সেনাবাহিনী-শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনাই ছিল বড় চ্যালেঞ্জ by আমীন আহম্মদ চৌধুরী

১৯৭৫ সালের ১৫ আগস্টে বঙ্গবন্ধু হত্যার ঘটনাটি ছিল নির্মম ও নৃশংস। ঘটনার পূর্বাপর বিশ্লেষণ করলে আমরা দেখতে পাই, এটি সেনা অভ্যুত্থান ছিল না, ছিল কতিপয় বিপথগামী সেনাসদস্যের ক্ষমতা দখলের অপপ্রয়াস। অনেকে বলে থাকেন, একদলীয় বাকশাল প্রতিষ্ঠার কারণেই বঙ্গবন্ধুকে জীবন দিতে হয়েছে,


পনেরোই আগস্টের প্রাণঘাতী ঘটনা ঘটেছে। কিন্তু আমার বিবেচনায় বাকশাল ছিল একটি রাজনৈতিক দর্শন। বঙ্গবন্ধু দেশের গরিব-দুঃখী মানুষের ভাগ্যোন্নয়নে এই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন; এর মাধ্যমে ভিন্নমত প্রকাশের পথ বন্ধ হয়েছিল সত্য; তাতে করে লোকের মনে বিভ্রান্তি সৃষ্টি হওয়া ছিল স্বাভাবিক। কিন্তু তিনি ক্ষমতা কুক্ষিগত করতে চেয়েছিলেন—সে কথা বলা যাবে না। তখনকার রাজনৈতিক বাস্তবতায় হয়তো তিনি ভেবেছিলেন, গণতান্ত্রিক শাসন কিছুদিন স্থগিত রেখে হলেও দেশ ও জনগণকে বাঁচাতে হবে। দুঃখী মানুষের মুখে হাসি ফোটাতে হবে। আমাদের স্বাধীতার মূল লক্ষ্যও ছিল তাই।
তাই বলব, একদলীয় শাসনের সঙ্গে ১৫ আগস্টের ঘটনার সম্পর্ক নেই বললেই চলে। তবে অস্বীকার করার উপায় নেই, স্বাধীনতার পর রক্ষীবাহিনী গঠন নিয়ে সরকারের সঙ্গে সেনাবাহিনীর কিছুটা দূরত্ব ও ভুল বোঝাবুঝির সৃষ্টি হয়েছিল। স্বাধীনতার পর মুক্তিযুদ্ধে সরাসরি অংশগ্রহণকারী কর্মকর্তা ও জওয়ানদের নিয়েই সশস্ত্র বাহিনীর নবযাত্রা শুরু হয়, যার সূচনা হয়েছিল একাত্তরের যুদ্ধের ময়দানে। বিজয়ী মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে গঠিত সশস্ত্র বাহিনীকে যুদ্ধবিধ্বস্ত দেশে স্বভাবতই অনেক প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়েছে। বঙ্গবন্ধুর দিকে তাকিয়ে সবাই সেই প্রতিকূলতা মোকাবিলাও করেছেন। মুক্তিযুদ্ধের পর বঙ্গবন্ধুর সবচেয়ে বড় সাফল্য ছিল তিন মাসের মধ্যে ভারতীয় সেনাবাহিনীকে দেশে পাঠিয়ে দেওয়া। এটি রাজনৈতিক সমঝোতার মাধ্যমেই হয়েছে। বঙ্গবন্ধু ছাড়া অন্য কোনো নেতা এত অল্প সময়ে এমন দুরূহ কাজটি করতে পারতেন কি না সন্দেহ। তবে রক্ষীবাহিনী নিয়ে সেনাবাহিনীর মধ্যে অসন্তোষ ও ক্ষোভ সত্ত্বেও বঙ্গবন্ধুর প্রতি সেনা কমান্ডের পুরো আস্থা ছিল। তাঁর ডাকেই একাত্তরে আমরা যুদ্ধে গিয়েছি। তাঁর পর্বতপ্রমাণ ব্যক্তিত্ব এবং পাকিস্তানি শাসকদের বিরুদ্ধে লড়াকু মনোভাব আমাদের অনুপ্রাণিত করেছে। একাত্তরের মার্চে জ্যেষ্ঠতম বাঙালি সেনা