চিকিৎসাসেবার মান কোথায় গিয়ে ঠেকেছে?-ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল

হাসপাতাল পরিস্থিতি দেখতে গিয়ে স্বাস্থ্যমন্ত্রী নিজেই টের পেলেন ঢাকা মেডিকেলের চিকিৎসাসেবার দশা। তিনি সেখানে যাওয়ার আগেই মারা যান সড়ক দুর্ঘটনায় আহত এক ব্যক্তি। স্বজনদের অভিযোগ, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষের অবহেলার কারণেই এ মৃত্যু। এ নিয়ে সংঘাত-সংঘর্ষের ঘটনাও ঘটেছে হাসপাতালে।


স্বাস্থ্যমন্ত্রীকে পেয়ে ক্ষোভ ঝেড়েছেন নিহত ব্যক্তির স্বজনেরা। মন্ত্রী এ ঘটনা তদন্তের নির্দেশ দিয়েছেন। তদন্ত হোক, কিন্তু ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের যে অবস্থা, তাতে শুধু এ ধরনের ঘটনার তদন্ত করে কোনো ফল পাওয়া যাবে না, কারণ সমস্যা গুরুতর।
শুক্রবার সড়ক দুর্ঘটনায় ফরিদপুরে আহত হয়েছিলেন গাড়িচালক ইসমাইল হোসেন। তাঁকে সেদিন সন্ধ্যায়ই ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি করা হয়। তাঁর স্ত্রী অভিযোগ করেছেন, ইসমাইলকে হাসপাতালে আনার পর ওয়ার্ডের বারান্দায় একটি ট্রলিতে ফেলে রাখা হয়। সেই ট্রলিতেই পরদিন বিকেলে মারা যান তিনি। স্যালাইন ছাড়া আর কোনো চিকিৎসাই পাননি ইসমাইল। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের চিকিৎসাসেবার মান তবে কোথায় গিয়ে ঠেকেছে?
কর্তব্যরত চিকিৎসক চিকিৎসাসেবায় অবহেলার কথা অস্বীকার করেছেন। বলেছেন, রোগীকে আইসিইউতে ভর্তি করা দরকার ছিল, কিন্তু হাসপাতালে আইসিইউতে কোনো বিছানা খালি না থাকার বিষয়টি স্বজনদের জানানোর পরও তাঁরা রোগীকে অন্য কোথাও নিয়ে যায়নি। চিকিৎসকের পক্ষ থেকে যে সমস্যার কথা বলা হয়েছে, তা হয়তো অসত্য নয়। কিন্তু সড়ক দুর্ঘটনায় আহত একজন গাড়িচালকের স্বজনদের পক্ষে কোনো বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউতে রেখে চিকিৎসা করানো কি আদৌ সম্ভব?
মন্ত্রী নিজেই বলেছেন, এই হাসপাতালে জনবল কম, কিন্তু রোগীর ভিড় বেশি। এখানে আলো নেই, জায়গা নেই, চিকিৎসকেরা কাজ করবেন কী করে? ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল পরিস্থিতি সম্পর্কে মন্ত্রী যে অবহিত, তা স্পষ্ট। কিন্তু এই যে পরিস্থিতি, তা পরিবর্তন করার দায়িত্ব তো মন্ত্রী হিসেবে তাঁরই। ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মতো একটি প্রতিষ্ঠান যে এই চিকিৎসাসেবা, অবকাঠামো ও ব্যবস্থাপনা দিয়ে চলতে পারে না—এই সত্য উপলব্ধি করার পাশাপাশি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ নেওয়ার কাজটি শুরু করতে হবে এখনই।

No comments

Powered by Blogger.