রাজনীতি-'৯৬ সালে আওয়ামী লীগই বস্তাভর্তি টাকা এনেছিল : ফখরুল

সরকারি সংবাদ সংস্থা বাসসকে দিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালানোর অভিযোগ করেছেন বিএনপির ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর। তিনি বলেন, 'ইকোনমিস্ট পত্রিকায় প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে, ১৯৯৬ সালে আওয়ামী লীগ বস্তা বস্তা টাকা এনে নির্বাচন করেছে।

এখন জনগণের দৃষ্টি অন্যত্র সরাতে সরকারি প্রতিষ্ঠান বাসসকে দিয়ে মিথ্যা প্রচারণা চালানো হচ্ছে। এসব করে লাভ হবে না। কারণ জনগণ ইতিমধ্যে আপনাদের দিক থেকে দৃষ্টি ফিরিয়ে নিয়েছে।' তিনি বলেন, 'এক নেত্রী কিছুদিন ধরে শুধু মিথ্যাচার করেই যাচ্ছেন। তিনি বারবার বলছেন, বিএনপি আইএসআইয়ের টাকা এনে নির্বাচন করেছে। আমি বলতে চাই, বিএনপি কখনো বিদেশি টাকায় নির্বাচন করেনি। আর করবেও না। আওয়ামী লীগই ১৯৯৬ সালে বস্তাভর্তি টাকা এনে নির্বাচন করেছে।'
গতকাল শনিবার দুপুরে জাতীয় প্রেসক্লাব মিলনায়তনে জাতীয়তাবাদী স্বেচ্ছাসেবক দল আয়োজিত এক স্মরণসভায় মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর এসব কথা বলেন। বিএনপির প্রয়াত মহাসচিব অ্যাডভোকেট খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের প্রথম মৃত্যুবার্ষিকী উপলক্ষে এর আয়োজন করা হয়। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন স্বেচ্ছাসেবক দলের সভাপতি হাবিব-উন-নবী খান সোহেল। অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায়, চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদু, সাংবাদিক শওকত মাহমুদ, সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক মিলন, স্বেচ্ছাসেবক দলের সাধারণ সম্পাদক মীর শরাফত আলী সপু, সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল বারী বাবু প্রমুখ।
ব্রিটিশ দৈনিক ডেইলি মেইলের ভারত সংস্করণে (অনলাইন) গত বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে বলা হয়, পাকিস্তানের গোয়েন্দা সংস্থা আইএসআইয়ের সাবেক প্রধান আসাদ দুররানি বুধবার পাকিস্তানের সুপ্রিম কোর্টে এক শুনানিতে ৫০ কোটি রুপি বিলি করার কথা স্বীকার করেন। ডেইলি মেইলের ওই প্রতিবেদনের ভিত্তিতে বাংলাদেশের বিভিন্ন সংবাদমাধ্যমেও এ খবর প্রকাশিত হয়।
দলীয় ও জোটের বিবেচনা থেকে সরকার নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দিতে যাচ্ছে অভিযোগ করে মির্জা ফখরুল বলেন, দেশে অর্থনীতির 'বিপর্যস্ত অবস্থার' মধ্যেও সরকার নতুন ব্যাংকের লাইসেন্স দিচ্ছে। আমরা শুনেছি, সরকারের মন্ত্রী, আত্মীয়স্বজন এবং মহাজোটের লোকজনকে এসব ব্যাংক দেওয়া হচ্ছে। নতুন ব্যাংকের মালিকের তালিকায় মহাজোটের শরিক এরশাদের নামও এসেছে। ১/১১-এর ষড়যন্ত্রকারী মইন উ আহমেদের ভাইয়ের নামও আছে। যারা জনগণের অর্থ লুটপাট করেছে, দেশের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র করেছে, তাদেরই নতুন ব্যাংক দেওয়া হচ্ছে। উদ্দেশ্য একটাই- তাদের খুশি রাখা।
মির্জা ফখরুল অভিযোগ করেন, সরকারের ভ্রান্তনীতির কারণে পোশাক, বস্ত্র ও ওষুধ শিল্প ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। অনেক পোশাক কারখানা বন্ধ হয়ে গেছে। পুঁজিবাজারের ৩৩ লাখ ক্ষুদ্র বিনিয়োগকারীর এক হাজার কোটি টাকা 'দরবেশ' হিসেবে পরিচিত ক্ষমতাসীন দলের এক ব্যক্তিসহ সরকারের লোকজন লুট করে বিদেশে পাচার করে দিয়েছে। কোনো বিচার হয়নি। কুইক রেন্টাল পাওয়ার প্লান্ট স্থাপন করে সরকার তিন বছরে বিদ্যুৎ সমস্যার সমাধান করতে পারেনি উল্লেখ করে তিনি বলেন, উল্টো এই প্রকল্পের মাধ্যমে সরকারের লোকজন ২০ হাজার কোটি টাকা লুট করেছে। সরকার পরিবর্তনের মাধ্যমে এই অবস্থার অবসান ঘটাতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
আওয়ামী লীগের উদ্দেশে তিনি বলেন, 'সরকারের কাছে আমাদের চাওয়ার কিছুই নেই। দাবি একটাই- নির্বাচনের জন্য লেভেল প্লেয়িং ফিল্ড তৈরি করতে হবে। সংবিধান সংশোধন করে আপনারা তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা বাতিল করেছেন। আবার আপনাদেরই সংশোধন করে তত্ত্বাবধায়ক সরকার পুনর্বহাল করতে হবে। যদি তা না করেন তাহলে জনগণ জানে কিভাবে তা আদায় করতে হয়।' মিডিয়ার ওপর সরকারের হস্তক্ষেপের জন্য ক্ষোভ প্রকাশ করে তিনি বলেন, ১২ মার্চ বিএনপির মহাসমাবেশ সরাসরি সম্প্রচারে বাধা দেওয়া হলেও ১৪ মার্চ ১৪ দলের সমাবেশ সব চ্যানেলকে সরাসরি দেখাতে বাধ্য করা হয়েছে। এক দেশে দুই নীতি শুধু আওয়ামী লীগকে দিয়েই সম্ভব।
বিএনপিতে খোন্দকার দেলোয়ার হোসেনের অবদানের কথা স্মরণ করে মির্জা ফখরুল বলেন, তাঁর মৃত্যু আমাদের কাছে পাহাড়ের মতো ভারী হয়ে থাকে। কারণ ১/১১-তে তিনিই বিএনপিকে রক্ষা করেছিলেন। তাঁর এই অবদান ইতিহাসের পাতায় স্বর্ণাক্ষরে লেখা থাকবে।
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য গয়েশ্বর চন্দ্র রায় বলেন, আওয়ামী লীগের দুই নেতা ১৯৯৬ সালের নির্বাচনের আগে পাকিস্তান থেকে 'ফান্ড' নিয়েছিলেন বলে 'জনশ্রুতি' আছে। বিএনপির চেয়ারপারসনের উপদেষ্টা শামসুজ্জামান দুদুও দাবি করেন, আইএসআইয়ের অর্থসংক্রান্ত খবর সম্পূর্ণ মিথ্যা ও বানোয়াট।

No comments

Powered by Blogger.