কর্মকর্তা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল মাহমুদুর রহমান মজুমদারের বিভিন্ন বার্তা তাঁর কাছে পৌঁছে দিয়েছি। সরাসরি নয়, জেনারেল এম এ জি ওসমানীর মাধ্যমে। তখন আমরা তরুণ ছিলাম। আমরা ভাবতাম, বঙ্গবন্ধু এখনই কেন একতরফা স্বাধীনতা ঘোষণা করছেন না। এখন বুঝতে পারছি, তিনি সঠিক সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন। সরাসরি স্বাধীনতা ঘোষণা করলে তার ফল আমাদের পক্ষে নাও যেতে পারত। আলোচনা ব্যর্থ না হওয়া পর্যন্ত আমাদের অপেক্ষা করা ছাড়া উপায় ছিল না।
আবার ফিরে আসি ১৫ আগস্টের ঘটনায়। স্বাধীন বাংলাদেশের সশস্ত্র বাহিনীর যাত্রা শুরু হয়েছিল মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তা ও জওয়ানদের নিয়ে। কিন্তু ১৯৭৪ সালে পাকিস্তানে আটক সেনারা দেশে ফিরে আসেন। তাঁদের সংখ্যা ছিল ২৮ হাজারেরও বেশি। তখনই সেনাবাহিনীতে একটি ভারসাম্যহীন অবস্থা দেখা দেয়। কেননা তাঁদের মধ্যে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তার সংখ্যা অনেক বেশি। আবার মুক্তিযোদ্ধা কর্মকর্তাদের দুই বছর জ্যেষ্ঠতা দেওয়ায় তাঁদের মধ্যেও একধরনের অসন্তোষ দেখা দেয়। সেনাবাহিনীতে জ্যেষ্ঠ কর্মকর্তারা কখনোই জুনিয়রের কমান্ড মানবেন না। প্রয়োজনে চাকরি ছেড়ে দেবেন। কিন্তু পাকিস্তান-প্রত্যাগত সেনারা তখনো সেই অবস্থানে নেই। পাকিস্তানফেরতদের সসম্মানে আত্মীকরণ অত্যন্ত দুরূহ কাজ ছিল। তাঁদের মধ্যে একটা নিস্তেজ ভাব বিরাজ করছিল।
দেশের অর্থনীতিও ছিল অত্যন্ত নাজুক। এসব অসন্তোষের সুযোগই কাজে লাগিয়েছেন ১৫ আগস্টের অভ্যুত্থানকারীরা। এখানে একটা কথা বলা দরকার, ১৫ আগস্টের ঘটনা যাঁরা ঘটিয়েছেন, বহুলালোচিত ছয় মেজর; তাঁদের মধ্যে মাত্র দুজন ছিলেন সেনাবাহিনীতে কর্মরত—সৈয়দ ফারুক রহমান ও খন্দকার আবদুর রশীদ। বাকিরা কিন্তু সেনাবাহিনী থেকে অবসরপ্রাপ্ত ছিলেন। সেনাবাহিনীর আর কোনো স্তরের কর্মকর্তা ও জওয়ান এই ঘটনা সম্পর্কে কিছুই জানতেন না। সেদিন দেশবাসীর মতো সেনাবাহিনীও হকচকিত হয়ে পড়েছিল এবং কমান্ড চ্যানেল বহমান রাখতে কালক্ষেপণ হয়েছিল।
সেনাবাহিনীতে রাত্রিকালীন মহড়ার সুযোগে যখন তাঁর সেনাদের নিয়ে অপারেশন শুরু করেছেন, তখন সামরিক গোয়েন্দারা প্রথম ঘটনাটি জানান সেনাপ্রধান সফিউল্লাহকে। তিনি প্রথমে বঙ্গবন্ধুকে ফোন করে পাননি, যখন পেলেন তখন ফারুকের অপারেশন শুরু হয়ে গেছে। এরপর তিনি যখন সিনিয়র সেনা কর্মকর্তাদের সঙ্গে বসলেন, তখন তো অভিযান প্রায় শেষ। আর কিছুই করার ছিল না। অতএব বঙ্গবন্ধুকে হত্যার খবর শুনে সেনা-নেতৃত্ব চুপচাপ বসে ছিল, এ কথা ঠিক নয়। তবে ঘটনা সঠিকভাবে বুঝে উঠতে কালক্ষেপণ করা হয়েছে। অবশ্য এই হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কোনো কর্মকর্তা জড়িত ছিলেন না।
