প্রক্রিয়াটি নিয়েই প্রশ্ন আছে by মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মিঞা

আমি যতটুকু জানি রাষ্ট্রপতি কেবল প্রধান বিচারপতি এবং প্রধানমন্ত্রীকে নিয়োগ দিতে পারেন। অন্যান্য কোনো পদে নিয়োগদান কিংবা বিশেষ সিদ্ধান্ত প্রধানমন্ত্রী কর্তৃক অনুমোদিত হওয়ার পর তিনি কেবল তা চূড়ান্ত করতে পারেন। যে প্রক্রিয়ায় নির্বাচন কমিশনে নিয়োগ দেওয়া হলো, সেই প্রক্রিয়াটিই তো সংবিধানের দৃষ্টিতে প্রশ্নবিদ্ধ।


সার্চ কমিটি গঠনের এমন প্রক্রিয়া আমরা এত দিন দেখিনি বা শুনিনি। সরকারি দল বা জোটের পক্ষ থেকে বলা হচ্ছে, গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে তারা সমুন্নত রাখতে চায়। কিন্তু প্রশ্ন হচ্ছে, তা কি বিরোধী দল বা জোটকে উপেক্ষা করে? সুস্থ রাজনীতিচর্চার পথ এভাবেই কণ্টকাকীর্ণ হয়। এমন পথ বর্জন করা উচিত। সরকারি দল বা জোট বিরোধী দল বা জোটের সঙ্গে অথবা সংসদে যাদের প্রতিনিধিত্ব রয়েছে তাদের সঙ্গে আলোচনা করে বিষয়টি চূড়ান্ত করা যেতে পারত। কিন্তু যে প্রক্রিয়ায় কাজটি হলো, তা স্বাভাবিক নয় বলে মনে করি। অবশ্য যাঁরা নিয়োগপ্রাপ্ত হয়েছেন, আমি তাঁদের ব্যক্তিগত গুণাগুণ বা অন্য কোনো বিষয় নিয়ে কিছু বলতে চাই না। কারণ, আমরা তাঁদের সম্পর্কে বেশি কিছু জানি না। আমাদের বর্তমান সরকারি দল এত বেশি সংসদ সদস্য নিয়ে সরকার গঠন করেছে, ফলে তারা প্রথম থেকেই ধরাকে সরাজ্ঞান করে আসছে, যা অত্যন্ত দুর্ভাগ্যজনক। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রব্যবস্থায় এমন কর্মকাণ্ড কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য হতে পারে না। এমনকি সরকারি দলের বর্তমানে কেউ কেউ যাঁদের নাম অতীতে রাজনীতির অঙ্গনে শোনা যায়নি তাঁরা এত বেশি অসহিষ্ণু এবং অশালীন ভাষায় কথাবার্তা বলছেন, যা শ্রুতিকটু। বিশেষ করে, এই কারণে আমরা আরো বেশি উদ্বিগ্ন যে, বর্তমানে যিনি বিরোধীদলীয় প্রধান, তিনি যে কেবল কয়েকবার দেশের প্রধানমন্ত্রীর পদ অলংকৃত করেছেন তা-ই নয়, তিনি একজন নারীও। এই সমাজে আমরা নারীদের প্রতি সম্মান প্রদর্শনের ওপর বারবার গুরুত্বারোপ করে আসছি। কিন্তু রাজনীতির ওপর মহল থেকে যদি এর ব্যত্যয় ঘটে তাহলে সমাজে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়তে বাধ্য। নতুন নির্বাচন কমিশন নিয়ে যেসব আপত্তি উঠেছে, অর্থাৎ এর গঠন প্রক্রিয়া এবং যাঁরা নিয়োগ পেয়েছেন তাঁদের নিয়ে, এ ব্যাপারটি সরকারি মহল আমলেই নিচ্ছে না। এর ফলে রাজনীতির অঙ্গনে অস্থিরতা পরিলক্ষিত হচ্ছে এবং আগামী নির্বাচন নিয়ে একটা অনিশ্চয়তাও দেখা দিয়েছে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপ দিতে হলে বিরোধী দলের মতামত অবজ্ঞা বা উপেক্ষা করলে তা কখনোই সম্ভব হবে না। বর্তমান সরকারি দলের মনোভাব বরাবরই এমনটি পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা শুভ নয়। নির্বাচন কমিশন রাষ্ট্রের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ সাংবিধানিক প্রতিষ্ঠান। এ প্রতিষ্ঠানকে যদি কেউ বা কোনো মহল প্রশ্নবিদ্ধ করে তাহলে এর বিরূপ প্রভাব ভয়াবহ হতে বাধ্য। এমনটি তো শান্তিপ্রিয় কারোরই কাম্য হতে পারে না। পরমতসহিষ্ণুতা এবং পরমতকে মূল্য দেওয়াটাই গণতান্ত্রিক রাজনীতির প্রধান শর্ত। প্রশ্ন হচ্ছে, এই শর্ত কি মনে রাখা হচ্ছে? নির্বাচন কমিশনকে প্রশ্নবিদ্ধ করার দায় সরকার এড়াবে কী করে? মুখে মুখে গণতন্ত্রের কথা উচ্চারণ করলেই চলবে না, কার্যক্ষেত্রে এরও প্রমাণ দরকার। কোনো কোনো রাজনৈতিক দলের যদি নির্বাচন কমিশন নিয়ে প্রশ্ন থাকে তাহলে তা সুষ্ঠু, অবাধ, স্বচ্ছ নির্বাচনের ক্ষেত্রে অন্তরায় সৃষ্টি করবে। যতক্ষণ পর্যন্ত এ অবস্থা বিরাজ করবে ততক্ষণ বিরোধপূর্ণ পরিস্থিতি থাকবে। সরকারি মহলের দায় এ বিরোধ নিষ্পত্তির লক্ষ্যে গঠনমূলক পদক্ষেপ নেওয়া বিতর্ক সৃষ্টি করে কিংবা জিইয়ে রেখে এত বড় কাজ সম্পাদন করা কিভাবে সম্ভব? সবার কাছে গ্রহণযোগ্য ব্যবস্থাটাই তো কাম্য।

No comments

Powered by Blogger.