৩১ প্রতিষ্ঠানের সিন্ডিকেট!

সরকারের সামনে বড় চ্যালেঞ্জ দ্রব্যমূল্য। কোনোভাবেই দ্রব্যমূল্যের লাগাম টেনে ধরা যাচ্ছে না। নিত্যপণ্যের দাম বাড়তি। সাধারণ জনগণকে মূল্যবৃদ্ধির এই চাপ থেকে মুক্তি দিতে চালু করা হয়েছে ওএমএস। সরকার বাজার থেকে বেশি দামে চাল কিনে সেই চাল কম দামে সাধারণ মানুষের কাছে বিক্রি করছে।

কিন্তু তার পরও বাজার সামাল দেওয়া যাচ্ছে না। বাজারে দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি রোধ করতে টিসিবিকে নতুন করে কার্যকর করার কথা বারবারই বলা হয়েছে। কিন্তু টিসিবিকে সক্রিয় করা যায়নি। বাজার নিয়ন্ত্রণে গত দুই বছর কোনো ভূমিকাই রাখতে পারেনি টিসিবি। বাজারে এক অদৃশ্য সিন্ডিকেট আছে, এমন কথা অতীতে অনেক শোনা গেছে। কিন্তু সেই সিন্ডিকেট চিহ্নিত করা যায়নি। সিন্ডিকেটের কারসাজি থামানো যায়নি। এখন দেখা যাচ্ছে, টিসিবি যে কার্যকর হতে পারেনি, তার পেছনেও একটি চক্র সক্রিয় ও সচেষ্ট। এই চক্রটিই যে বাজার সিন্ডিকেটের একটি অংশ নয়, তেমনটি তো আর নিশ্চিত করে বলা যায় না।
অর্থনীতিতে দুষ্টচক্র বলে একটা কথা আছে। দেশের সাধারণ মানুষ তেমনি একটি অতিরিক্ত খরচের চক্রে পড়েছে অনেক দিন আগেই। বাজারের এই চক্রটিই হচ্ছে সিন্ডিকেট। বাজারের পণ্য নিয়ে তাদের ব্যবসা। এই সিন্ডিকেটের ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভর করে বাজারে জিনিসপত্রের দাম। কম দামে ভোগ্যপণ্য আমদানি করে আন্তর্জাতিক বাজারে দাম বৃদ্ধির অপেক্ষায় থাকে এই চক্রটি। আন্তর্জাতিক বাজারে পণ্যমূল্য বৃদ্ধির সুযোগ নিয়ে এখানে দাম বাড়িয়ে দেওয়া হয়। দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে অজুহাতের অন্ত থাকে না। এখানে সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। সাধারণ মানুষও এখানে অসহায়। সিন্ডিকেটের কাছে সরকার ও সাধারণ মানুষ জিম্মি।
এমনই ৩১ প্রতিষ্ঠানের এক সিন্ডিকেটের সন্ধান মিলেছে। কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে উঠে এসেছে এই ৩১ প্রতিষ্ঠানের অপকীর্তির খবর। দেশের তেল ও চিনির বাজার এই সিন্ডিকেটের দখলে। টিসিবির সঙ্গে চুক্তি করেও পণ্য সরবরাহ করেনি প্রতিষ্ঠানগুলো। প্রতিষ্ঠানগুলো টিসিবিকে তেল ও চিনি সরবরাহ না করায় প্রয়োজনের সময় বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হচ্ছে সরকার। টিসিবি সূত্রের বরাত দিয়ে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত খবরে বলা হয়েছে, সিন্ডিকেটের এজেন্ট হিসেবে এসব প্রতিষ্ঠান দরপত্রে অংশ নিয়ে পণ্য সরবরাহ থেকে বিরত থেকেছে। ফলে নিষ্ক্রিয় থাকতে হয়েছে টিসিবিকে। বাজার নিয়ন্ত্রণে ব্যর্থ হয়েছে সরকার।
এমন অবস্থায় চিন্তার কারণ সামনের রমজান। রোজার মাস আসছে। নিয়ম করে এবারও হয়তো জিনিসপত্রের দাম আরেক দফা বাড়বে। রোজার মাসে জিনিসপত্রের দাম সাধারণের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে টিসিবির বিকল্প নেই। বিকল্প বাজারের জন্য সরকারকে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। ব্যবস্থা নিতে হবে সিন্ডিকেটের বিরুদ্ধে। অদৃশ্য সিন্ডিকেটের একটি অংশ আপাতত দৃশ্যমান হয়েছে বলে মনে করা যেতে পারে। এদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। তাতে যদি সিন্ডিকেটের হাত কিছুটা হলেও খর্ব করা যায়।

No comments

Powered by Blogger.