১৫ আগস্টের সেনাবাহিনীতে সবচেয়ে বড় যে অভিঘাত সৃষ্টি হলো, চেইন অব কমান্ড ভঙ্গ। একটি সেনাবাহিনীর প্রধান সম্পদ হলো অভ্যন্তরীণ শৃঙ্খলা বা চেইন অব কমান্ড। ১৫ আগস্টে কয়েকজন জুনিয়র কর্মকর্তা শৃঙ্খলা ভঙ্গ করে কর্তৃত্ব নেন। সেনাবাহিনীর ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা ছিলেন সেনানিবাসে আর অভ্যুত্থানকারী ছয় মেজর বঙ্গভবনে বসে সবকিছু নিয়ন্ত্রণ করছিলেন। সিনিয়র সেনা কর্মকর্তারা সেটি মানতে পারেননি। তাঁরা চুপচাপ বসেও ছিলেন না। ঘটনার পর থেকেই কিন্তু সেনাবাহিনীতে চেইন অব কমান্ড ফিরিয়ে আনার চেষ্টা চলতে থাকে। কর্নেল সাফায়েত জামিল ১৫ আগস্ট সকাল থেকেই শৃঙ্খলা ভঙ্গকারীদের চেইন অব কমান্ডের আওতায় এনে শাস্তির ব্যবস্থা করতে বদ্ধপরিকর ছিলেন। ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তারা একাধিকবার বৈঠকে বসেন। নতুন সেনাপ্রধান জিয়াউর রহমানের কাছে তাঁরা ছয় মেজরকে নিষ্ক্রিয় করার তাগিদ দেন। এক বৈঠকে শাফায়েত জামিল সেনাপ্রধানকে উদ্দেশ্য করে প্রশ্ন রাখেন, সেনাবাহিনী কার কমান্ডে চলছে? অভ্যুত্থানকারীদের, না সেনাপ্রধানের? জিয়াউর রহমান সেই প্রশ্ন এড়িয়ে গেলেন। তখন তাঁরা মনে করলেন, সেনাপ্রধান হয়তো এই জুনিয়র কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেবেন না। তৎকালীন চিফ অব জেনারেল স্টাফ খালেদ মোশাররফও তাঁদের সে রকমই ধারণা দিয়েছিলেন। সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে কয়েক দফা বৈঠক হয়।
৩ নভেম্বর খালেদ মোশাররফের নেতৃত্বে যে অভ্যুত্থান হয়েছিল, সেটি ছিল সেনাবাহিনীতে চেইন অব কমান্ড প্রতিষ্ঠার প্রয়াস। কিন্তু তাঁরা চেইন অব কমান্ড প্রতিষ্ঠার নামে নিজেরাই শৃঙ্খলা ভাঙলেন। সেনাপ্রধানকে গৃহবন্দী করলেন। তবে তার চেয়েও বড় ব্যর্থতা ছিল, সেনাবাহিনীতে কর্তৃত্ব প্রতিষ্ঠা করতে না পারা। তাঁরা খন্দকার মোশতাক এবং ৬ মেজরের সঙ্গে দর-কষাকষিতে সময়ক্ষেপণ করলেন। ৩ থেকে ৬ নভেম্বর পর্যন্ত দেশে কোনো সরকার ছিল না। এর মধ্যে যে একটি ঘটনা খালেদ মোশাররফের বিরুদ্ধে ব্যবহার করা হয়, সেটি হলো ৪ নভেম্বরে শোকমিছিলে তাঁর মা ও ভাইয়ের অংশগ্রহণ। খালেদ মোশাররফ কখনোই ভারতপন্থী ছিলেন না। অথচ ভারতপন্থী অপবাদ নিয়েই তাঁকে এবং তাঁর সহযোগীদের মরতে হয়েছে। ১৫ আগস্টের পর থেকে জাসদ-সমর্থিত গণবাহিনী সেনানিবাসে রাজনৈতিক