সুন্দলপুর থেকে গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু

জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিনে বাংলাদেশ তেল, গ্যাস ও খনিজ সম্পদ করপোরেশনের (পেট্রোবাংলা) পক্ষ থেকে জনগণকে উপহার হিসেবে সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে দৈনিক ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয়েছে। গ্যাসক্ষেত্রটি মহাজোট সরকারের সময়ই আবিষ্কার করা।

এ থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস সরবরাহ শুরু হওয়া প্রসঙ্গে গতকাল শনিবার এভাবেই প্রতিক্রিয়া জানালেন পেট্রোবাংলার চেয়ারম্যান অধ্যাপক ড. হোসেন মনসুর।
নোয়াখালীর কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার শাহজাদপুর গ্রামের সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্র থেকে গতকাল দুপুর ১২টা থেকে জাতীয় গ্রিডে পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাস সরবরাহ শুরু হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম এঙ্প্লোরেশন অ্যান্ড প্রডাকশন কম্পানি লিমিটেডের (বাপেক্স) আবিষ্কৃত সুন্দলপুর ক্ষেত্র জাতীয় গ্রিডে দৈনিক ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস যুক্ত হয়েছে। ২০১১ সালের ১৭ আগস্ট সুন্দলপুর ক্ষেত্রে পরীক্ষামূলকভাবে গ্যাস প্রজ্বালন করা হয়, যা ছিল বাংলাদেশের ২৪তম গ্যাসকূপ খনন প্রকল্প। এই প্রকল্পে ৭৩ কোটি ৬৫ লাখ টাকা ব্যয় ধরা হয়। সুন্দলপুর ক্ষেত্র থেকে গ্যাস সরবরাহ শুরু হওয়ার মধ্য দিয়ে বাপেক্সের ঝুলিতে যুক্ত হলো আরেকটি সাফল্য। দীর্ঘ ১৫ বছর পর বাপেক্স কোনো গ্যাসক্ষেত্র থেকে গ্যাস উত্তোলন করল।
সুন্দলপুর ক্ষেত্র থেকে জাতীয় গ্রিডে গ্যাস যুক্ত হওয়া সম্পর্কে ড. হোসেন মনসুর বলেন, 'আওয়ামী লীগ সরকারের আমলে ব্যাপক আকারে গ্যাস অনুসন্ধান ও উন্নয়নের পরিকল্পনা হাতে নেওয়া হয়েছে। তার ফল পাওয়া শুরু হয়েছে। সুন্দলপুর তারই উদাহরণ।' তিনি আরো বলেন, 'আজ (শনিবার) জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মদিন। এই দিনে পেট্রোবাংলার পক্ষ থেক জনগণের জন্য উপহার হিসেবে ১০ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় সঞ্চালন লাইনে যুক্ত করা হলো।
সুনামগঞ্জ ও নেত্রকোনার 'সুনেত্র' নামের গ্যাস খনি থেকে কবে নাগাদ গ্যাস উত্তোলন করবে বাপেক্স- এমন প্রশ্নের উত্তরে ড. হোসেন মনসুর বলেন, 'সুনেত্র রিগ মোবিলাইজ করা হয়েছে। সেখানে খুব শিগগির বাপেক্স কাজ শুরু করবে।' উল্লেখ্য, সুনেত্র বাপেক্স একটি বিশাল গ্যাসের আধার আবিষ্কার করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওই এলাকায় ৪ দশমিক ৫ ট্রিলিয়ন ঘনফুট (টিসিএফ) গ্যাস পাওয়া যাবে।
সুন্দলপুরের গ্যাসক্ষেত্রের প্রকল্প পরিচালক মো. আবদুল হালিম কালের কণ্ঠকে বলেন, এ গ্যাসক্ষেত্রের তিনটি কূপের একটি থেকে প্রতিদিন ১০ থেকে ১২ মিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা সম্ভব হবে।' তিনি আরো বলেন, 'সুন্দলপুর গ্যাসক্ষেত্রে আনুমানিক ৫০ বিলিয়ন ঘনফুট গ্যাস মজুদ রয়েছে। বর্তমানে সম্ভাব্য যে পরিমাণ গ্যাস মজুদ রয়েছে, তার বাজার মূল্য দুই হাজার ২০০ কোটি টাকার ওপরে হবে বলে জানান তিনি। গ্যাস উৎপাদন পুরোদমে শুরু হলে পর্যায়ক্রমে এই ক্ষেত্র থেকে দৈনিক সরবরাহের পরিমাণ ১৫ মিলিয়ন ঘনফুটে উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে বাপেক্সের।'
সুন্দলপুরসহ এ পর্যন্ত মোট তিনটি ক্ষেত্রে গ্যাসের সন্ধান পেয়েছে বাপেক্স। ১৯৯৫ সালে ভোলার শাহবাজপুরে প্রথম এবং ১৯৯৬ সালে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার সালদায় গ্যাস পায় প্রতিষ্ঠানটি। এ ছাড়া ২০০৪ সালে কুমিল্লার শ্রীকাইলে গ্যাস পাওয়ার ঘোষণা দেওয়া হলেও শেষ পর্যন্ত সেখানে গ্যাস মেলেনি।
বর্তমানে দেশে দৈনিক ২৫০ কোটি ঘনফুট গ্যাসের চাহিদার বিপরীতে ২০০ কোটি ঘনফুট উৎপাদন হচ্ছে। সেই হিসাবে ৫০ কোটি ঘনফুট ঘাটতি থাকছে। এই চাহিদা বছর শেষে ২৮০ কোটি ঘনফুটে উন্নীত হবে।

No comments

Powered by Blogger.