ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস!

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে একটি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে এসে ক্লাস করিয়েছেন এক অধ্যাপক। গতকাল শুক্রবার ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ২০৩ নম্বর কক্ষে তিনি ওই ক্লাস নেন। অভিযুক্ত শিক্ষক হচ্ছেন ব্যবস্থাপনা বিভাগের অধ্যাপক আলী আহসান। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে ইন্ডিপেনডেন্ট ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশের (আইইউবি) এমবিএ প্রথম সেমিস্টারের ক্লাস নিচ্ছিলেন।
অনুষদের শিক্ষকেরা বলেছেন, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শ্রেণীকক্ষে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নেওয়ার ঘটনা এই প্রথম।
অনুষদ সূত্র জানায়, দুপুর ১২টায় আলী আহসান আইইউবির ২৯ জন শিক্ষার্থীকে নিয়ে ক্লাস শুরু করেন। পৌনে একটার দিকে সমাবর্তনে অংশ নেওয়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কয়েকজন শিক্ষার্থী ওই শ্রেণীকক্ষে ঢুকতে গেলে তিনি ‘আউট, আউট, আউট...এখানে গুরুত্বপূর্ণ ক্লাস চলছে’ বলে তাঁদের বের করে দেন। সন্ধ্যা ছয়টা পর্যন্ত ক্লাস চলবে বলে কক্ষের ছিটকিনিও আটকে দেন।
ওই শিক্ষার্থীরা জানান, ছুটির দিনে দুপুরের প্রচণ্ড রোদে ক্লান্ত থাকায় কক্ষটি খোলা পেয়ে বিশ্রাম নিতে চেয়েছিলেন তাঁরা। কক্ষটিতে এ সময় এসি চলছিল এবং প্রজেক্টর ব্যবহার করা হচ্ছিল। সরকারি সম্পদ ব্যবহার করে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তাঁরা।
দুুপুর দেড়টায় ক্লাস শেষে বেরিয়ে আসেন আইইউবির শিক্ষার্থীরা। এ সময় তাঁদের কয়েকজনের সঙ্গে এই প্রতিবেদকের কথা হয়। জুয়েল পরিচয় দেওয়া এক শিক্ষার্থী জানান, আলী আহসান তাঁদের কোর্স শিক্ষক। বিজনেস রিসার্চ মেথডস (এমবিএ-৫০৪) কোর্সটির অতিরিক্ত ক্লাস করতে তাঁরা এসেছিলেন। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক কয়েকজন শিক্ষার্থী বলেন, অধ্যাপক আলী আহসান তাঁদেরকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে এসে ক্লাস করার বিষয়টি গোপন রাখতে বলেছেন।
গতকাল আইইউবির ওয়েবসাইটে দেখা যায়, আলী আহসান ওই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিবিএ, এমবিএ ও ইএমবিএ অনুষদের তালিকাভুক্ত অধ্যাপক।
এ বিষয়ে জানতে সন্ধ্যায় মুঠোফোনে যোগাযোগ করলে আলী আহসান বলেন, ‘ভাই, আমি রাস্তায় আছি, আপনি একটু পরে ফোন দেন।’ কিন্তু এরপর বারবার ফোন করলেও তিনি তা ধরেননি। একপর্যায়ে তাঁর মুঠোফোন বন্ধ পাওয়া যায়।
ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ডিন জামাল উদ্দীন প্রথম আলোকে বলেন, বিষয়টি তিনিও শুনেছেন। এই প্রথম এ রকম অনিয়মের ঘটনা ঘটল। ডিন জানান, বন্ধের দিন অনুষদের শ্রেণীকক্ষ ব্যবহার করতে হলে তাঁর অফিসের অনুমতি নিতে হয়। আলী আহসান এ রকম কোনো অনুমতি নেননি।
উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, শিক্ষকেরা অনুমতি নিয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে ক্লাস নিতে পারেন। কিন্তু নিয়ম অনুযায়ী ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে কোনোভাবেই বাইরের শিক্ষার্থীদের ক্লাস নিতে পারেন না। তদন্ত করে এ বিষয়ে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।

No comments

Powered by Blogger.