বক্তব্যসংবলিত লিফলেট ছড়িয়েছিল। তথাকথিত বিপ্লবের প্রথম সুযোগেই তারা গগনবিদারী স্লোগান দিল ‘সিপাই সিপাই ভাই ভাই, সুবেদারের ওপর অফিসার নাই’; ৬ নভেম্বর রাতে জওয়ানরা অস্ত্র নিয়ে ব্যারাকের বাইরে এসে ১১ জন কর্মকর্তা ও একজন গৃহবধূকে হত্যা করে। এরপর ঢাকার বাইরে তাঁদের হাতে আরও ১৪-১৫ জন কর্মকর্তা নিহত হন। তাঁরা জিয়াউর রহমানকে দলে টানতে চেয়েছিলেন এ কারণে যে তিনি সেনাবাহিনীতে জনপ্রিয় ছিলেন। দ্বিতীয়ত, অন্তরীণ হওয়ার সময় তিন কর্নেল আবু তাহেরের কাছে সাহায্য চেয়েছিলেন। কিন্তু জিয়া এবং অন্য সেনা কর্মকর্তারা যখন গণবাহিনীর উদ্দেশ্য বুঝতে পারলেন, তখনই তাঁরা এর বিপক্ষে অবস্থান নিলেন। সেনাপ্রধান হিসেবে জিয়া জওয়ানদের অস্ত্র জমা দিয়ে ব্যারাকে ফিরে যাওয়ার নির্দেশ দিলেন। কয়েক ঘণ্টার মধ্যে ঢাকা সেনানিবাসে শৃঙ্খলা ফিরে আসে, যদিও অন্যান্য সেনানিবাসে স্বাভাবিক পরিস্থিতি ফিরে আসতে সময় লেগেছিল।
১৫ আগস্ট, ৩ নভেম্বর ও ৭ নভেম্বরের ঘটনার পর সেনাবাহিনীর নেতৃত্বের সামনে বড় চালেঞ্জ হয়ে দাঁড়ায় এর শৃঙ্খলা ফিরিয়ে আনা। তৎকালীন সেনা কমান্ডে যাঁরা ছিলেন তাঁদের সবার সম্মিলিত চেষ্টায় সেটি সম্ভব হয়েছিল। কিন্তু সেই কাজটি মোটেই সহজ ছিল না। ১৯৭৭ সালে বিমানবাহিনীতে যে বড় ধরনের বিপর্যয় ঘটল তার পেছনে ছিল বিমানবাহিনীর ১১ জন বৈমানিককে হত্যার ঘটনা। একটি দেশের বিমানবাহিনীর চৌকস ও দক্ষ পাইলট হত্যা বিশাল ক্ষতি। এই ক্ষতি কাটিয়ে উঠতে অনেক সময় লেগেছে।
পনেরোই আগস্ট-পরবর্তী ঘটনাপ্রবাহে সেনাবাহিনীর মধ্যে বিভিন্ন ধারা-উপধারা সৃষ্টি হলেও জ্যেষ্ঠ সেনা কর্মকর্তারা চেইন অব কমান্ড প্রতিষ্ঠায় অনড় ছিলেন। ১৯৭৭ সালে বিমানবাহিনীতে অঘটন ঘটার পর ব্রিগেডিয়ার আমীনূল হকের নেতৃত্বে এ ধরনের অঘটন রোধ করা কল্পে খুব শক্ত হাতে তা দমন করা হয় এবং পরবর্তী সময়ে শাস্তি প্রদান করা হয়। এর ফলে সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলা ফিরে আসে। তবে অফিসারদের মধ্যে জ্যেষ্ঠতা নিয়ে জটিলতা থেকে যায়। মেজর জেনারেল আবুল মঞ্জুর ও মীর শওকত আলীর মধ্যে বিরোধের কারণে জেনারেল এরশাদের কপাল খুলে যায়। তিনি সেনাপ্রধান হয়ে এই বিভেদকে কাজে লাগান এবং মুক্তিযোদ্ধা অফিসারদের মধ্যে ভুল-বোঝাবুঝি সৃষ্টি করেন। ফলে ১৯৮১ সালে চট্টগ্রামে ব্যর্থ সেনা অভ্যুত্থানে জিয়া ও মঞ্জুরকে প্রাণ দিতে হলো। শতাধিক মুক্তিযোদ্ধা অফিসার চাকরি হারান। ১৩ জন অফিসারের ফাঁসি হলো; যদিও জিয়া হত্যার কোনো সুষ্ঠু তদন্ত আজও হয়নি।
