চোখ ধাঁধানো আলো জমকালো প্যাভিলিয়ন by মেখ্যাইউ মারমা

মেলার ফটক দিয়ে ঢুকতেই আলোর বন্যায় চোখ ধাঁধিয়ে যাওয়ার জোগাড়। ফটকের পাশে একটি ফোয়ারার সামনে দর্শকের ভিড়। অবাক হয়ে পানির নাচন দেখছিল শিশুরা। দৃষ্টিনন্দন এই দৃশ্যকে ধরে রাখতে কেউ কেউ ছবিও তুলছিলেন।
১৪ মার্চ সন্ধ্যায় আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলায় এমন দৃশ্য চোখে পড়ে।

২০তম আন্তর্জাতিক বাণিজ্য মেলা উপলক্ষে নান্দনিক সাজে সজ্জিত দেশি-বিদেশি প্যাভিলিয়ন দেখে মুগ্ধ আগত ব্যক্তিরা। আলোকসজ্জা, ফোয়ারা আর নানা উপাদান দিয়ে জমকালো সাজে সাজানো হয়েছিল মেলা প্রাঙ্গণ।
মেলা প্রাঙ্গণে আবুল খায়ের গ্রুপের জমকালো প্যাভিলিয়নটিতে দর্শকের ভিড় ছিল চোখে পড়ার মতো। প্যাভিলিয়নটি তৈরি করা হয়েছে বিনোদন পার্কের আদলে। ঝুলন্ত সেতু, ডুপ্লেক্স বাড়ি—কী নেই এই প্যাভিলিয়নে! বাঁধানো চত্বরের দু পাশে দুটি একতলা ও একটি দুইতলা ভবনে মোট চারটি স্টল রয়েছে। দুইতলার স্টলগুলোতে যাতায়াত করার জন্য আছে ঝুলন্ত সেতু। চা-পাতা, গুঁড়ো দুধ, কনডেন্সড মিল্ক, চানাচুরসহ এই শিল্পগ্রুপের হরেক রকম পণ্য প্রদর্শনী ও বিক্রির জন্য রাখা হয়েছে স্টলগুলোতে। একটি পণ্য কিনলেই পাওয়া যাচ্ছে লাকি কুপন। পুরস্কার ছাড়া ফিরছেন না কোনো ক্রেতাই। আবুল খায়ের গ্রুপের মেলার সমন্বয়কারী ইলিয়াস হাসান জানান, মেলায় আগত ব্যক্তিরা যেন বিনোদন পায় সে বিষয়টি বিবেচনা করে পার্কের আদলে প্যাভিয়িলনটি সাজানো হয়েছে।
শিশুদের বিশেষ প্রিয় এই প্যাভিলিয়ন। এর কারণও আছে। প্যাভিলিয়ন চত্বরে বাঘ, ভালুক ও টিয়া পাখির পাপেট শো দেখানো হয় প্রতিদিন। ছোটমণিদের জন্য নাচ-গানের আসরও হয় এখানে। এ ছাড়া উপহার হিসেবে দেওয়া হয় বেলুন ও চকলেট।
ইউনিলিভার, আরএফএল প্লাস্টিক, সানোয়ারা গ্রুপ অব কোম্পানিজ, টাটকা, থাই ফুড, প্রাণ, কিশোয়ান, হ্যামকো প্লাস্টিক, এন মোহাম্মদ প্লাস্টিক, পার্টেক্স ফার্নিচার, ভেগাস ফার্নিচার ও থাই প্যাভিলিয়নে এবার দর্শকের ভিড় দেখা গেছে। এসব প্যাভিলিয়নের সাজসজ্জাও ছিল চোখে পড়ার মতো।
