একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান এভাবে চলে না-বাংলাদেশ বিমান

বাংলাদেশ বিমানের পরিচালনা পর্ষদের যোগ্যতা ও দক্ষতা নিয়ে প্রশ্ন দীর্ঘদিনের। একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান যে ধরনের পরিচালনা পর্ষদ দিয়ে চলে, তার সঙ্গে বিমানের পরিচালনা পর্ষদের কোনো সম্পর্ক নেই। বিষয়টি আমরা বহুবার সরকারের নজরে আনার চেষ্টা করেছি।

এখন বিমানের কর্মীরাও এই ‘অযোগ্য’ পরিচালনা পর্ষদের বিরুদ্ধে আন্দোলনে নেমেছেন। বিমান যে ঠিকভাবে চলছে না, কর্তৃপক্ষ যে এই প্রতিষ্ঠান চালাতে পারছে না, এর অসংখ্য নজির রয়েছে; পত্রপত্রিকায় নিয়মিতই এগুলো ছাপা হচ্ছে। গত বৃহস্পতিবারই প্রথম আলোতে প্রকাশিত এক খবরের তথ্য অনুযায়ী, বিমানের এয়ারবাস তিন মাস ধরে সিঙ্গাপুরে পড়ে আছে। এতে দৈনিক ক্ষতি হচ্ছে ৫০ হাজার ডলার। হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরের ব্যবস্থাপনা নিয়েও সমস্যা ও অভিযোগের শেষ নেই। বৈদেশিক মুদ্রা পাচারের কাজে জড়িয়ে পড়েছেন বিমানবন্দরের কিছু কর্মী।
একটি যথাযথ বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে তোলার জন্য বিমানকে কোম্পানিতে রূপান্তর করা হয়েছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এর কি ফল পাওয়া গেছে? বছরের পর বছর বিমান লোকসান দিয়েই যাচ্ছে। বিশ্বের অন্য বাণিজ্যিক বিমান সংস্থাগুলো যেখানে বাংলাদেশে থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করে লাভবান হচ্ছে, ফ্লাইট সংখ্যা ও গন্তব্যস্থল বাড়াচ্ছে, সেখানে লোকসান করেছে বাংলাদেশ বিমান। কারণ, যাদের দিয়ে বিমান পরিচালিত হচ্ছে, তাদের এ ধরনের একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান চালানোর ক্ষমতা ও যোগ্যতা নেই। এ জন্য বিমানের পরিচালনা পর্ষদকে দোষারোপ করে লাভ নেই, দোষ সরকারের ভুল নীতির। বিশ্বের সব বাণিজ্যিক বিমান সংস্থা যেখানে পরিচালিত হচ্ছে এই ব্যবসায় অভিজ্ঞ নির্বাহীদের দিয়ে, সেখানে বাংলাদেশ বিমানের ব্যবস্থাপনা পরিচালকের দায়িত্ব পালন করছেন একজন বিমানবাহিনীর কর্মকর্তা। বিশ্বের কোনো বাণিজ্যিক বিমান সংস্থায় এ ধরনের নজির পাওয়া যাবে না।
বাংলাদেশ থেকে ফ্লাইট পরিচালনা করে অন্য আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলো লাভ করছে তাদের উন্নত ব্যবস্থাপনা ও পরিচালনা-পদ্ধতির কারণে। ব্যবস্থাপনার মান উন্নত করা গেলে বাংলাদেশ বিমানকেও নিশ্চিতভাবেই লাভজনক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করা সম্ভব হবে। বাংলাদেশ বিমানের যে এয়ারবাসটি তিন মাস ধরে সিঙ্গাপুরে পড়ে আছে, তার মূল কারণ হচ্ছে ঢাকায় বিমানটি দুর্বল ও নিয়মবহির্ভূত রক্ষণাবেক্ষণ। এটা পুরোপুরি ব্যবস্থাপনাগত সমস্যা। এই ব্যবস্থাপনাগত সমস্যার কারণে বাণিজ্যিকভাবে বিমানের ক্ষতি হয়েছে প্রায় ২৩ কোটি টাকা। এর আগে বিমানের আরেকটি এয়ারবাসের ক্ষেত্রেও একই ধরনের ঘটনা ঘটে। তখন ক্ষতি গুনতে হয়েছিল প্রায় ২৬ কোটি টাকা।
আমরা মনে করি, বাংলাদেশ বিমানকে লোকসানের হাত থেকে বাঁচিয়ে একটি লাভজনক বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠানে পরিণত করতে হলে সরকারকে পুরোনো ধ্যানধারণা থেকে সরে আসতে হবে। বর্তমান ধারার অদক্ষ ও অযোগ্য পরিচালনা পর্ষদ না গঠন করে বিমানকে একটি বাণিজ্যিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিবেচনায় নিয়ে পরিচালনা পর্ষদ গঠন করতে হবে। এখন বিমানের কর্মীরাও এ ধরনের আন্দোলনে জড়িত হওয়ায় সরকারের টনক নড়বে, সেটাই প্রত্যাশা।

No comments

Powered by Blogger.