মেনে নেওয়া যায় কি 'হাফ-পাকিস্তান' by মুজাহিদুল ইসলাম সেলিম

যা আশঙ্কা করেছিলাম, অবশেষে তাই ঘটল। সংবিধানকে 'হাফ-পাকিস্তান' ধারায় সংশোধনের প্রক্রিয়া আরেক ধাপ এগিয়ে গেল। গত ৫ জুন বেগম সাজেদা চৌধুরীর নেতৃত্বে গঠিত সংবিধান সংশোধনবিষয়ক সংসদীয় বিশেষ কমিটি তার সুপারিশমালা চূড়ান্ত করল।


এসব সুপারিশের মধ্যে এরশাদ প্রবর্তিত 'রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম'-এর বিধান বহাল রাখার প্রস্তাব করা হয়েছে। জিয়াউর রহমান কর্তৃক সংযোজিত 'বিসমিল্লাহ...' অটুট রাখার কথা বলা হয়েছে। ধর্মভিত্তিক দল করাটা যেভাবে আদি সংবিধানের ৩৮ নম্বর ধারায় স্পষ্টভাবে অবৈধ বলে ঘোষিত হয়েছিল, সেই ধারাটি এমনভাবে সংশোধন করে পুনঃলিখনের কথা বলা হয়েছে, যাতে ধর্মভিত্তিক দলগুলো কাজ করার বৈধ অধিকার পায়। এসব সুপারিশ দ্বারা সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষ চরিত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার রাষ্ট্রীয় মূলনীতিকে খর্ব করার প্রস্তাব করা হয়েছে। তাই বাধ্য হয়ে বলতেই হচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকার হাফ-পাকিস্তানি ধারা প্রতিষ্ঠার পথে পা তুলেছে। শুধু ভুল নয়, একটি ঐতিহাসিক ভুল পদক্ষেপের দিকে সে পা বাড়াল। অনেকে হয়তো বলবেন, বেশি কড়া একটি মন্তব্য করে বসলাম! কথাটা বাস্তবতা ও যুক্তির বাইরে একটি বাড়তি মন্তব্য কেন নয়, সে কথাটিই ব্যাখ্যা করার চেষ্টা করব।
হাইকোর্ট ও পরে সুপ্রিম কোর্টের রায়ে কুখ্যাত পঞ্চম সংশোধনী বাতিল হয়েছে। বাহাত্তরের আদি সংবিধানের মূল ভিত্তি ফিরে এসেছে। এর পর বেশ কিছুদিন সরকার আদালতের চূড়ান্ত রায়ের ভিত্তিতে সংবিধান পুনর্মুদ্রণের কাজে গড়িমসি করে পার করে দেয়। অহেতুক প্রশ্ন তোলা হয় যে সংসদের অনুমোদন ও স্পিকারের স্বাক্ষর ছাড়া সংবিধান পুনর্মুদ্রণ করা আইনসিদ্ধ নয়। কারণ একমাত্র জাতীয় সংসদই সংবিধান সংশোধনের অধিকার রাখে। আদালত সংবিধান সংশোধন করতে পারেন না। সুতরাং তাঁর রায়ের ভিত্তিতে সংবিধান পুনর্মুদ্রণ আইনসিদ্ধ নয়। বিএনপি, জামায়াত প্রভৃতি দল আরো জোরের সঙ্গে একই যুক্তি তুলে ধরে। কিন্তু এই যুক্তির বিরুদ্ধে প্রায় সব বিজ্ঞ মহল এ কথা ধরিয়ে দিল যে আদালত তো কোনো সংবিধান সংশোধনীর রায় দেননি! তাঁরা তো শুধু অবৈধভাবে সম্পাদিত (সামরিক ফরমানবলে) এবং আদি সংবিধানের মূল ভিত্তির পরিপন্থী (চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতিবিরোধী) সংশোধনীগুলো অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করেছেন মাত্র! এ কাজ করার এখতিয়ার কেবল উচ্চ আদালতেরই আছে। জাতীয় সংসদের বা অন্য কারো সে এখতিয়ার নেই।
আদালতের রায় বাস্তবায়নের পথে সরাসরি অগ্রসর না হয়ে সরকার সেই রায়ের 'অসংগতিগুলো দূর করার' যুক্তিতে সংবিধান সংশোধন বিষয়ক বিশেষ সংসদীয় কমিটি গঠন করে। কমিটির অভ্যন্তরে কী আলোচনা হচ্ছে তা যেন বাইরে প্রকাশ হয়ে 'অহেতুক' বিতর্কের জন্ম না দিতে পারে_সেই যুক্তি দেখিয়ে কমিটির সদস্যদের বাইরে কোনো মন্তব্য করার ওপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়। আশ্চর্য ব্যাপার! দেশের সংবিধান নিয়ে নাড়াচাড়া করা হচ্ছে, অথচ দেশবাসী সেই প্রক্রিয়ায় অংশ নিতে পারবে না, এমনকি তা নিয়ে যাঁরা আলোচনা করছেন, তাঁদের আলোচনার বিষয়বস্তু জানার অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে! এত রাখঢাকের পেছনে রহস্যটা কী?
