ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৬তম সমাবর্তন-জীবনের উজ্জ্বল স্মৃতি by মাঈন উদ্দীন ফিরোজ

ভর্তি পরীক্ষার ফল জেনেছিলাম ফোনে। খবরটা পেয়েই ক্যাম্পাসে ছুটে এসেছিলাম। সত্যি হয়ে যাওয়া কোনো বড় স্বপ্নকে প্রথম মুহূর্তে কাছ থেকে দেখার সে আনন্দ উপমা দিয়ে বোঝানোর মতো নয়। সেদিন বিকেলে-সন্ধ্যায় সারা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে মন্ত্রমুগ্ধের মতো হেঁটেছিলাম।


ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে কখনোই বই আর ক্লাসরুম দিয়ে বিচার করা সম্ভব নয়। জীবন যদি মানুষের শিক্ষার সবচেয়ে বড় পাঠশালা হয় তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় একটি সমৃদ্ধ জীবনের প্রতিরূপ। মিছিলে, স্লোগানে, সঙ্গীতে, লেখায় আর পথনাটকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা তাদের প্রতিবাদের ভাষাকে আত্মার ভেতর থেকে উন্মুক্ত করে দেয়। সমগ্র বিশ্ববিদ্যালয় মিলে যেন এক টুকরো সম্পূর্ণ বাংলাদেশ। এ দেশের প্রতিটি প্রান্তের, প্রতিটি ভাষার, প্রতিটি শ্রেণীর মানুষের এক বর্ণিল সম্মিলন। অনেক রকমের মানুষ, অনেক রকমের চিন্তা আর হাজার রকমের কাজ। বৈচিত্র্যের এ একাত্মতা থেকেই উপলব্ধি করেছি জীবনের সর্বজনীন রূপ। সর্বজনীন সৌন্দর্যের এ রূপ তিলে তিলে তৈরি করে আমাদের।
আমাদের তৈরি হওয়ার প্রাতিষ্ঠানিক আয়োজনের কথাও বলে শেষ করা কঠিন। সেবা আর সৃষ্টিশীলতার এক অনন্য প্রতিষ্ঠান ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র। বিতর্ক, আবৃত্তি, গান, সাংবাদিকতা, নাটক, চলচ্চিত্র_ কী নেই এখানে? কিছুই যেন অনর্থক নয়। এ ছাড়াও আছে আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট, কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার, অনেকগুলো কম্পিউটার ল্যাব, গবেষণা প্রতিষ্ঠান এবং শারীরিক শিক্ষা কেন্দ্র। আছে সুইমিং পুল, পুকুর, খেলার মাঠ। শিক্ষা, বিনোদন, আন্দোলন, রাজনীতি, সমাজকর্ম_ সবকিছুর স্পর্শে দিনে দিনে নিজেকে সমৃদ্ধ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের তরুণ শিক্ষার্থীরা। জীবনের এ আয়োজনের জবাব নেই।
টিএসসির বিকেলের আড্ডা, ভিসি চত্বরের মধ্যরাত, মল চত্বরের বাসের অপেক্ষা, কার্জন হলের ঘাসের গালিচা, লাইব্রেরির সামনে চায়ের তুফান, গোপালদার ঐতিহাসিক সংগ্রহ, মধুর ক্যান্টিনের মিষ্টি, ডাকসুর ক্যান্টিনের খিচুড়ি, ভাষা ইনস্টিটিউটের দেয়ালে বসে ঘণ্টার পর ঘণ্টা, হাকিম চত্বর, কলাভবনের সিঁড়ি, বটতলায় গ্রুপ স্টাডি, হলের ছাদে গিটার বাজিয়ে পরীক্ষা শেষের রাত উদযাপন এবং আরও টুকরো টুকরো গল্প স্মৃতির থলিতে জমা পড়ে গেছে। এ স্মৃতি কখনোই মলিন হওয়ার নয়।
ব্রেকিং নিউজে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দেখা আর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন হয়ে দেখার পার্থক্য অনেক। সুন্দর আর অসুন্দরের মিশ্রণ যে কোনো মানবিক জনপদের অনিবার্য বৈশিষ্ট্য। যারা এর একটি দিক দেখে আমাদের বিচার করেন তাদের বলতে ইচ্ছা হয়_ আমাদের সৌন্দর্য এমন অনেক অসুন্দরকে ঢেকে দিতে পারে। কিন্তু তারপরও আত্মবিচার করলে অনেক কিছু দুঃখ দেয়। সে বিচারের কাজ অন্যদিনের জন্য জমা থাকুক। আজ না হয় শুধু সুন্দরের কথাগুলোই বললাম। এ সুন্দর একদিন হয়তো আরও সুন্দরের জন্ম দিয়ে আমাদের দুঃখ ঘোচানোর সিম্ফনি হয়ে যাবে।

শান্তি ও সংঘর্ষ অধ্যয়ন বিভাগ
স্নাতক :প্রথম শ্রেণী (২০০৬-০৭)

No comments

Powered by Blogger.