আসন্ন রমজান ও দ্রব্যমূল্য-বাজার তদারকির ব্যবস্থা জোরদার করুন

দীর্ঘদিন ধরে অস্থিতিশীল বাজার পরিস্থিতি সাধারণ মানুষের অন্যতম দুর্ভোগ-বিড়ম্বনার কারণ হয়ে আছে। সরকার বাজার স্থিতিশীল রাখতে দৃশ্যত এ পর্যন্ত পদক্ষেপ কিংবা কৌশল কম অবলম্বন করেনি। কিন্তু কার্যত ফল ইতিবাচক নয়। ২০১১-২০১২ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেট পেশের পর বাজারে আরেক দফা তাপ লেগেছে।


এদিকে রমজান মাসও আসন্ন। গত রমজানের তিক্ত অভিজ্ঞতা আমাদের রয়েছে। সব কিছু মিলিয়ে রমজানে বাজার পরিস্থিতি কী দাঁড়ায় সে সম্পর্কে এখনই কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে ১০ জুন রাতে গণভবনে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ব্যবসায়ীদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে আসন্ন রমজান মাসে খাদ্যদ্রব্যের দাম না বাড়ানোর জন্য ব্যবসায়ীদের প্রতি আহ্বান জানিয়েনে। ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা প্রধানন্ত্রীর আহ্বানে ইতিবাচক সাড়া দিয়ে বলেছেন, তাঁরা রমজান মাসে খাদ্যদ্রব্যসহ নিত্যপ্রয়োজনীয় জিনিসপত্রের দাম বাড়াবেন না। প্রধানমন্ত্রীর আহ্বান এবং ব্যবসায়ী প্রতিনিধিদের প্রতিশ্রুতি আমরা অবশ্যই গুরুত্বের সঙ্গে আমলে নিতে চাই।
ব্যবসায়ী প্রতিনিধিরা দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখার জন্য সর্বাত্মক ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন বলেও প্রধানমন্ত্রীকে আশ্বাস দিয়েছেন। আমরা তাঁদের আশ্বাসে বিশ্বাস রাখতে চাই। কিন্তু অতীতে এমন আশ্বাস-প্রতিশ্রুতি বহুবার মিললেও কার্যত ফল ছিল এর বিপরীত, এও আমাদের অভিজ্ঞতায় আছে। সরকারসহ নানা মহল থেকে বাজার অস্থিতিশীল করার পেছনে একটি অসাধু ব্যবসায়ী মহল কিংবা সিন্ডিকেটের কারসাজির কথা ইতিমধ্যে অনেকবার আলোচিত হলেও সিন্ডিকেটের কাউকে এ পর্যন্ত শনাক্ত করা যায়নি। এটা সত্য, একটি অদৃশ্য অসাধু চক্র বাজারে দাপিয়ে বেড়াচ্ছে এবং নিজেদের আখের গোছাচ্ছে। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, সরকারের এতসব গোয়েন্দা সংস্থা তাদের চিহ্নিত করতে পারছে না কেন? কখনো কখনো আন্তর্জাতিক বাজারের অজুহাত দাঁড় করিয়ে সাধারণ মানুষকে সান্ত্বনা দেওয়ার প্রচেষ্টা হয়েছে। কিন্তু পর্যবেক্ষণে দেখা গেছে, আন্তর্জাতিক (আমদানিকৃত পণ্যদ্রব্যের ক্ষেত্রে) বাজারে দাম বাড়েনি এমন পণ্যদ্রব্যের দাম অভ্যন্তরীণ বাজারে হু হু করে বেড়েছে। ভোজ্য তেল নিয়ে তেলেসমাতি অব্যাহত আছে। কাজেই বাজার পরিস্থিতি স্থিতিশীল করতে হলে কিংবা নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যদ্রব্যের দাম সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রাখতে হলে সর্বাগ্রে সিন্ডিকেটের হোতাদের শনাক্ত করে তাদের বিরুদ্ধে দৃষ্টান্তমূলক পদক্ষেপ নিতে হবে। একই সঙ্গে টিসিবিকে কার্যকর করতে হবে। ১১ জুন কালের কণ্ঠে প্রকাশিত একটি প্রতিবেদন থেকে জানা গেল, গত এক বছরে এক হাজার কোটি টাকা চেয়ে যে টিসিবি ফুটো পয়সাও পায়নি, সেই প্রতিষ্ঠানকে দিয়েই দুই হাজার ৫০০ কোটি টাকার নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের মজুদ গড়ে তোলার পরিকল্পনার কথা অর্থমন্ত্রী তাঁর বাজেট বক্তৃতায় শুনিয়েছেন। আমরা জানি না এই বৈপরীত্যের অবসান কিভাবে ঘটবে এবং প্রকৃতপক্ষেই টিসিবি যথাযথ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে কি না। আমাদের স্মরণে আছে, প্রতিষ্ঠাকালের পর থেকে দীর্ঘদিন টিসিবি অভ্যন্তরীণ বাজারে ব্যাপক ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে সক্ষম হয় এবং সাধারণ মানুষ এর সুফলও ভোগ করে।
শেষ কথা হলো, রমজান মাসে ভোগ্যপণ্যের চাহিদা সংগত কারণেই বাড়ে। এ ক্ষেত্রে মজুদ গড়ে তুলতে কালক্ষেপণ না করে এখনই ব্যবস্থা নিতে হবে। সরবরাহ ব্যবস্থাপনাগত ত্রুটি সারতে হবে অতীতের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে। একই সঙ্গে বাজার তদারকির ব্যবস্থা জোরদার করা চাই। মানুষ এত কিছু শুনতে চাইবে কেন, তারা স্থিতিশীল বাজার চায়। আশ্বাস-প্রতিশ্রুতি-অঙ্গীকার এ পর্যন্ত কম ব্যক্ত হয়নি, কিন্তু মানুষ কোনো সুফল ভোগ করতে পারেনি। বাজার পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ সরকারের জন্য বড় চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে_এটি বিস্মৃত না হলেই মঙ্গল।

No comments

Powered by Blogger.