চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকা-খানাখন্দে ভরা সড়ক, যানজট by একরামুল হক

চট্টগ্রামের বহদ্দারহাট এলাকার আশপাশের সড়কগুলো যান চলাচলের প্রায় অনুপযোগী হয়ে পড়েছে। এতে বহদ্দারহাটের চারপাশের সড়কে তীব্র যানজট হচ্ছে। কক্সবাজার, বান্দরবান ও দক্ষিণ চট্টগ্রামগামী যাত্রীরা চরম দুর্ভোগের শিকার হচ্ছে।
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) সূত্র জানিয়েছে, ১০৬ কোটি টাকা ব্যয়ে বহদ্দারহাটে উড়ালসেতুর কাজ চলছে।

নির্মাণকাজ চলার কারণে এ এলাকার সড়কগুলোর ওপর যান চলাচলের বাড়তি চাপ পড়ছে। এ ছাড়া দেড় থেকে দুই বছর ধরে এ সড়কগুলোতে সংস্কারকাজ হয়নি। এতে চলাচল ব্যাহত হওয়ায় প্রায় সব সময়ই এখানে যানজট লেগে থাকছে। সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা আগামী এক বছরে এ দুর্ভোগ কমার সম্ভাবনা দেখছেন না বলে জানিয়েছেন।
সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালাম এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ‘যাত্রীদের দুর্ভোগের বিষয় মাথায় রেখে আমরা বহদ্দারহাটের ভাঙা সড়ক সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। এ জন্য ৭০ লাখ টাকা বরাদ্দ দেওয়া হয়েছে। ঠিকাদার শিগগির কাজ শুরু করবেন।’
২০১১ সালের মার্চে উড়ালসেতুর কাজ শুরু হয়। চলতি বছরের ডিসেম্বরে তা শেষ হওয়ার কথা। সরেজমিনে দেখা গেছে, বহদ্দারহাট এলাকার বিভিন্ন সড়কে এত বড় বড় গর্তের সৃষ্টি হয়েছে যে বৃষ্টি হলে সেগুলোকে পুকুর বা ডোবা মনে হয়। একেকটি গর্তের গভীরতা পাঁচ থেকে ১৬ বা ১৭ ইঞ্চি পর্যন্ত। এ সড়কে ছোট আকারের যান চলাচলে সমস্যা হচ্ছে বেশি।
বহদ্দারহাট থেকে কালুরঘাট পর্যন্ত সড়কের বিভিন্ন অংশেও গর্তের সৃষ্টি হয়েছে। বহদ্দারহাটের একদিকের সড়ক মূল নগরের সঙ্গে যুক্ত। আরেক দিকের সড়ক যুক্ত হয়েছে নগরের চকাবাজারের সঙ্গে। আর অন্য পথ দিয়ে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু হয়ে কক্সবাজার, বান্দরবান ও দক্ষিণ চট্টগ্রামে যাওয়া যায়। চান্দগাঁও আবাসিক এলাকার পাশ ঘেঁষে আরেকটি সড়ক ইংরেজি অক্ষর ‘ওয়াই’-এর মতো কালুরঘাট সেতু এবং কাপ্তাইয়ের সঙ্গে যুক্ত হয়েছে।
সরেজমিন ঘুরে দেখা গেছে, দিনরাত ২৪ ঘণ্টা ওই এলাকার সড়কগুলোতে যানজট লেগে আছে। রাজধানী ঢাকা থেকে কক্সবাজার ও বান্দরবান পথের বেশির ভাগ গাড়ি ওই সড়কে রাতে চলাচল করে। এ ছাড়া কালুরঘাট ও নদীর দক্ষিণ পাড়ে পশ্চিম পটিয়ার শিল্পকারখানার ভারী ট্রাক ও লরিতে করে মালামাল পরিবহন হয় বহদ্দারহাটের সড়ক দিয়ে। উড়ালসেতুর কাজ চলার কারণে বহদ্দারহাট থেকে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতু সড়কের চান্দগাঁও থানা ভবন পর্যন্ত অংশে যান চলাচল বন্ধ রাখা হয়েছে। এ কারণে যানজট আরও তীব্র হয়েছে। বিকল্প হিসেবে তৃতীয় কর্ণফুলী সেতুগামী গাড়িগুলো চান্দগাঁও আবাসিক এলাকাসংলগ্ন সড়ক দিয়ে বাস টার্মিনাল হয়ে চান্দগাঁও থানা ভবনের সামনে দিয়ে পারাপার হচ্ছে।