মঞ্জুর হত্যার ফাইল কোথায় চাপা পড়ে আছে কেউই জানে না। এরপর জেনারেল এরশাদ পাকিস্তানি কায়দায় গণতান্ত্রিক সরকারকে সরিয়ে পুরোপুরি মার্শাল ল দিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে প্রায় নয় বছর রাজত্ব করেন।
নির্বাচিত সরকার আসার পর সশস্ত্র বাহিনীতে স্থিতিশীলতা বৃদ্ধি পেল। তবে ’৯৬ সালে প্রেসিডেন্ট ও সেনাপ্রধানের মধ্যে মতদ্বৈধতায় সেনাবাহিনীতে শৃঙ্খলার অবনতি ঘটে। জেনারেল নাসিম তাঁর অধীনস্থ অফিসারদের স্বার্থ সংরক্ষণে প্রচলিত আইনের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে প্রেসিডেন্টকে বিনীত অনুরোধ করেন, যার আইনগত বৈধতা আছে। প্রেসিডেন্টের ওপর চাপ সৃষ্টি করা আইনসম্মত ছিল না। ফলে সঠিক অবস্থানে থেকেও জেনারেল নাসিমকে শৃঙ্খলা ভঙ্গের কারণে চাকরি হারাতে হয়। তাঁর সঙ্গে ২৩ জন ব্রিগেডিয়ারসহ বিভিন্ন ব্যারাকের অফিসাররা চাকরি হারান।
২০০৯ সালের ২৫ ফেব্রুয়ারি পিলখানার হত্যাযজ্ঞ একটি মর্মান্তিক ও ভয়াবহ ঘটনা। এতে ৫৯ জন সেনা কর্মকর্তা নিহত হন। আমাদের মুক্তিযুদ্ধে ৫৭ জন সেনা অফিসার শহীদ হয়েছিলেন। এই ক্ষতি পুষিয়ে উঠতে অনেক সময় লেগেছে। সশস্ত্র বাহিনীর মনোবল চাঙা রাখার জন্য প্রয়োজন সর্বস্তরের সৈনিকদের প্রতি সুবিচার করা। সামরিক আইন অনুযায়ী বাহিনী-প্রধানেরা বাহিনী কমান্ড করবেন। তারা প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের অধীনে কর্মরত থাকবেন এবং সব কার্যক্রমের জন্য দায়ী থাকবেন। সামরিক আইন অনুযায়ী বাহিনীর অপারেশন ও দৈনন্দিন কার্যক্রম বাহিনী-প্রধানেরা করবেন। বাজেট, উন্নয়ন, সেনানিবাস পরিকল্পনা ও ভূমি, বাহিনীর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য ইত্যাদি বিষয় প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়েরই আওতাধীন।
অ্যাডহক ভিত্তিতে সশস্ত্র বাহিনী কমান্ড করা অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ। ভারত ব্রিটিশ আমলের আইন অক্ষরে অক্ষরে পালন করছে, ফলে তার বাহিনী-প্রধান জানেন যে প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় তাঁদের মন্ত্রণালয়, যার কাছে তাঁরা সকল কার্যক্রমের জন্য দায়ী থাকেন। আমরা এখন পর্যন্ত এসব স্পর্শকাতর বিষয়ে নির্লিপ্ত, যাতে করে যে যখন চেয়ারে বসবেন তাঁর মতো করেই ঘর সাজাবেন। সেটা যে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ—এই বোধোদয় যত তাড়াতাড়ি আমাদের মধ্যে হবে ততই মঙ্গল বয়ে আনবে। আমরা আশাবাদী।
আমীন আহম্মদ চৌধুরী: অবসরপ্রাপ্ত সেনা কর্মকর্তা ও সাবেক রাষ্ট্রদূত।

No comments

Powered by Blogger.