আড়িয়ল বিলের পাশে বঙ্গবন্ধু বিমানবন্দর by টিপু সুলতান

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণের জন্য এবার আড়িয়ল বিলের কাছে দুটি স্থান নির্বাচন করা হয়েছে।
একটি জায়গার অবস্থান আড়িয়ল বিলের উত্তর-পূর্ব পাশে মুন্সিগঞ্জ জেলার সিরাজদিখান উপজেলার কেয়াইন ও লতব্দী ইউনিয়নে। অপর স্থানটি আড়িয়ল বিলের পশ্চিমে ঢাকা জেলার দোহার উপজেলার চর বিলাসপুর ইউনিয়নে।

বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ সেল থেকে বেসামরিক বিমান চলাচল মন্ত্রণালয়ের মাধ্যমে গত মাসে এ বিষয়ে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে একটি প্রতিবেদন পাঠানো হয়েছে। তাতে এই দুই জায়গায় বিমানবন্দর নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই (ফিজিবিলিটি স্টাডি) করার জন্য পরামর্শক নিয়োগের ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর অনুমোদন চাওয়া হয়।
এর আগে ২০১০ সালে ময়মনসিংহের ত্রিশালকে নতুন বিমানবন্দরের স্থান হিসেবে প্রাথমিকভাবে নির্বাচন করা হয়। কিন্তু বিমানবাহিনীর আপত্তির কারণে সেটা বাদ দেওয়া হয়।
এরপর সরকার আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেয় এবং ভূমি অধিগ্রহণের প্রক্রিয়া শুরু করে। কিন্তু এলাকাবাসীর আন্দোলনের মুখে গত বছরের ১ ফেব্রুয়ারি আড়িয়ল বিলে বিমানবন্দর নির্মাণের কার্যক্রম স্থগিত করা হয়।
পরে বিমানবন্দরের জন্য কেয়াইন, চর বিলাসপুরসহ আটটি স্থান চিহ্নিত করে প্রয়োজনীয় পরিদর্শন ও পর্যালোচনা করা হয়। বাকি ছয়টি স্থান হলো: মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া, মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর, মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চর জানাজাত ও রাজৈর, ফরিদপুরের ভাঙ্গা এবং গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়া উপজেলার বাঘিয়ার বিল।
নতুন স্থান প্রস্তাব: মন্ত্রণালয় থেকে প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে পাঠানো সারসংক্ষেপে এই সব কটি স্থানের সঙ্গে ঢাকার কেন্দ্রস্থল থেকে দূরত্ব, যোগাযোগব্যবস্থা, পর্যাপ্ত ভূমি, ভূমির গঠন, পরিবেশগত দিকসহ আনুষঙ্গিক বিষয়াদির তুলনামূলক চিত্র তুলে ধরা হয়। এতে সিরাজদিখানের কেয়াইন ও দোহারের চর বিলাসপুরকে সবচেয়ে উপযুক্ত দেখানো হয়।
সারসংক্ষেপে সরকারের অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বিমানবন্দর নির্মাণের একটি পথনকশা (রোডম্যাপ) তুলে ধরা হয়েছে। তাতে ৩১ মার্চের মধ্যে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান নির্বাচন, ৩০ এপ্রিলের মধ্যে পরামর্শক নিয়োগ, ৩১ অক্টোবরের মধ্যে সম্ভাব্যতা যাচাই প্রতিবেদন দাখিল ও ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্থান চূড়ান্তকরণ এবং তারপর মূল নির্মাণকাজ শুরু করার পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে।
বিমান মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, প্রয়োজনীয় অনুমোদন পেলে পরামর্শক প্রতিষ্ঠান কেয়াইন, লতব্দী ও চর বিলাসপুর এলাকায় বিমানবন্দর নির্মাণের সম্ভাব্যতা যাচাই করবে।
জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর নির্মাণ সেলের প্রধান ও যুগ্ম সচিব জয়নাল আবেদীন প্রথম আলোকে বলেন, সব দিক মূল্যায়ন করে কেয়াইন ও চর বিলাসপুরকে উপযুক্ত বলে বিবেচনায় নেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, এখানে খাসজমিসহ পর্যন্ত জমি রয়েছে। এখানে বিমানবন্দর করলে স্বল্পসংখ্যক মানুষকে পুনর্বাসন করতে হবে। আর ঢাকার সঙ্গে সহজ ও দ্রুত যোগযোগব্যবস্থা গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, ঢাকার শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে কেয়াইন ও চর বিলাসপুরের দূরত্ব যথাক্রমে ৩৮ ও ৬৫ কিলোমিটার।
কোনটা কেন বাদ: মাদারীপুরের শিবচর উপজেলার চর জানাজাত সম্পর্কে স্থান নির্ধারণসংক্রান্ত সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, পদ্মা নদীর তীরের এই চরের যোগাযোগব্যবস্থা ভালো নয়। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর থেকে এর দূরত্ব ৬৮ কিলোমিটার।
পদ্মার ওপারে হওয়ায় এবং ঢাকা থেকে দূরত্ব অনেক বেশি বলে রাজৈর, ভাঙ্গা ও কোটালীপাড়া প্রাথমিক বিবেচনা থেকেই বাদ পড়েছে। এর মধ্যে ভাঙ্গার চরটির ভূমির গঠন বিমানবন্দরের জন্য উপযোগী নয়।
মুন্সিগঞ্জের গজারিয়া ও মানিকগঞ্জের সিঙ্গাইর বাদ দেওয়া হয়েছে পর্যাপ্ত জমি না থাকায়।
কীভাবে নির্মিত হবে: প্রকল্পটি সরকারি-বেসরকারি অংশীদারির (পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ—পিপিপি) মাধ্যমে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে ২০১০ সালের ২৯ সেপ্টেম্বর অর্থনৈতিক বিষয়সংক্রান্ত মন্ত্রিসভা কমিটির বৈঠকে নীতিগতভাবে অনুমোদন দেওয়া হয়।
বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, নতুন এই বিমানবন্দরের জন্য সম্ভাব্য ব্যয় ধরা হয়েছে ৫০ হাজার কোটি টাকা।
সারসংক্ষেপে বলা হয়েছে, বিমান চলাচল খাতে ভবিষ্যতের বর্ধিত চাহিদা পূরণের লক্ষ্য সামনে রেখে রাজধানীর ঢাকার অদূরে একটি নতুন বিশ্বমানের বিমানবন্দর করা দরকার। বর্তমান সরকার একে অগ্রাধিকার প্রকল্প হিসেবে বিবেচনা করছে। দ্রুততার সঙ্গে এর সফল বাস্তবায়নে প্রশাসনিক মন্ত্রণালয় কার্যকর পদক্ষেপ নিয়েছে।
এ বিমানবন্দরের মাধ্যমে বাংলাদেশকে দক্ষিণ ও দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া অঞ্চলে একটি বিমান চলাচলের বড় কেন্দ্র (এয়ারলাইনস হাব) হিসেবে গড়ে তোলার পরিকল্পনা করেছে সরকার।

No comments

Powered by Blogger.