এলাকার বাসিন্দারা জানান, দিনের বেলায় বহদ্দারহাটে বাস ও ট্রাকের সঙ্গে সিএনজিচালিত অটোরিকশা সমান তালে চলাচল করছে। সড়কে গর্তের কারণে বহদ্দারহাট পার হওয়ার সময় গাড়ির গতি কমিয়ে দেন চালকেরা।
সিডিএ সূত্র জানায়, উড়ালসেতুর নির্মাণকাজ শেষ হওয়ার আগে এলাকায় যানজট কমার লক্ষণ নেই। যাত্রীদের দুর্ভোগ আরও বাড়ার আশঙ্কা রয়েছে। যদিও কক্সবাজার, বান্দরবান ও দক্ষিণ চট্টগ্রাম ছাড়াও পর্যটন এলাকা কাপ্তাই পথের সব ধরনের গাড়ি বহদ্দারহাট দিয়ে চলাচল করে আসছে। তবে বিগত তত্ত্বাবধায়ক সরকারের আমলে অক্সিজেন থেকে কাপ্তাই সড়কের মাথা পর্যন্ত আরেকটি সড়ক নির্মাণ করে সিডিএ। এরপর এ সড়কটিরও কোনো সংস্কার হয়নি। ফলে সব ধরনের গাড়ির চাপ পড়েছে বহদ্দারহাটের দিকে। পরিবহন শ্রমিক সংগঠনের একাধিক নেতা প্রথম আলোকে জানান, উন্নয়নকাজের জন্য বহদ্দারহাটের আশপাশের সড়ক দেড়-দুই বছর ধরে সংস্কার হয়নি। এতে গাড়ির যন্ত্রাংশ নষ্ট হচ্ছে। এ জন্য তাঁরা সিডিএর ভূমিকার সমালোচনা করেন।
সাহাবউদ্দিন নামের একজন বাসচালক বলেন, বহদ্দারহাট নগরের অন্যতম ব্যস্ততম মোড় হিসেবে চিহ্নিত। অথচ দেড়-দুই বছরে মোড়ের আশপাশের রাস্তাগুলো সংস্কার করা হয়নি। এতে ঘণ্টার পর ঘণ্টা যানজট লেগে আছে। এদিকে ভারী যান চলাচলের কারণে কালুরঘাট সেতুও ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে। কক্সবাজার, বান্দরবান ও দক্ষিণ চট্টগ্রামের গাড়িও এ সেতু দিয়ে পারাপার হয়ে আসছে। এটির সংস্কারকাজ শুরু হচ্ছে আগামী ২ মে থেকে। বহদ্দারহাট সড়কের বেহাল অবস্থার কারণে সিডিএ ও সিটি করপোরেশনের মেয়র মোহাম্মদ মনজুরুল আলম ও সিডিএ চেয়ারম্যান আবদুচ ছালামের অনুরোধের কারণে সেতুর সংস্কারকাজ তিন মাস পিছিয়ে ২ মে থেকে শুরু করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ।
রেলওয়ে পূর্বাঞ্চলের মহাব্যবস্থাপক ইউসুফ আলী মৃধা প্রথম আলোকে বলেন, ‘কালুরঘাট সেতুর বয়স ৮১ বছর। ২০০৫ সালে এটির সর্বশেষ সংস্কার করা হয়। এখন আবার ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে উঠেছে সেতুটি। তাই আমরা ৬৪ লাখ টাকা খরচ করে এটির সংস্কারের উদ্যোগ নিয়েছি। ফেব্রুয়ারি থেকে শুরু করার কথা ছিল। মেয়র মহোদয় ও সিডিএ চেয়ারম্যানের অনুরোধে আমরা সংস্কারকাজ তিন মাস পিছিয়ে দিয়েছি।’

No comments

Powered by Blogger.