সুদের হার বাড়ানো উচিত-সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়া

২০১০ সালের মার্চ মাসে বাংলাদেশ সঞ্চয়পত্রের নিট বা প্রকৃত বিক্রির পরিমাণ ছিল এক হাজার ১৩২ কোটি টাকা। কিন্তু ঠিক এক বছরের মাথায়, ২০১১ সালের মার্চে সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রি হয়েছে মাত্র ২৪ কোটি টাকার। অর্থাৎ, জাতীয় সঞ্চয়পত্র নিট বিক্রির হার প্রতি মাসে কমতে কমতে প্রায় শূন্যের দিকে যাচ্ছে।

জাতীয় সঞ্চয় পরিদপ্তরের দেওয়া সর্বশেষ হিসাবের বরাত দিয়ে এ সংবাদ ছাপা হয়েছে সোমবারের প্রথম আলোয়।
জাতীয় সঞ্চয়পত্র বিক্রি কমে যাওয়ার তাৎপর্য এই যে, সরকারের ব্যয় মেটানোর জন্য অর্থ সংগ্রহের একটি খাত সংকুচিত হয়ে যায়। এই ঘাটতি পূরণের জন্য সরকারকে ব্যাংক থেকে ঋণ নিতে হয় এবং সে ক্ষেত্রে সুদ পরিশোধ করতে হয় অপেক্ষাকৃত বেশি হারে। ফলে যে উদ্দেশ্যে সরকার বিভিন্ন মেয়াদ ও ধরনের জাতীয় সঞ্চয়পত্রগুলোর সুদের হার কমিয়ে দেয়, তা শেষ পর্যন্ত সফল হয় না।
এই সরল হিসাবটি যে সরকারের নীতিনির্ধারকদের বিবেচনায় থাকে না, তা বলা ঠিক হবে না; কিন্তু আমরা অতীতে একাধিক সরকারের সময় দেখেছি, একই ঘটনার পুনরাবৃত্তি ঘটে। সরকার সঞ্চয়পত্রের সুদের হার কমিয়ে দেয়, ফলে সঞ্চয়পত্রের বিক্রির হার কমে যায়। এবং পরবর্তী বছরে সরকারকে আবারও সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়িয়ে ক্রেতা আকর্ষণের চেষ্টা করতে হয়।
গত এক বছরে জাতীয় সঞ্চয়পত্রের বিক্রির হার ব্যাপকভাবে হ্রাস পাওয়ার কারণগুলো সাদা চোখেই দেখা যায়। গত অর্থবছরের শুরুতে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার প্রায় ১ শতাংশ কমানো হয়। এ ছাড়া ১০ শতাংশ উৎসে করও আরোপ করা হয়। শুধু তা-ই নয়, যেসব ক্রেতা আগের অর্থবছরগুলোতে একটি নির্দিষ্ট সুদহারের ভিত্তিতে সঞ্চয়পত্র কিনেছিলেন, তাঁদের ওই সঞ্চয়পত্রগুলোর ওপরও (নতুন সুদহার আরোপ করার আগে কেনা) নতুন সুদহার চাপিয়ে দেওয়া হয়। ফলে ক্রেতারা ভীষণ হতাশ হয়ে পড়েন। অনেকে মনে করেন, তাঁদের ওপর অন্যায় করা হয়েছে। ফলে সঞ্চয়পত্র কেনার পরিবর্তে মধ্যবিত্ত শ্রেণীর মানুষ অন্যত্র টাকা খাটানোর উপায় খোঁজেন; প্রচুরসংখ্যক মানুষ মেয়াদপূর্তির আগেই সঞ্চয়পত্র ভাঙিয়ে শেয়ারবাজারে বিনিয়োগ করেন।
প্রকাশিত সংবাদ অনুযায়ী, নতুন অর্থবছরে সঞ্চয়পত্রের সুদের হার বাড়ানোর সম্ভাবনা রয়েছে। এই পুনর্বিবেচনা বাস্তবসম্মত: আসলে সঞ্চয়পত্রের সুদহার অবশ্যই বাড়ানো উচিত। তাহলে নিশ্চয়ই সঞ্চয়পত্র বিক্রির হার বাড়বে। দুটি দিক বিবেচনায় থাকা ভালো: একটি হচ্ছে সরকারের অর্থ সংগ্রহের দিক, অন্যটি স্বল্প আয়ের নিম্নমধ্যবিত্ত ও মধ্যবিত্ত মানুষের কিছু অর্থনৈতিক সমর্থনের দিক। প্রচুরসংখ্যক মানুষ জাতীয় সঞ্চয়পত্রের ওপর নির্ভর করতে চান। বিশেষত, বয়স্ক পেনশনভোগী ও নারীরা জাতীয় সঞ্চয়পত্রকে নিরাপদ বিনিয়োগ বলে মনে করেন। আমরা আশা করি, বিষয়টি বিবেচনায় রেখে যুক্তিসংগত হারে সঞ্চয়পত্রের সুদ বাড়ানো হবে।

No comments

Powered by Blogger.