ভালোই লাগছে বিপিএল by সাকিব আল হাসান

একটা জিনিস খুব ভালো লাগছে। আইপিএলে বিদেশি খেলোয়াড়দের যতটা সিরিয়াস দেখেছি, এখানে কেউ তার চেয়ে কম নয়। সবার মধ্যেই ভালো করার তাড়না। অনেক সময় বাংলাদেশি খেলোয়াড়দের চেয়ে এই ব্যাপারটা তাদের মধ্যেই বেশি দেখা যাচ্ছে। ভেবে ভালো লাগছে যে বাংলাদেশের একটা ঘরোয়া টুর্নামেন্ট খেলতে এসে তারা এতটা সিরিয়াস।


আইপিএল প্রসঙ্গ যখন এলই, বিপিএলের সঙ্গে সেটার আরেকটু তুলনা করি। আমি আইপিএলে গেলাম টুর্নামেন্টটার চতুর্থ আসরে। প্রথম বছরে সেটা কেমন ছিল আমার জন্য বলা কঠিন। তবে আমি গিয়ে আইপিএলকে অনেক গোছানো পেয়েছি। কারণ, তত দিনে তারা ভুলত্রুটি শুধরে ফেলেছে। সবকিছুই মনে হয়েছে ছকে বাঁধা।
সে তুলনায় বিপিএলে বেশ কিছু ভুল চোখে পড়ছে, হয়তো প্রথমবার বলেই। নিয়মিত হলে ভবিষ্যতে এই ভুলগুলো থাকবে না আশা করি। পরের বছর ভুল আরও কম হবে। তবে প্রথম আসরের কথা চিন্তা করলে বিপিএল এখন পর্যন্ত সফলই মনে হচ্ছে।
সবচেয়ে বড় সমস্যা ছিল এবার সময়স্বল্পতা। ভালোভাবে দল গঠনেরও সময় পায়নি ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। এসব কাজ তাড়াহুড়োর মধ্যে করলে একটু সমস্যা হবেই। তবে সবাই চেষ্টা করেছে এই সীমাবদ্ধতার মধ্যেই ভালো কিছু করতে। হয়তো কোনো কোনো জায়গায় ছাড় দিতে হচ্ছে এবং সেটা বিপিএল আয়োজনের বেলায়ও সত্যি। তবে আয়োজনে যত অভিজ্ঞতা বাড়বে, এসব সমস্যাও দূর হয়ে যাবে আস্তে আস্তে।
ভারতের একটা টুর্নামেন্টের সঙ্গে বাংলাদেশের একটা টুর্নামেন্টের তুলনা আসলে হয়ও না। ভারত বাংলাদেশের চেয়ে অনেক বড় একটা দেশ। সব দিক দিয়েই তারা অনেক এগিয়ে। ভারতের যেকোনো ইভেন্ট আমাদের চেয়ে ভালো হওয়াটাই স্বাভাবিক। তাদের মানুষ বেশি, বাজেট বেশি, সুযোগ-সুবিধা বেশি। পাঁচ কোটি টাকার বাড়ি নিশ্চয়ই এক কোটি টাকার বাড়ির মতো সুন্দর হবে না।
শুরুর বছরের ছোটখাটো সমস্যাগুলোর কথা বাদ দিলে আমি বলব, বিপিএল আমাদের দেশের ক্রিকেটারদের জন্য অভিজ্ঞতা অর্জনের বড় একটা সুযোগ। বড় বড় খেলোয়াড়ের সঙ্গে খেলছে, একই ড্রেসিংরুমে বসে তাদের দেখছে, কথা শুনছে—উঠতি খেলোয়াড়দের কাছে এটা স্বপ্নের মতো ব্যাপার। আমার নিজের কথাই ধরুন। খুলনা রয়েল বেঙ্গলসের অধিনায়ক আমি। আমার দলে সনাৎ জয়াসুরিয়া, হার্শেল গিবসদের মতো খেলোয়াড়! এত বড় বড় খেলোয়াড়কে সামলানোটাই তো বড় চ্যালেঞ্জ। তার পরও আমি কাজটা উপভোগ করছি। আর ওরাও খুব পেশাদার। সব কাজে সাহায্য করে, সমর্থন জানায়। কাজেই বড় খেলোয়াড় সামলাতেও খুব একটা সমস্যা হচ্ছে না।
