ভুলপত্র

ভুলু মামা, ভুল করেও তো আমাকে স্মরণ করো না! অবশ্য ভুলে যাওয়ারই কথা। অতীতের ভুল শুধরে তুমি এখন পুরোদস্তুর ভদ্রলোক। ভালো চাকরি নিয়ে ভোলায় আছো। ভুলেও তোমার মুখ দিয়ে ভুল কথা বেরোয় না। তোমার প্রিয় সে গানটা কি ভুলে গেছ? আমি কিন্তু ভুলিনি। ‘ভুল মানুষের কাছে ভুল করে বারবার ফিরে এসেছি...’।


এদিকে আমি ভুলের সমুদ্রে হাবুডুবু খাচ্ছি। মাঝেমধ্যে মনে হয়, আমার জন্মটাই হয়েছে ভুল তিথিতে। সবকিছু দ্রুত ভুলে যাই। সেদিন দোকান থেকে চিনির বদলে ভুলে লবণ আনায় বাবার শোকজ খেলাম। ‘বাবা, ভুলে গিয়েছিলাম, এমন ভুল আর হবে না।’ আত্মসমর্পণ করতেই বাবা বললেন, ‘তোকে বাজারে পাঠানোই আমার মস্ত বড় ভুল হয়েছিল।’ পরীক্ষার খাতায় ভুল করে ‘ভুল’ বানান ‘ভূল’ লেখায় ম্যাডাম ডেকে সবার সম্মুখে ভুল ধরিয়ে দিলেন। ভাবলাম, এটাই বোধ হয় আমার ভুলের প্রায়শ্চিত্ত। কিন্তু না, নম্বর কাটতেও ম্যাডামের ভুল হয়নি। তুমি তো জানো, আলাভোলা হলেও আমার লেখার হাত মন্দ নয়। ভুল করে বি.স. যদি রস+আলোর ‘ভুল সংখ্যা’য় চিঠিটা ছাপিয়ে দেন, তবে বাবাকে ভুলিয়ে-ভালিয়ে কিছু টাকা নিয়ে একটা বই বের করব। ফুটপাতের ১০১টি ভুল বা ভুলোমনারাও ভুলবেন না জাতীয় সস্তা বই নয়। একেবারে উপন্যাস। নাম রাখব ভুলে গেছো দুঃখ নেই। তোমার যদি মনে হয়, আমি ভুল করছি, তাহলে সেটাই বরং ভুল। মানুষের জীবনে ভুল-চুক থাকেই। নিজে কী ভুল করছি, তা বুঝতে পারলে ভুলের পরিমাণ কমে যাবে। যে করেই হোক, ভুল-ত্রুটি কাটিয়ে উঠতে হবে। জীবনের চালে আর ভুল করা চলবে না। ভুল পথ বর্জন করে যেদিন অনেক বড় হব, সেদিন সবার ভুল ভাঙবে। আমার জন্য দোয়া করতে ভুলো না।
—ইতি তোমার আত্মভোলা ভাগনে।
 সোহেল নওরোজ
বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়, ময়মনসিংহ।

No comments

Powered by Blogger.