কুষ্টিয়ায় কিশোরীকে ধর্ষণের পর হত্যা!

কুষ্টিয়া সদর উপজেলায় এক কিশোরীকে ধর্ষণের পর শ্বাসরোধে হত্যার অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিহত কিশোরীর নাম লাকী খাতুন (১৬)। গত শুক্রবার রাতে সদর উপজেলার বটতৈল ইউনিয়নের শিশিরপাড়া গ্রামে এ ঘটনা ঘটে। নিহত লাকী শিশিরপাড়া গ্রামের আজাহার আলীর মেয়ে।

পুলিশ ও চিকিৎসকদের দাবি, লাকী আত্মহত্যা করেছে। তবে নিহত কিশোরীর স্বজনেরা বলছেন, পুলিশ ও চিকিৎসকেরা প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
মেয়েটির পরিবারের বিবরণ অনুযায়ী, শুক্রবার রাত ১০টার পর কোনো এক সময় লাকী প্রকৃতির ডাকে সাড়া দিতে ঘরের বাইরে বের হয়। দীর্ঘ সময়েও সে না ফেরায় খোঁজাখুঁজি শুরু হয়। সারা রাত খুঁজেও তার সন্ধান পাওয়া যায়নি। গতকাল শনিবার সকালে বাড়ি থেকে ১০০ গজ দূরে ভুট্টাখেতে তার লাশ পাওয়া যায়। লাশটি একটি ছোট নিমগাছের সঙ্গে ওড়না দিয়ে পেঁচানো অবস্থায় ছিল। খবর পয়ে পুলিশ ঘটনাস্থলে গিয়ে লাশ উদ্ধার করে ময়নাতদন্তের জন্য কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের মর্গে পাঠায়।
লাকীর বাবা আজাহার আলী অভিযোগ করেন, একই এলাকার আকমল শেখের কলেজপড়ুয়া ছেলে আহাদ আলী (২৩) দুই বছর আগে তাঁর মেজো মেয়েকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। কিন্তু তাতে তাঁরা রাজি হননি। এরপর আহাদ তাঁর ছোট মেয়ে লাকীকে বিয়ের প্রস্তাব দেন। তাতেও তাঁরা রাজি হননি। এতে ক্ষুব্ধ হয়ে আহাদ তাঁর মেয়েকে উত্ত্যক্ত করা শুরু করেন। এ নিয়ে কয়েকবার গ্রামপর্যায়ে সালিস বৈঠক হয়। সালিস ডাকায় আহাদ আরও ক্ষিপ্ত হন। যেকোনোভাবে তিনি একদিন না একদিন লাকীকে বিয়ে করবেন বলে হুমকি দেন। আজাহার আলী বলেন, তাঁদের ধারণা, আহাদই তাঁর মেয়েকে নির্যাতনের পর হত্যা করেছেন।
বটতৈল ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান আবদুল মজিদ বলেন, যে গাছের সঙ্গে লাকীর লাশ পাওয়া গেছে, সেটির সঙ্গে ঝুলে আত্মহত্যা করা সম্ভব নয়। কেননা, গাছটি খুবই চিকন। তা ছাড়া লাশ মাটিতে হাঁটু গাড়া অবস্থায় পাওয়া গেছে।
কুষ্টিয়া জেনারেল হাসপাতালের আবাসিক চিকিৎসক (আরএমও) তাপস কুমার সরকার জানান, তিনিসহ হাসপাতালের তিনজন চিকিৎসক লাকীর লাশের ময়নাতদন্ত করেছেন। ময়নাতদন্তে ধর্ষণের কোনো আলামত, এমনকি কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি। ময়নাতদন্তের প্রতিবেদন সোমবার সিভিল সার্জনের কার্যালয়ে পাঠানো হবে।
লাশের সুরতহাল প্রতিবেদন তৈরি করেন কুষ্টিয়া মডেল থানার উপপরিদর্শক (এসআই) আমিনুল ইসলাম ও রেশমা খাতুন। এসআই রেশমা খাতুনের বরাত দিয়ে এসআই আমিনুল বলেন, লাশের ডান পায়ের গোড়ালিতে একটি ক্ষত দেখা গেছে। শরীরে মেলামেশার আলামত পাওয়া গেছে। তবে মনে হয়েছে, মেলামেশাটা পারস্পরিক সম্মতিতে হয়েছে।
জানতে চাইলে কুষ্টিয়া মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) কাজী জালাল উদ্দিন প্রথম আলোকে বলেন, যে গাছের সঙ্গে মেয়েটির লাশ পাওয়া গেছে, সেটিতে ঝুলে আপাতদৃষ্টিতে মৃত্যু হওয়ার কথা নয়। তার পরও ধারণা করা হচ্ছে, মেয়েটি আত্মহত্যা করেছে। এ ব্যাপারে শনিবার রাত আটটা পর্যন্ত থানায় কোনো মামলা হয়নি। তবে বিষয়টি খতিয়ে দেখা হচ্ছে।
লাকীর মামা জালাল উদ্দিন বলেন, লাশ উদ্ধারের সময় লাকী ছিল বিবস্ত্র। তার শরীরের বিভিন্ন স্থানে ক্ষত দেখা গেছে। মুখেও আঁচড়ের দাগ ছিল। তাঁদের ধারণা, পুলিশ ও চিকিৎসকেরা প্রকৃত ঘটনা ধামাচাপা দেওয়ার চেষ্টা করছেন।
শিশিরপাড়া গ্রামে গিয়ে জানা যায়, ঘটনার পর থেকে আহাদ পলাতক। তাঁদের বাড়িতে গিয়ে কাউকে পাওয়া যায়নি।

No comments

Powered by Blogger.