এখানে যারা খেলতে এসেছে, সবাই পেশাদার ক্রিকেটার, এ কারণেই দলের জন্য সবকিছু উজাড় করে দিয়ে চেষ্টা করে। অনেকেই বলছেন, দেশের ক্রিকেটারদের চেয়ে বিদেশিরা বিপিএলে ভালো খেলছে। আমি আসলে আমাদের সঙ্গে তাদের পারফরম্যান্সের তুলনায় যেতে রাজি নই। একটা দলে ছয়জন দেশি খেলোয়াড়ের সঙ্গে পাঁচজন বিদেশি খেলোয়াড়। ভালো খেলার সুযোগ তো সবারই আছে। আর ওরা যেহেতু অনেক অভিজ্ঞ, প্রচুর আন্তর্জাতিক ম্যাচ খেলেছে, ভালো খেলাটা তাদের জন্যই সহজ। লক্ষ করলে দেখবেন, আমাদের মধ্যেও যারা আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলে তারা পারফর্ম করছে। যারা খেলে না তাদের জন্য কঠিন হচ্ছে।
তার পরও সব মিলিয়ে বলব, বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা বিপিএলে খারাপ খেলছে না। কেউ কেউ যদি খারাপ খেলেও, সেটাকে বড় করে দেখার কিছু নেই। সবাই তো আর একসঙ্গে ভালো খেলবে না। বিপিএলে কি অনেক বিদেশি খেলোয়াড়ও খারাপ খেলছে না? আবার এমন কিছু খেলোয়াড়ও এখানে আছে, তাদের সম্পর্কে আপনি আগে থেকেই বলে দিতে পারবেন এরা ভালো খেলবে। বাংলাদেশি ক্রিকেটারদের মধ্যেও তো সে রকম খেলোয়াড় আছে।
বিপিএলের দর্শক নিয়েও অনেক কথা শুনছি। দর্শক কেন নেই, কী করলে দর্শক আসবে ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার ধারণা, দর্শক প্রথম দিকে কম হয়েছে কারণ টিকিটের দাম অনেক বেশি ছিল। এরপর দর্শক বাড়ছে কারণ টিকিটের দাম একটু কমেছে। আরও যদি কমে আরও দর্শক আসবে। খুবই স্বাভাবিক এটা। আমাদের দেশের অনেকেরই ৫০০ টাকায় এক সপ্তাহের চাল কেনা হয়ে যায়। স্বাভাবিকভাবেই সে এই টাকা দিয়ে বিপিএলের টিকিট না কিনে চালই কিনবে।
তবে দর্শকদের একটা নিশ্চয়তা দেওয়া যায়। কষ্ট করে মাঠে এলে ক্রিকেটের সত্যিকারের বিনোদনটাই পাবেন। এখন পর্যন্ত বিপিএলে মাঠে এসে ভালো ক্রিকেট না দেখেই ফিরতে হয়েছে, এটা কিন্তু কমই ঘটেছে। আর খুলনা রয়েল বেঙ্গলসের হয়ে প্রতিশ্রুতি দিচ্ছি, আমরা কিন্তু ভালো কিছুর আশায়ই মাঠে নামি। দলের যা সামর্থ্য আর শক্তিমত্তা, সেমিফাইনালে অবশ্যই যাওয়া উচিত। আর সেমিফাইনালে গেলে এক ম্যাচ জিতলেই আমরা চ্যাম্পিয়ন হওয়ার জন্য খেলব। আমার বিশ্বাস, খুলনা রয়েল বেঙ্গলস তা পারবে।
পুরোটা গেলে বোঝা যাবে। তবে এখন পর্যন্ত ভালোই লাগছে। খারাপ না।

No comments

Powered by Blogger.