বাধা দূর করুন, সক্ষমতা বাড়ান-বাংলাদেশ-ভারত বাণিজ্য চুক্তি

বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে যে বাণিজ্য চুক্তি নবায়ন হলো, তা দুই দেশের বাণিজ্যবৈষম্য কমাতে পারবে কি না, তা নির্ভর করবে শক্তিধর দেশটির উদারতা এবং দুর্বল দেশটির সক্ষমতা বাড়ানোর ওপর। নয়াদিল্লিতে দুই দেশের বাণিজ্যসচিব পর্যায়ে বৈঠকের পর গত বৃহস্পতিবার তিন বছরের জন্য এই চুক্তি নবায়ন করা হলো।


শুল্কবাধা দূর করার ফলে ভারতীয় বাজারে বাংলাদেশি পণ্য রপ্তানি কিছু পরিমাণ বাড়লেও বাংলাদেশে ভারতের পণ্যের আমদানি বেড়েছে আরও অনেক বেশি। বাংলাদেশ তার মোট আমদানির ১৩ দশমিক ২ শতাংশ ভারত থেকে আনলেও রপ্তানি করে মাত্র ২ শতাংশ। এই বৈষম্য কোনোভাবেই কাম্য নয়। উত্তর-পূর্ব ভারতে বাংলাদেশি পণ্যের ব্যাপক চাহিদা থাকা সত্ত্বেও কেন্দ্রীয় সরকারের নানা রকম বিধিনিষেধ ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে পণ্য রপ্তানি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ ছাড়া অশুল্ক বাধা ও আমলাতান্ত্রিক জটিলতা রয়েই গেছে।
এক পরিসংখ্যানমতে, ২০১০-১১ সালে বাংলাদেশ থেকে ভারতে ৫১২ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি এবং ভারত থেকে ৪৫৮৬ দশমিক ৮ মিলিয়ন ডলারের পণ্য আমদানি হয়েছে, ২০০৬-০৭ সালে যা ছিল যথাক্রমে ৪০৫ দশমিক ৭ মিলিয়ন ডলার এবং ১৯৯৮ দশমিক ৫৮ মিলিয়ন ডলার। কিন্তু যেসব পণ্যের ক্ষেত্রে ভারতের ওপর বাংলাদেশ অধিক নির্ভরশীল, সেসব পণ্যের রপ্তানি আকস্মিকভাবে বন্ধ করে দেওয়ায় আমাদের বেশ সমস্যায় পড়তে হয়। উদাহরণ হিসেবে চাল, পেঁয়াজ, তুলার কথা উল্লেখ করা যায়। বিশেষ করে, তুলার অভাবে বাংলাদেশের স্পিনিং-শিল্প বিপর্যয়ের সম্মুখীন। এ বিষয়ে বাংলাদেশের পক্ষে উদ্বেগ প্রকাশিত হলেও ভারতীয় বাণিজ্যসচিব এর প্রতিকার না বাতলিয়ে দেশটির তুলা বোর্ডের সঙ্গে আলোচনার পরামর্শ দিয়েছেন।
ভারতীয় ব্যবসায়ীদের সংরক্ষণবাদী মনোভাব পরিত্যাগ করতে হবে। আবার বাংলাদেশের ব্যবসায়ীদেরও মনে রাখতে হবে, কেবল বিশেষ সুবিধা দিয়ে বাণিজ্যে ভারসাম্য আনা যাবে না। উৎপাদিত পণ্যের সক্ষমতা বাড়াতে হবে। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে এর বিকল্প নেই।
দ্বিপক্ষীয় সমস্যা নিয়ে অনেক সময়ই আলোচনা ও সিদ্ধান্ত হয়, কিন্তু বাস্তবায়িত হয় না। এটা দুর্ভাগ্যজনক। বাংলাদেশি পণ্য ভারতের বাজারে প্রবেশে যেসব অশুল্ক বাধা ও বিধিনিষেধ আছে, সেগুলো অবিলম্বে তুলে নেওয়া উচিত। ভারত বৃহৎ অর্থনীতির দেশ। বাংলাদেশের তিন দিকেই তার ভৌগোলিক অবস্থান। সে ক্ষেত্রে পণ্যের আমদানি ও রপ্তানি বাড়লে দুই দেশই লাভবান হবে। ত্রিপুরা সীমান্তে দুই দেশের মধ্যে যে চারটি হাট খোলার সিদ্ধান্ত হয়েছে, তা ইতিবাচক ভূমিকা রাখবে বলে আশা করি।
একই সঙ্গে দুই দেশের মধ্যকার অন্যান্য সমস্যাও জরুরি ভিত্তিতে সমাধান করা জরুরি। সীমান্তবিরোধ নিষ্পত্তিতে যে চুক্তি ও প্রটোকল সই হয়েছে, তার দ্রুত বাস্তবায়নই আমরা দেখতে চাই। দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের মূল কথাই হলো, কেউ ক্ষতিগ্রস্ত না হয়ে উভয়ের লাভবান হওয়া। এ ক্ষেত্রে বৃহৎ প্রতিবেশী দেশটিকে এগিয়ে আসতে হবে উদার মনোভাব নিয়েই।

No comments

Powered by Blogger.