পিচবোর্ড, রড, সিমেন্ট ও কাঁচসহ বিভিন্ন উপকরণ দিয়ে ভিন্ন আঙ্গিকে তৈরি এসএ গ্রুপের দৃষ্টিনন্দন প্যাভিলিয়নও দর্শকের নজর কেড়েছে। এসএ গ্রুপের ব্র্যান্ড সাপোর্ট অ্যান্ড অ্যাডভারটাইজমেন্ট ব্যবস্থাপক মোহাম্মদ জাহাঙ্গীর বলেন, ‘আমরা এবার প্যাভিলিয়ন তৈরিতে নতুনত্ব আনার চেষ্টা করেছি। প্যাভিলিয়নকে মোট তিনটি ভাগে বিভক্ত করা হয়েছে। প্রথম ভাগে ক্রেতা-দর্শনার্থীদের স্বাগত জানানোর ব্যবস্থা রাখা হয়েছে। এরপর আছে ফুড কোর্ট এবং শেষ ভাগে আছে থ্রি-ডি সিনেমা দেখার ব্যবস্থা।’
প্যাভিলিয়নে গিয়ে দেখা গেল, একদল তরুণ-তরুণী থ্রি-ডি সিনেমা দেখে বের হচ্ছেন আর অন্য একটি দল লাইনে দাঁড়িয়ে অপেক্ষা করছেন দেখার জন্য। হল থেকে বের হয়ে আসা চট্টগ্রাম কলেজের পরিসংখ্যান দ্বিতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী সুমি জানান, ‘আগে কখনো থ্রি-ডি সিনেমা দেখিনি। মনে হচ্ছিল অক্টোপাস, অজগরের সঙ্গে বাস্তব জগতে বাস করছিলাম।’ মেলায় ঘুরতে ঘুরতে চোখে পড়ল সবুজ রঙের একটি প্যাভিলিয়ন। প্যাভিলিয়নের বাইরের দেয়াল সাজানো হয়েছে টেরাকোটা দিয়ে। এমন নান্দনিক সাজে সাজানো হয়েছে ‘টাটকা’ কোম্পানির প্যাভিলিয়ন। টাটকার সহকারী মহাব্যবস্থাপক এ টি এম মেহেদী কবির জানান, এই প্যাভিলিয়নে পরিবেশবান্ধব পণ্য বিক্রি হয়। দেশীয় বিভিন্ন ফল ব্যবহার করে জুস, চকলেটসহ বিভিন্ন পণ্য তৈরি হয়।
মেলায় দর্শনার্থীদের আকৃষ্ট করতে ইউনিলিভার এবং সানোয়ারা গ্রুপ অব কোম্পানিজের প্যাভিলিয়ন সাজানো হয়েছে এই প্রতিষ্ঠানের বিভিন্ন পণ্যের মোড়কের রঙের সঙ্গে মিলিয়ে। বিক্রয়কর্মীদের পোশাকেও ছিল তার প্রতিফলন।
ভিন্ন সাজে সাজানো হয়েছিল আরএফএলের প্যাভিলিয়ন। স্বচ্ছ কাচের তৈরি এই প্যাভিলিয়নের পণ্য দেখা গেছে বাইরে থেকে।
মেলার শেষপ্রান্তে থাইল্যান্ডের প্যাভিলিয়ন। নজরকাড়া এই প্যাভিলিয়নটি তৈরি হয়েছে থাইল্যান্ডের বাড়ি-ঘরের অনুকরণে। এই প্যাভিলিয়নে ঢুকলে মনে হবে ছোটখাটো থাইল্যান্ড। মোট ২৫টি স্টলে মেয়েদের ব্যাগ, জুতা, জামা, প্রসাধনী ও শোপিসসহ গৃহস্থালির নানা পণ্য এই প্যাভিলিয়নে পাওয়া যাচ্ছে। থাই ট্রেড ডট কম স্টলের বিক্রেতা মো. সোহাগ জানান, সনাতন থাই স্থাপনার আদলে দেশি ঢেউটিন ব্যবহার করে প্যাভিলিয়নটি বানানো হয়েছে।

No comments

Powered by Blogger.