আবার হরতাল-জনদুর্ভোগ আর বাড়াবেন না

এক সপ্তাহের ব্যবধানে আবারও হরতাল ডাকা হয়েছে। এবার আর সকাল-সন্ধ্যা নয়, দুই দিনব্যাপী হরতাল। এর অর্থ এবারের হরতালে মানুষের দুর্ভোগও দ্বিগুণ হবে। গ্রামাঞ্চল থেকে শাকসবজি, তরিতরকারি, মাছ ও অন্যান্য পণ্য শহরে আসতে পারবে না, ফলে কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হবে।


আবার স্বল্প পরিমাণে যা আসবে, সেগুলো অনেক বেশি দাম দিয়ে কিনতে হবে শহরবাসীকে। আমদানি করা পণ্য চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় বা দেশের অন্য অঞ্চলে যেতে পারবে না, ফলে সেগুলোরও দাম বাড়বে। আর এসব পণ্যের দাম একবার বাড়লে পরে আর কমতে চায় না। অন্যদিকে বহু মানুষ জরুরি প্রয়োজনে গন্তব্যে যেতে পারবে না। কলকারখানা বা শিল্পপ্রতিষ্ঠানে উৎপাদন ব্যাহত হবে। ফলে দুই দিনের এ হরতালে নিশ্চিতভাবেই রাষ্ট্রের কয়েক হাজার কোটি টাকা ক্ষতি হবে। তাহলে কেন এ হরতাল? যেসব দাবিতে এ হরতাল ডাকা হয়েছে, সেসব দাবি বা প্রতিবাদ জানানোর অন্য সব পথ কি বন্ধ হয়ে গেছে? গতকাল শুক্রবার বিএনপির প্রেস ব্রিফিংয়ে দলের ভারপ্রাপ্ত মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর বলেছেন, 'একতরফাভাবে নির্দলীয় তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রথা বাতিল, সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা ও বিশ্বাস মুছে ফেলা, মুসলিম বিশ্বের সঙ্গে সুসম্পর্কের ধারা বিলুপ্তির অপচেষ্টা, গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংকট, পুঁজিবাজার ধ্বংস রোধে সীমাহীন ব্যর্থতা ও ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর অর্থ লুণ্ঠনের প্রতিবাদে এ হরতাল ডাকা হয়েছে।' তত্ত্বাবধায়ক সরকার দেশের সর্বোচ্চ আদালতে অবৈধ ঘোষণা করা হয়েছে। এর পরও বলা হয়েছে, সংসদ চাইলে আগামী দুই মেয়াদের জন্য এ প্রথা রাখতে পারে। কাজেই বিএনপির প্রথম করণীয় ছিল সংবিধান সংশোধনে গঠিত বিশেষ সংসদীয় কমিটির বৈঠকে উপস্থিত হয়ে তা রাখার দাবি জানানো। সেখানে তাদেরও একাধিক প্রতিনিধি রাখা হয়েছিল। তারা কমিটির কোনো বৈঠকে যায়নি। এখন সংসদ অধিবেশন চলছে, তারা সেখানে উপস্থিত হয়ে জোরেশোরে সে দাবি জানাতে পারত। কিন্তু তারা সংসদেও যাবে না বলে জানিয়ে দিয়েছে। সংবিধান থেকে আল্লাহর ওপর আস্থা কমানোর কোনো অপচেষ্টা থাকলে তারও প্রতিবাদ একই উপায়ে জানানো উচিত ছিল। তা না করে এখন হরতাল দিয়ে জনদুর্ভোগ বাড়িয়ে এই দাবি বা প্রতিবাদ জানানোটা কি খুব যুক্তিযুক্ত হচ্ছে? বিএনপির নেতাদের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে ভেবে দেখার অনুরোধ করছি।
গ্যাস-বিদ্যুৎ-পানি সংকট দীর্ঘদিন ধরেই চলে আসছে। বিগত জোট সরকারের আমলেও এসব সংকট তীব্র আকারে ছিল। বিদ্যুতের দাবিতে আন্দোলনরত কৃষকদের ওপর গুলিও চলেছিল। তখন সার সংকটও তীব্র ছিল। সারা দেশেই কৃষকরা রাস্তা অবরোধ করে প্রতিবাদ জানিয়েছিল। সে সময় বিরোধী দলে থাকা আওয়ামী লীগও এসব দাবিতে রাস্তায় নেমেছিল, হরতালও করেছিল। কিন্তু তখনো হরতাল কোনো সমাধান দেয়নি, আজও দেবে না। আর ৩৩ লাখ বিনিয়োগকারীর অর্থ লুণ্ঠনের প্রতিবাদে হরতাল ডাকাকে তারা কি সমর্থন করছেন? সম্ভবত না; কারণ হরতালে তাদের ব্যবসা বন্ধ থাকে, বিনিয়োগ আরো ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
আমরা আশা করি, আমাদের রাজনৈতিক দলগুলো হরতালের মতো ক্ষতিকর আন্দোলনের পুরনো ঐতিহ্য থেকে বেরিয়ে আসবে। তাদের রাজনীতির প্রধান লক্ষ্য হবে দেশ ও জনগণের কল্যাণ; ক্ষতি বা দুর্ভোগ নয়। সংসদে যে বিষয়গুলো সমাধানযোগ্য, সেগুলো সংসদেই সমাধান কাম্য।

No comments

Powered by Blogger.