অবৈধভাবে পাথর তোলায় উত্তরের তিন নদী মৃতপ্রায় by মোছাব্বের হোসেন

লালমনিরহাটের পাটগ্রাম উপজেলার ধরলা, সানিয়ারজান ও শিঙ্গিমারী নদী তিনটির প্রবাহ প্রায় বন্ধ। পাথর তোলার কারণে নদী তিনটির অনেক জায়গায় তৈরি হয়েছে বালুর স্তূপ। প্রায় ৭০ কিলোমিটার দীর্ঘ নদীপথের বহু জায়গায় ব্যবসায়ীরা অবৈধভাবে পাথর তুলছেন। এতে নদী তিনটি মৃতপ্রায়।


প্রশাসন বলছে, অবৈধ পাথর উত্তোলন বন্ধে চেষ্টা করা হচ্ছে।
এলাকাবাসী ও সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলেছেন, প্রতি মৌসুমে এ তিন নদীর প্রায় ৫০০ জায়গা থেকে পাথর তোলা হয়। আগে শাবল ও কোদাল দিয়ে জমি থেকে পাথর তোলা হতো। ২০০১ সাল থেকে ‘বোমা মেশিন’ দিয়ে পাথর তোলা হচ্ছে। ভূতাত্ত্বিক জরিপ অধিদপ্তরের পরিচালক রেশাদ মোহাম্মদ ইকরাম আলী প্রথম আলোকে বলেন, বোমা মেশিন দিয়ে মাটির গভীর থেকে কম সময়ে বেশি পরিমাণ বালু ও পাথর তোলা যায়।
কয়েকজন ব্যবসায়ী বলেন, প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতাদের সন্তুষ্ট করে তাঁরা পাথর তোলেন। যন্ত্রপ্রতি বছরে ৪০ হাজার টাকা দিলে পাথর তুলতে কেউ বাধা দেয় না।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) নির্বাহী পরিচালক সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, ২০১০ সালে উচ্চ আদালত জাফলং এলাকায় যন্ত্র দিয়ে পাথর তোলা নিষিদ্ধ করেছেন। তিনি মনে করেন, আদালতের ওই আদেশ সারা দেশের জন্য প্রযোজ্য।
পরিবহন খরচ তুলনামূলকভাবে কম হওয়ায় প্রভাবশালীরা এই তিন নদী থেকে পাথর তুলছেন। পাথরশ্রমিকেরা প্রথম আলোকে বলেন, যন্ত্র দিয়ে বালু ও পাথর তোলার পর পাথর আলাদা করে গাড়িতে অন্যত্র নেওয়া হয়, বালু পড়ে থাকে। শিঙ্গিমারী নদীর সেতুর পাশে বালুর বড় বড় স্তূপ হওয়ায় নদীর মূল ধারা ক্ষীণ হয়ে পড়েছে।
ইসলামপুর, আজিজপুর, বানিয়াডাঙ্গী, মাসানটারী, কাউয়ামারী, বাংলাবাড়ী, চাত্রারপাড় এলাকায় ধরলা ও শিঙ্গিমারী নদী থেকে প্রতিদিন পাথর তোলা হচ্ছে। অভিযানের কারণে পাথর তোলা বন্ধ থাকলেও পরে আবার শুরু হয়। এলাকার মানুষ অভিযোগ করেন, পাথর তোলায় নদীপারের আবাদি জমি নষ্ট হচ্ছে। কৃষকেরা আবাদি জমি পাথর ব্যবসায়ীদের কাছে ইজারা দিয়ে ঠকছেন। শিঙ্গিমারী নদীর পাশের কৃষক রাবিউল জানান, সাত বিঘা আবাদি জমি পাথর ব্যবসায়ীদের কাছে এক বছরের জন্য ইজারা দেন। সেই জমিতে এখন শুধু বালু। আবাদ করতে পারছেন না। তিনি পাথরশ্রমিক হিসেবে কাজ করছেন।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভূতত্ত্ব্ব ও খনিবিদ্যা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক সুব্রত কুমার সাহা বলেন, যন্ত্র দিয়ে পাথর তোলার কারণে দীর্ঘমেয়াদি ভূতাত্ত্বিক ক্ষতি হয়। অপরিকল্পিতভাবে পাথর তোলার কারণে বড় ধরনের ভূমিধস হতে পারে।
নদী থেকে পাথর তোলা প্রসঙ্গে লালমনিরহাটের জেলা প্রশাসক মোখলেসার রহমান প্রথম আলোকে বলেন, যন্ত্র দিয়ে পাথর তোলা অন্যায়, অবৈধ। এর ফলে গোটা এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। স্থানীয় ব্যক্তিরা সহায়তা না করলে এটি বন্ধ করা সম্ভব নয়। তিনি বলেন, অবৈধ পাথর উত্তোলন-কারীদের প্রতিহত করতে অভিযান চালানো হয়। এর মধ্যে ২২টি অভিযানে ১৮টি মামলাও হয়েছে।
পাটগ্রাম উপজেলা পরিষদের চেয়ারম্যান ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহুল আমিন বলেন, দলীয়ভাবে কারও জড়িত থাকার প্রমাণ পেলে তাঁর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
পরিবেশ অধিদপ্তর রাজশাহী বিভাগীয় কার্যালয়ের পরিচালক আফরিন আক্তার জানান, ‘আমাদের পরিদর্শক মাত্র দুজন। তাই ঠিকমতো খোঁজখবর নিতে পারি না। এ ছাড়া এ বিষয়ে কখনো লিখিত অভিযোগও পাইনি। অভিযোগ পেলে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

No comments

Powered by Blogger.