প্রযুক্তিনির্ভর প্রতারণা-শক্ত হাতে ব্যবস্থা নিতে হবে এখনই

নিত্য জনসমাগম হয়, এমন অনেক জায়গায়ই চোখে পড়তে পারে একটি বিজ্ঞাপন। দেয়ালে কিংবা বাসের গায়ে বা তেমন সুবিধাজনক যেকোনো স্থানেও চোখে পড়ে এটি। স্বপ্নের মতো মনে হবে বিজ্ঞাপনের গায়ে চোখ রাখার পর। প্রায় বিনা বিনিয়োগেই হাজার হাজার টাকা আয়ের পথ!


কোটি বেকারের দেশে এমন লোভনীয় বিজ্ঞাপন দেখে যুবসমাজ প্রলুব্ধ হবে, এটাই স্বাভাবিক। প্রলুব্ধ যুবকরা তাই মা-বাবার কাছ থেকে কিংবা ধারদেনা করে কথিত প্রারম্ভিক সাড়ে সাত হাজার টাকা বিনিয়োগ করছে। প্রদান করছে এমএলএম কম্পানির হাতে। কিন্তু দুর্ভাগ্যজনক হচ্ছে, এই বিজ্ঞাপনের পেছনে রয়েছে বিশাল এক শুভংকরের ফাঁকি। প্রতারণার ফাঁদ হিসেবেই এগুলো চিহ্নিত হয়েছে ইতিমধ্যে। প্রতারক হিসেবে কতটা সফল এরা, তার প্রমাণ পাওয়া যায় কালের কণ্ঠে প্রকাশিত সংবাদ থেকে। একটি প্রতিষ্ঠানই পাঁচ শতাধিক কোটি টাকা হাতিয়ে নিয়েছে বলে ওই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে। এ ধরনের প্রতারকদের ব্যাপারটি সরকারেরও অজানা নয়। এমনকি এ বিষয়টি জাতীয় সংসদেও আলোচিত হয়েছে। স্বীকার করেছেন বাণিজ্যমন্ত্রী। এমএলএম প্রতিষ্ঠানের আওতায় প্রতারক প্রতিষ্ঠানগুলো অনুমোদনও গ্রহণ করেছে সরকারের সংশ্লিষ্ট বিভাগ থেকে। সুতরাং তাদের এই অবৈধ কাজের পেছনে এক ধরনের আইনানুগ ভিত্তি রয়েছে, এটাও স্বীকার করতে হবে। কিন্তু যে মুহূর্তে কোটি কোটি টাকা আত্মসাতের খবর প্রকাশিত হয় পত্রিকায়, তখনই মনে হতে পারে, এটা তো আসলে মানুষকে ফকির বানানোর একটি বড় ফাঁদ ছাড়া কিছুই নয়। মাল্টি লেভেল মার্কেটিং (এমএলএম) কম্পানির নামে এ ধরনের প্রতারণা হচ্ছে প্রকাশ্যেই। আবার তাদের ফাঁদে পড়ে সাধারণ মানুষের নিঃস্ব হওয়ার যে ঘটনা ঘটছে, তাও একবারে উপেক্ষা করার মতো সংখ্যায়ও নয়। ৬৯টি প্রতিষ্ঠানের কথা স্বয়ং বাণিজ্যমন্ত্রী জাতীয় সংসদে স্বীকার করেছেন। সুতরাং তাদের এই প্রতারণার ফাঁদটিকে চেনা যায় না কিংবা তাদের আইনের ঊধর্ে্ব থাকাকেও মেনে নেওয়া যায় না।
প্রতারণা করতে গিয়ে তারা আধুনিক প্রযুক্তির দ্বারস্থ হচ্ছে। তরুণদের মানসিকতাকে সহজে আকর্ষণ করার কৌশল হিসেবে তারা কম্পিউটার ব্যবহারকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে। বলা হয়েছে, যে কেউ কম্পিউটারে কিছু বিজ্ঞাপনে ক্লিক করলেই অর্থ আয়ের পথ পেয়ে যাবে। এমন একটি প্রতিষ্ঠানের ওপর ভিত্তি করে কালের কণ্ঠে সংবাদ প্রকাশিত হয়েছে। মিথ্যা তথ্য উপস্থাপন করে এভাবে মানুষের সঙ্গে প্রতারণা করার পর তাদের বিরুদ্ধে সরকার ব্যবস্থা গ্রহণ করুক_এই দাবি এই মুহূর্তে প্রবল। কিন্তু কাজটি খুব সহজও বলা যায় না, কারণ তাদের ক্ষমতা কিংবা শক্তি অবহেলা করার মতো নয়।
এ ধরনের প্রতিষ্ঠানগুলো আবার সমাজে প্রতিষ্ঠিত ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানকে তাদের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট করে নেয়। সংগতভাবেই বলা যায়, প্রভাবশালীদের প্রত্যক্ষ সহযোগিতা তারা পেয়ে থাকে।
এসব অবৈধ ব্যবসায়ীর বিরুদ্ধে অভিযোগ পাওয়ার পর নতুন কাউকে অনুমোদন দেওয়া হচ্ছে না সরকারের তরফ থেকে। কিন্তু যেগুলো প্রতিনিয়ত প্রতারণা চালিয়ে আসছে, তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে পারেনি সরকার। তাই এই মুহূর্তে শুধু নতুনদের আগমনের পথ বন্ধ নয়, পুরনোদের প্রতারণার পথও বন্ধ করতে হবে। তা না হলে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন প্রতারণার চাপে হারিয়ে যেতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.