এনজিওদের রেকর্ড অর্থপ্রাপ্তি-প্রকল্প বাছাই ও ব্যয়ে স্বচ্ছতা থাকুক

সদ্য সমাপ্ত ২০১০-১১ অর্থবছরে এনজিও ব্যুরোর মাধ্যমে বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাগুলো আগের বছরের চেয়ে এক হাজার কোটি টাকা বেশি দেশে এনেছে। এ খবরকে সুসংবাদ হিসেবে ধরে নেওয়া যেতে পারে। ওই বছর এনজিও হিসেবে পরিচিত সংস্থাগুলো বিদেশি অনুদান হিসেবে পেয়েছে ৪ হাজার ৬১২ কোটি টাকা, যাকে রেকর্ড হিসেবে অভিহিত করা


হয়েছে। বাংলাদেশের বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির আকার বিবেচনায় নিলে (চলতি অর্থবছরে প্রায় ৪৩ হাজার কোটি টাকা) এ অর্থের পরিমাণ কম নয় এবং এর যথাযথ ব্যয় হচ্ছে কি-না সে বিষয়টি স্পষ্ট হওয়া দরকার। এ ক্ষেত্রে অভিযোগের মাত্রা ব্যাপক, কিন্তু তা খতিয়ে দেখার কাজে তৎপরতা সামান্য বলেই প্রতীয়মান হয়। বাংলাদেশের স্বাধীনতা অর্জনের পরপরই কয়েকটি বেসরকারি সাহায্য সংস্থা ত্রাণ ও পুনর্বাসন কর্মকাণ্ডে সক্রিয়ভাবে যুক্ত হয়ে পড়ে। পরবর্তী সময়ে এনজিও হিসেবে পরিচিত হয়ে ওঠা উল্লেখযোগ্য সংখ্যক প্রতিষ্ঠান শিক্ষা ও স্বাস্থ্যসেবা খাতের বিভিন্ন কর্মকাণ্ডে নিজেদের যুক্ত করতে থাকে। দীর্ঘমেয়াদি আর্থ-সামাজিক প্রকল্পও কোনো কোনো সংস্থা গ্রহণ করে। কয়েকটি শীর্ষস্থানীয় এনজিও ব্যবসায়িক কর্মকাণ্ডেও জড়িয়ে পড়েছে। তবে তারা বিশেষভাবে আলোচনায় আসে ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচির প্রসারের মাধ্যমে। এ খাত কর্মসংস্থানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে প্রশংসা পাচ্ছে। এনজিওদের একটি অংশ বিদেশি বিভিন্ন সংস্থা সূত্রে অর্থ সাহায্য গ্রহণ করে, আবার অনেকগুলো দেশীয় অর্থে পরিচালিত হয়। বিদেশি অর্থ গ্রহণকারী সংস্থাগুলোর এনজিও ব্যুরোতে রেজিস্ট্রেশন বাধ্যতামূলক এবং কেবল তাদের অনুমোদন নিয়েই দেশে অর্থ এনে নির্দিষ্ট প্রকল্পে ব্যয় করার বিধান রয়েছে। কেউ কেউ ব্যাখ্যা দিচ্ছেন, গত অর্থবছরে সরকারের সঙ্গে এনজিওদের অংশীদারিত্ব বেড়েছে, কাজের পরিধি সম্প্রসারিত হয়েছে এবং এ কারণে বিদেশি সংস্থা সূত্রে বেশি অর্থ দেশে এসেছে। এনজিও ব্যুরো এ দাবির সত্যতা বিচার করে দেখতে পারে। আন্তর্জাতিক অঙ্গনে মানবতাবাদী বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান প্রায় চার দশক ধরে বাংলাদেশের হতদরিদ্র জনগণের কল্যাণে উদারভাবে সহায়তা দিয়ে আসছে। এ অর্থের সঠিক ব্যবহার হয় না বলে অনেকের ধারণা রয়েছে তা একেবারে অমূলক বলা যাবে না। অনেক এনজিওর মূল উদ্যোক্তা সংগঠনকে অনেকটা পারিবারিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করে ফেলেন এবং আয়-ব্যয়ে স্বচ্ছতা থাকে না_ এ ধরনের আরও অনেক শোনা যায়। এমনকি জঙ্গি তৎপরতায় সহায়তাদানের মতো গুরুতর অভিযোগও মাঝে মধ্যে উঠে থাকে। এনজিওগুলোর প্রকল্প নির্বাচনেও রয়েছে সমন্বয়ের অভাব। হতদরিদ্র জনগোষ্ঠীর হিতার্থে বিশ্ব সম্প্রদায়ের কাছে উদারভাবে সহায়তা প্রদানের জন্য হাত বাড়ানো হয়। কিন্তু এ কাজে কতটা সফলতা অর্জিত হচ্ছে, সেটাও বড় প্রশ্ন। এনজিও ব্যুরোর জানার বাইরেও কিছু আর্থিক সহায়তা দেশে আসছে বলে ধারণা করা হয় এবং তার ব্যয়ের খাতও কখনও কখনও অজ্ঞাত থাকে। বিদেশের মানবতাবাদী প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তিরা বাংলাদেশের পাশে দাঁড়াতে আগের চেয়ে উৎসাহবোধ করছেন এবং এ জন্য বেশি অর্থ পাঠাচ্ছেন_ এটা সুসংবাদ। এ অর্থের পরিকল্পিত ব্যবহার হোক এবং যাদের মাধ্যমে অর্থ ব্যয় হয় তাদের প্রতিটি কাজে থাকুক স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা, এটাই প্রত্যাশিত।
 

No comments

Powered by Blogger.