয়ার কথা। কিন্তু দেশের বৃহত্তম স্থানীয় সরকার সংস্থাটির মেয়াদ ২০০৭ সালে শেষ হলেও নির্বাচন হয়নি। উপরন্তু সরকার সিটি করপোরেশন ভাগের নামে নির্বাচিত প্রতিনিধিকে বাদ দিয়ে দুই মনোনীত প্রশাসক বসিয়েছে।
দ্বিতীয়বারের মতো সিটি করপোরেশন আইন সংশোধন করায় ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ব্যাপারে সরকার আগ্রহী বলে মনে হচ্ছে। কিন্তু নির্বাচনটি কীভাবে হবে? স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচন রাজনৈতিকভাবে না হলেও এতে রাজনৈতিক দলগুলোর সক্রিয়তা অস্বীকার করা যায় না। যাঁরা প্রার্থী হন, তাঁরাও রাজনৈতিক দলের নেতা-কর্মী। নির্বাচনের দিনক্ষণ ঠিক হওয়ার আগেই মহানগরের সড়কগুলো বিভিন্ন দলের নেতা তথা সম্ভাব্য প্রার্থীদের পোস্টার ও প্রচারপত্রে ছেয়ে গেছে।
বিএনপিসহ বিরোধী দলগুলো জাতীয় নির্বাচন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের অধীনে করার জন্য আন্দোলন করছে। সেই আন্দোলনের ফল যা-ই হোক, এর সঙ্গে স্থানীয় সরকার সংস্থার নির্বাচনকে মেলানো যাবে না। বিএনপির একজন শীর্ষস্থানীয় নেতা সম্প্রতি এক সভায় সিটি করপোরেশন নির্বাচনে তাঁর দলের অংশগ্রহণের ইঙ্গিত দিয়েছেন। এটিকে আমরা ইতিবাচক বলে মনে করি।
যেকোনো নির্বাচনের মতো ঢাকার দুই সিটি করপোরেশন নির্বাচন অনুষ্ঠানের মূল দায়িত্ব নির্বাচন কমিশনের। নির্বাচনটি যাতে সুষ্ঠু, অবাধ ও সবার কাছে গ্রহণযোগ্য হয়, সে ব্যাপারে তাদের সর্বাত্মক চেষ্টা চালাতে হবে। নতুন নির্বাচন কমিশনের অধীনে এটি প্রথম নির্বাচন বিধায় তাদের জন্য পরীক্ষাও বটে। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সব রাজনৈতিক দলের সঙ্গে আলোচনার যে প্রস্তাব দিয়েছেন, আমরা তাকে স্বাগত জানাই। সরকারের উচিত হবে না এমন কোনো পদক্ষেপ নেওয়া, যাতে নির্বাচন কমিশনের ভূমিকা প্রশ্নবিদ্ধ হয় (যেমন—নারায়ণগঞ্জ সিটি নির্বাচনে কমিশনের চাহিদা সত্ত্বেও সেনা মোতায়েন না করা)। আবার বিরোধী দলকেও চিরাচরিত ‘বর্জনের সংস্কৃতি’ থেকে বেরিয়ে আসতে হবে। কাজ না দেখেই নতুন নির্বাচন কমিশনকে নাকচ করা তাদের ঠিক হবে না।
আমরা চাই, সবার অংশগ্রহণে ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অবাধ, সুষ্ঠু ও প্রতিদ্বন্দ্বিতাপূর্ণ হোক। এই নির্বাচনে ভোটাররা তাঁদের পছন্দসই প্রার্থী বেছে নিতে পারলে জাতীয় রাজনীতিতেও তার ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আশা করা যায়।

No comments

Powered by Blogger.