অতি সহসাই রহস্য উন্মোচিত হয়ে গেল। সর্বোচ্চ নেতৃত্ব জানিয়ে দিলেন যে কারো (বিএনপি, জামায়াত, জাতীয় পার্টি) দুশ্চিন্তার কারণ নেই, 'রাষ্ট্রধর্ম ইসলাম' থাকবে, ধর্মভিত্তিক দল নিষিদ্ধ করা হবে না, 'বিসমিল্লাহ...' তো থাকবেই, ইত্যাদি। এটাকেই আমি বলছি, হাফ-পাকিস্তান মতবাদের পুনঃআবির্ভাব। এই তত্ত্বের ইতিহাসের দিকে এবার দৃষ্টি দেওয়া যাক!
হাফ-পাকিস্তান তত্ত্বের উৎস আছে ১৯৪০ সালের বিখ্যাত 'লাহোর প্রস্তাব'-এ। সেই প্রস্তাবে ভারতের মুসলমানদের জন্য পৃথক কয়েকটি (?) রাষ্ট্র গঠনের দাবি উত্থাপন করা হয়। জিন্নাহ সাহেব ষড়যন্ত্র করে তাঁর টাইপিস্টকে দিয়ে কয়েকটি রাষ্ট্র (ংঃধঃবং)-এর 'ং' অক্ষরটি বাদ দিয়ে প্রিন্ট করেন। এই জোচ্চুরি না করলে পূর্বর্ বাংলার মুসলমানকে নিয়ে পৃথক মুসলিম রাষ্ট্র হতো। 'ফুল-পাকিস্তানের' যাঁতাকলে পিষ্ট না হয়ে বাঙালি মুসলমানরা তাহলে 'হাফ-পাকিস্তান' অর্জন করে মহাসুখে (!) থাকতে পারত।
হাফ-পাকিস্তানের তত্ত্ব বাজারে এসেছিল ১৯৭১ সালে সশস্ত্র মুক্তিযুদ্ধ চলাকালেও। সে সময় এই তত্ত্ব নিয়ে মাঠে নেমেছিল, ষড়যন্ত্র ও কূটচালের শিরোমণি, মার্কিন-অনুগত, আওয়ামী লীগেরই শীর্ষ স্তরের নেতা খন্দকার মোশতাক আহমেদ। 'হাফ-পাকিস্তান' প্রতিষ্ঠার এই ষড়যন্ত্র পরিচালিত হয়েছিল এমন একটি সময়ে যখন সাড়ে সাত কোটি বাঙালি ছিল তাদের স্বাধীন স্বদেশভূমিকে হানাদার পাকিস্তানি বাহিনীর দখল ও নারকীয় গণহত্যা থেকে মুক্ত করতে জীবনপণ সংগ্রামে অবতীর্ণ। লাখ লাখ তরুণ ছিল শত্রুসেনাদের বিরুদ্ধে অস্ত্র হাতে মৃত্যুঞ্জয়ী সশস্ত্র যুদ্ধে লিপ্ত। ইতিহাস তার প্রস্তুতি প্রায় সম্পন্ন করে এনেছিল পাকিস্তানের 'কবর' রচনা করে ভিন্নতর নবভিত্তির ওপর নতুন রাষ্ট্র বাংলাদেশের অভ্যুদয়ের বিজয় কেতন উড্ডীন করতে।
হাফ-পাকিস্তানের তত্ত্বটি নিছকই শুধু রাষ্ট্রীয় ভৌগোলিক একটি ব্যাপার ছিল না। কেবল লাহোর প্রস্তাবের বাস্তবায়ন অথবা শুধু 'স্বাধীনতা' বনাম 'কনফেডারেশনের' মধ্যকার তারতম্যের ব্যাপার ছিল না। হাফ-পাকিস্তানের ধারণাটি মূলত রাষ্ট্রের রাজনৈতিক, মতাদর্শিক ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসম্পৃক্ত একটি বিষয়। সেই বিষয়ের প্রতি এখন দৃষ্টি দেওয়া যাক।
একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধ ছিল পাকিস্তানের রাজনৈতিক, মতাদর্শিক ও চারিত্রিক রাষ্ট্রীয় মৌল-বৈশিষ্ট্যগুলোকে নেতীকরণ (negate) করে তার বিপরীতধর্মী বৈশিষ্ট্যসম্পন্ন একটি রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার সংগ্রাম। মুক্তিযুদ্ধ তার এই চরিত্রটি হঠাৎ অর্জন করেনি। এটি কোনো জাতীয়, আঞ্চলিক বা আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক কারিগরের হাতে কৃত্রিমভাবে সৃষ্ট আদর্শগত প্রাপ্তি নয়। এটি দিনের পর দিন, মাসের পর মাস, বছরের পর বছর তথা দশক-দশকের দীর্ঘকালীন গণসংগ্রামের ধারার নির্যাস। পাকিস্তান রাষ্ট্রের যেসব মৌল-চরিত্রকে নেতীকরণ করে এই নির্যাস সঞ্চিত হয়েছে, সেগুলো হলো_১. সাম্প্রদায়িক দ্বিজাতি তত্ত্ব ও ধর্মভিত্তিক রাজনীতি ও রাষ্ট্রচিন্তা; ২. অগণতান্ত্রিক, স্বৈরাচারী, সামরিক বাহিনীনির্ভর শাসনব্যবস্থা; ৩. বিশ্ব পরিমণ্ডলে সাম্রাজ্যবাদ, বিশেষত মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের তাঁবেদারি ও চূড়ান্ত ধরনের সাম্রাজ্যবাদনির্ভরতা; ৪. অভ্যন্তরীণভাবে শক্তিশালী পাঞ্জাবি একচেটিয়া পুঁজির প্রতিভূদের দ্বারা দুর্বলতর জাতির ওপর জাতিগত শোষণ ও নিপীড়ন; ৫. সামন্তবাদী ব্যবস্থার অবশেষগুলো সংরক্ষণ করে কায়েমি সামন্ত স্বার্থ সংরক্ষণ এবং ৬. একচেটিয়া লুটেরা পুঁজিবাদী শোষণব্যবস্থার দ্বারা শ্রমজীবী মানুষসহ আমজনতার ওপর শোষণ-বৈষম্যের জগদ্দল পাথর।
এসব প্রতিক্রিয়াশীল-অগণতান্ত্রিক-সাম্প্রদায়িক-শোষণভিত্তিক বৈশিষ্ট্যকে 'না' বলার মাধ্যমে রচিত ভিত্তির ওপর দাঁড়িয়ে পরিচালিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধ। প্রতিষ্ঠিত হয়েছে বাংলাদেশ।
বাংলাদেশের সেই ভিন্নতর রাজনৈতিক, মতাদর্শিক ও চরিত্রগত পরিচয় প্রতিফলিত হয়েছে ১৯৭২ সালে রচিত দেশের সংবিধানে এবং সেই সংবিধানে বর্ণিত চার রাষ্ট্রীয় মূলনীতি তথা জাতীয়তাবাদ, সমাজতন্ত্র, গণতন্ত্র ও ধর্মনিরপেক্ষতার আদর্শে। 'চাই না পাকিস্তান, চাই বাংলাদেশ'_মুক্তিযুদ্ধের সেই রক্তে গড়া গণপ্রত্যাশার মূর্ত প্রকাশই হলো এই চার নীতি। এর পূর্ণ প্রকাশই হলো 'নো-পাকিস্তান'। এর যেকোনো ধরনের অসম্পূর্ণ প্রকাশই হলো 'হাফ-পাকিস্তান'।
