পয়োনিষ্কাশনের কার্যকর ব্যবস্থা আশু প্রয়োজন-বিপন্ন গুলশান লেক

রাজধানীর অভিজাত এলাকা হিসেবে খ্যাত গুলশানের লেকটির বিপন্ন দশা নতুন কোনো খবর নয়। দীর্ঘ সময় ধরে লেকটির দুই পারে অবৈধ দখলের ফলে মূল লেকটি সংকুচিত হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, দুই পারের অধিবাসীদের অনেকেই গৃহস্থালি বর্জ্য ফেলে লেকটিকে প্রায় একটি ভাগাড় বা নর্দমায় পরিণত করে চলেছেন।

রোববারের প্রথম আলোর শেষ পাতায় সচিত্র একটি প্রতিবেদনে বর্ণিত হয়েছে, কীভাবে লেকের পাড়ের রাস্তা কেটে পাইপ বসিয়ে বাসাবাড়ির তরল বর্জ্য লেকে ফেলার ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ রকম দুষ্কর্ম চলছে, বলা হচ্ছে এটা ওয়াসার কাজ। ওয়াসা বলছে, তারা এ বিষয়ে কিছুই জানে না।
গুলশান এলাকায় পয়োনালা নেই, অনেক বাড়িতে নেই সেপটিক ট্যাংক। এলাকাবাসী বলছেন, তাঁদের বাসাবাড়ির পয়োবর্জ্য যাবে কোথায়? শুধু পয়োবর্জ্য নয়, গৃহস্থালি বর্জ্যও ফেলা হচ্ছে লেকের বুকে। আর গুলশান-বনানী-বারিধারাসহ আশপাশের এলাকায় ঢাকা সিটি করপোরেশনের যে কিছু ভূ-উপরিস্থিত নর্দমা রয়েছে, সেগুলোও গিয়ে মিশেছে লেকের সঙ্গে। ফলে লেকটি হয়েছে আসলেই বড় এক নর্দমা।
রাজধানীর লেকগুলোর রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্বপ্রাপ্ত সংস্থা রাজধানী উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের (রাজউক)। চেয়ারম্যানই স্বীকার করেন, লেকদূষণ রোধের ক্ষমতা রাজউকের নেই। রাজউক অন্যান্য সংস্থাকে সহযোগিতা করতে পারে মাত্র। রাজধানীর পয়োনিষ্কাশনের দায়িত্ব ঢাকা ওয়াসার। ওয়াসা যদি সেদিকে লক্ষ রাখত, তাহলে সমস্যাটি এত জটিল আকার ধারণ করত না।
ওয়াসা বলছে, গুলশান-বারিধারা স্টর্ম-স্যুয়ার নামে প্রশস্ত গভীর নর্দমা গুলশান লেকের দুই পাড় ঘেঁষে তৈরি করা হবে। কিন্তু কবে হবে, সেটা তারা বলতে পারছে না। একটি পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পের কথাও ওয়াসা বলছে। কিন্তু বাস্তবায়নের কোনো নির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারিত হয়নি। আবার এই প্রকল্পগুলোর যুক্তি দেখিয়ে অন্যান্য সংস্থা হাত গুটিয়ে বসে আছে। এতে লেকদূষণ চলেছে অবাধে। এভাবে আর চলতে দেওয়া যায় না। গুলশান লেককে চূড়ান্ত বিপর্যয় থেকে বাঁচানোর জন্য দ্রুত ব্যবস্থা নিতে হবে। পয়োনিষ্কাশন প্রকল্পগুলোর বাস্তবায়ন অতি দ্রুত করতে হবে। সেই সঙ্গে এলাকাবাসীরও দায়িত্বশীলতা দরকার। লেক রক্ষার দায়িত্ব তাঁদেরও।

No comments

Powered by Blogger.