বিএনপি তত্ত্বাবধায়ক ব্যবস্থার দাবি তুলতে সংসদে যাচ্ছে

তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি তুলতে সংসদে যাচ্ছে বিএনপিসহ চারদলীয় জোটের শরিক দলগুলো। আজ রবিবার বিকেল ৪টায় সংসদ ভবনে বিরোধীদলীয় নেতার সম্মেলন কক্ষে বিএনপির সংসদীয় দলের সভা অনুষ্ঠিত হবে। এ সভায় সংসদে যাওয়ার পক্ষে সিদ্ধান্ত নেবেন বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

সংসদীয় দলের সভা সংক্ষিপ্ত হলে সভার পরই সংসদে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। অন্যথায় সোমবার সংসদে যোগ দেবে বিএনপি। সংসদে যোগ দিয়েই আগামী ১০ জুনের মধ্যে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবি তুলে বক্তব্য দেবেন খালেদা জিয়া।
বিএনপির এক সিনিয়র নেতা জানান, তত্ত্বাবধায়ক সরকার গঠনের দাবিতে মহাসমাবেশ থেকে সরকারকে আলটিমেটাম দিয়েছে বিএনপি। সংসদে গিয়েও সরকারকে আলটিমেটাম দেওয়ার পাশাপাশি সরকারের নেতিবাচক কর্মকাণ্ড তুলে ধরে বিরোধী দলের সদস্যরা বক্তব্য দেবেন।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিএনপির একজন সিনিয়র নেতা জানান, রবিবার বিকেলে সংসদ ভবনে বিরোধীদলীয় নেতার সম্মেলন কক্ষে বিএনপির সংসদীয় দলের সভা আহ্বান করেছেন খালেদা জিয়া। সভায় সিদ্ধান্ত হবে কী কী বিষয় নিয়ে অধিবেশনে সদস্যরা বক্তব্য দেবেন। তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা পুনর্বহালের দাবিতে সংসদে বিল এনে আগামী ১০ জুনের মধ্যে তা পাশের আহ্বান জানাবেন খালেদা জিয়া। সংসদে যোগ দেওয়ার পর চিকিৎসার জন্য খালেদা জিয়া ব্যাংকক যাবেন বলেও দলের পক্ষ থেকে জানা গেছে।
সংসদের বিরোধীদলীয় চিফ হুইপ জয়নুল আবদিন ফারুক কালের কণ্ঠকে বলেন, 'রবিবার বিকেলে বিএনপির সংসদীয় দলের সভা আহ্বান করেছেন দলের চেয়ারপারসন। এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি কখন যাব।' তিনি বলেন, 'আমরা সংসদে যোগ দেব।' সরকারি দল যদি সংসদে তত্ত্বাবধায়ক সরকার ব্যবস্থা ফিরিয়ে আনার বিল আনে, তাতে সমর্থনও দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
বিএনপির অপর এক সংসদ সদস্য জানান, রবিবার সংসদীয় দলের সভা আগেভাগে হলে ওই দিন সন্ধ্যায়ই সংসদে যোগ দেওয়ার সম্ভাবনা বেশি। তিনি বলেন, 'গত বছরও সংসদীয় দলের সভা বিকেল ৪টায় ডেকে শুরু হয়েছিল বিকেল সাড়ে ৫টায়। পরে আর ওই দিন অধিবেশনে যাওয়া হয়নি। পরের দিন সংসদে যেতে হয়েছে। এবারও সে রকম হতেই পারে। না হলে তো রবিবারই সংসদে যোগ দেওয়ার কথা।'
বিরোধী দল সংসদে যোগ দেবে- এই খবরে সাংবাদিকদের কাছে সন্তোষ প্রকাশ করেছেন জাতীয় সংসদের স্পিকার অ্যাডভোকেট আবদুল হামিদ। বিরোধী দলকে সংসদে আসার আহ্বান জানিয়ে তিনি বলেন, বিরোধী দলের সদস্যদের সব সময় কথা বলার সময় দেওয়া হয়। তাঁরা সংসদে আসলে এবারও কথা বলার সুযোগ পাবেন।
নবম জাতীয় সংসদের এ পর্যন্ত ২৮৪টি কার্যদিবসের মধ্যে বিরোধী দলের সংসদ সদস্যরা ২৩৩ দিনই অনুপস্থিত ছিলেন। তাঁরা মঝেমধ্যে সংসদে গিয়ে সংসদ সদস্য পদ রক্ষা করেছেন মাত্র। আর সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া মাত্র ছয় কার্যদিবস অধিবেশনে উপস্থিত ছিলেন। বর্তমানে তাঁর অনুপস্থিত কার্যদিবস সংখ্যা ৮৩। দলের অন্য সংসদ সদস্যদেরও সর্বোচ্চ গড় অনুপস্থিতি ৭৮ কার্যদিবস।
এদিকে সংসদের চলতি দ্বাদশ অধিবেশন শেষ হওয়ার কথা ছিল গত ৮ মার্চ। এরই মধ্যে অধিবেশনের মেয়াদ একদফা বাড়ানো হয়েছে। তবে এই অধিবেশন কত দিন চলবে তা এখনো সিদ্ধান্ত হয়নি। সংসদ সচিবালয় সূত্র জানায়, বিরোধী দল সংসদে যোগ দিলে অধিবেশনের মেয়াদ আরো বাড়ানো হতে পারে। তবে এ বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেবে স্পিকারের নেতৃত্বে সংসদের কার্য উপদেষ্টা কমিটি- জানান সংসদের চিফ হুইপ উপাধ্যক্ষ আবদুস শহীদ।
সংসদ চলিবালয়ের অপর একটি সূত্র জানায়, ২৯ মার্চ পর্যন্ত অধিবেশন বাড়ানো হতে পারে। সে ক্ষেত্রে ২৭ মার্চের মধ্যে অধিবেশনে যোগ না দিলে সংসদের বিরোধীদলীয় নেতা ও বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়াসহ কয়েকজনের সদস্য পদ খারিজ হয়ে যাবে। তাই সাত কার্যদিবসের মধ্যে বিরোধীদলীয় নেতাকে সংসদে যেতেই হবে। কারণ সংবিধানের ৬৭ অনুচ্ছেদ অনুযায়ী স্পিকারের অনুমতি ছাড়া টানা ৯০ কার্যদিবস সংসদে অনুপস্থিত থাকলে সদস্য পদ বাতিল হয়ে যায়।

No comments

Powered by Blogger.