ভাবধারা, চরিত্র ও বৈশিষ্ট্যের বিচারে পাকিস্তান ও বাংলাদেশ হলো দুটি বিপরীতমুখী ও পরস্পরবিরোধী সত্তা। 'হাফ-পাকিস্তান'-এর কোনো জায়গা মুক্তিযুদ্ধে ছিল না, নেই, থাকতে পারে না। খন্দকার মোশতাক সে চেষ্টা করেছিল, কিন্তু তা মুক্তিযুদ্ধের অগ্রযাত্রার মুখে ছাই হয়ে গিয়েছিল। কিন্তু হাফ-পাকিস্তানের এজেন্ডাকে সেই '৭৫ সালে আবার ফিরিয়ে আনতে সক্ষম হয়। '৭১-এর পরাজিত আন্তর্জাতিক ও দেশীয় শক্তির সহায়তায় বঙ্গবন্ধুকে সপরিবারে নির্মমভাবে হত্যা করে, প্রতিক্রিয়াশীল রাজনৈতিক পটপরিবর্তন ঘটিয়ে, একাত্তরের হাফ-পাকিস্তানের এজেন্ডা পঁচাত্তরে কার্যকর করা হয়। জেনারেল জিয়াউর রহমান, জেনারেল এরশাদ দেশকে সেই হাফ-পাকিস্তানের সাংবিধানিক কাঠামো ও বাস্তবতায় আবদ্ধ করেছিল।
দেশের উচ্চ আদালত কুখ্যাত পঞ্চম ও সপ্তম সংশোধনী অবৈধ ও বাতিল ঘোষণা করায় সংবিধান আবার 'নো-পাকিস্তান'-এর ধারায় ফিরে এসেছে। কিন্তু আওয়ামী লীগ তার ওপর হাত লাগানোর কথা বলে কতক যৌক্তিক সংবিধান সংশোধনী প্রস্তাবের পাশাপাশি বেশ কিছু পশ্চাৎমুখী, আত্মসমর্পণমূলক সংশোধনী প্রস্তাব পাস করার পথ গ্রহণ করেছে। তারা সবচেয়ে বড় রকম আত্মসমর্পণের কথা বলছে 'ধর্মনিরপেক্ষতার' রাষ্ট্রীয় নীতির ক্ষেত্রে। ধর্মনিরপেক্ষতাকে রাষ্ট্রীয় মূলনীতি হিসেবে রাখার কথা বললেও এই মূলনীতির সঙ্গে সাংঘর্ষিক ও বিপরীতমুখী, জিয়া ও এরশাদ কর্তৃক প্রবর্তিত, কতক ধারা যুক্ত রাখার পথ আওয়ামী লীগ গ্রহণ করেছে। এগুলো সবই করা হবে, সুপ্রিম কোর্টের রায়ের ফলে বাহাত্তরের সংবিধানের মূলভিত্তি পুনঃপ্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে যে ঐতিহাসিক অগ্রগতি নিশ্চিত হয়েছিল, তা থেকে মৌলিক পশ্চাদপসরণ। এই পশ্চাদপসরণটা পাকিস্তানি ধারা অভিমুখে। জিয়াউর রহমান গোলাম আযমকে নাগরিকত্ব পাওয়ার সুযোগ করে দিয়েছিলেন। বাহাত্তরের সংবিধান দ্বারা যে জামায়াত অবৈধ ছিল এবং আদালতের রায়ে সেটা পুনর্বহালের ফলে আজ অবৈধ হয়ে যাওয়া জামায়াতকে কি শেখ হাসিনা বৈধতা পাওয়ার সুযোগ করে দেবেন? যে পথে তিনি যাচ্ছেন তাতে ইতিহাসের কলঙ্কের এ দায় কি তিনি এড়াতে পারবেন?
বিএনপির নেতারাও আওয়ামী লীগের দুর্বলতার কথা বুঝতে পেরে রাজনৈতিক চাল চেলেছেন। তাঁরা বেশ খুশি যে আওয়ামী লীগ আগে-ভাগেই 'ধর্মনিরপেক্ষতা'সহ অন্যান্য মূলনীতির ক্ষেত্রে অনেকটাই পিছিয়ে এসেছে। 'হাফ-পাকিস্তান' না হলেও 'কোয়ার্টার-পাকিস্তান' মুফতেই আদায় হয়ে গেছে। আওয়ামী লীগ এখন ব্যাকফুটে। চাপ দিয়ে তাকে আরো পিছিয়ে যেতে বাধ্য করার এখনই উপযুক্ত সময়। বিএনপি একদিকে উগ্র সাম্প্রদায়িক শক্তির আন্দোলনকে কাজে লাগাচ্ছে। অন্যদিকে 'সমঝোতার ভিত্তিতে সংবিধান সংশোধন করতে হবে' বলে দাবি তুলেছে। সংবিধান সংশোধন নিয়ে সমঝোতার কথাটি শুনতে ভালো। কিন্তু সংবিধানের মূলনীতির মৌলিক বিষয়গুলো কি 'সমঝোতার' 'গিভ অ্যান্ড টেক'-এর ধারায় নির্ধারণের কোনো বিষয়? অপ্রধান বা গৌণ বিষয় নিয়ে সমঝোতার মাধ্যমে মীমাংসায় উপনীত হওয়ার সুযোগ থাকলেও রাষ্ট্রের মূলনীতির প্রশ্নে তার সামান্যতম সুযোগও নেই। এ প্রশ্ন মুক্তিযুদ্ধের মধ্য দিয়েই চূড়ান্তভাবে ফয়সালা হয়ে গেছে।
শুধু ধর্মনিরপেক্ষতার নীতিকে কেন্দ্র করেই নয়, জাতীয়তাবাদ (তার সাম্রাজ্যবাদবিরোধী, আত্মনির্ভরশীলতা প্রভৃতি উপাদান), গণতন্ত্র (তার গণতান্ত্রিক বিকেন্দ্রীকরণের প্রক্রিয়া, নারীর ক্ষমতায়ন, ক্ষুদ্র জাতিগুলোর অধিকার, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা ইত্যাদি উপাদান) এবং সমাজতন্ত্র (বাজার অর্থনীতি ও পুঁজিবাদী বিশ্বায়ন থেকে বের হয়ে আসা, শক্তিশালী রাষ্ট্রীয় খাত ও অর্থনীতির পরিকল্পিত বিকাশের পথ গ্রহণ, শোষণ অবসানের লক্ষ্যে পদক্ষেপ প্রভৃতি উপাদান)_এসব নীতির ক্ষেত্রেও পাকিস্তানি যে ধারাকে 'কবর' দিয়ে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠা, সেই 'পাকিস্তানি ব্যবস্থা ও ধারা'কে কতক ক্ষেত্রে বহাল রেখে দেওয়ার প্রবণতা স্পষ্টভাবে লক্ষ করা যাচ্ছে। এসবই হলো হাফ-পাকিস্তানের ধারার কার্যকলাপ। এই পটভূমিতে সংবিধানের ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র প্রভৃতি রাষ্ট্রীয় মূলনীতিবিষয়ক ইস্যু থেকে দৃষ্টি অন্যদিকে সরানোর জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের ইস্যুতে অযথা ডেডলক সৃষ্টি করা হয়েছে। এটাকে একটা সচতুর পাতানো খেলা হিসেবে কিংবা প্রায় সমমনা (ধর্মনিরপেক্ষতা, সমাজতন্ত্র ইত্যাদি মূলনীতির প্রশ্নে) দুটি পক্ষের মধ্যে লুটপাটের ভাগবাটোয়ারার দ্বন্দ্বের প্রকাশ বলে মূল্যায়ন করে, তাতে তেমন ভুল হবে কি?
বাহাত্তরের সংবিধানের মূল ভিত্তির ক্ষেত্রে জিয়া-এরশাদের পথ ধরে পাকিস্তানি ধারার সঙ্গে আপস করে কিছুটা 'মুক্তিযুদ্ধ' কিছুটা 'পাকিস্তান'-এর ককটেল বানানোর চেষ্টা করাটা হবে ৩০ লাখ শহীদের সঙ্গে বিশ্বাসঘাতকতা করা। মুক্তিযুদ্ধের চেতনা-ধারায় অনুগত কোনো শক্তি ও ব্যক্তি এই বিশ্বাসঘাতকতা মেনে নিতে পারে না।
লেখক : সাধারণ সম্পাদক
বাংলাদেশের কমিউনিস্ট পার্টি

No comments

Powered by Blogger.