বাড়তি তেল খরচ করলে ভর্তুকিমূল্যে কেন?-ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্র

ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্রগুলোতে বাড়তি তেল খরচ হচ্ছে, কিন্তু তা কতটুকু বা কী মাত্রায় বাড়তি, সেটাই বড় বিবেচনা। দেখা যাচ্ছে, যে পরিমাণ বাড়তি তেল খরচ করছে বিদ্যুেকন্দ্রগুলো, তাকে কোনোভাবেই স্বাভাবিক বলা যাচ্ছে না। বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে সরকারকে এই জ্বালানি তেল আমদানি করতে হয় এবং ভর্তুকিমূল্যে তা বিদ্যুেকন্দ্রগুলো পেয়ে থাকে। ফলে এ ধরনের বাড়তি ব্যবহারের বিষয়টি একেবারেই অগ্রহণযোগ্য।


প্রথম আলোয় প্রকাশিত প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, গত এক বছরে ভাড়াভিত্তিক ও কুইক রেন্টাল বিদ্যুেকন্দ্রগুলোতে নির্ধারিত পরিমাণের চেয়ে ১২০ কোটি টাকার বেশি জ্বালানি খরচ হয়েছে। একটি কেন্দ্রে বিদ্যুত্ উত্পাদনের জন্য জ্বালানি খরচের নির্ধারিত যে মাত্রা থাকে, তার কিছু হেরফের হলেও মাত্রাতিরিক্ত হতে পারে না। সবচেয়ে বেশি ৫০ কোটি টাকার বাড়তি তেল খরচ দেখিয়েছে একটি প্রতিষ্ঠান, অপর একটি প্রতিষ্ঠানের বাড়তি তেল খরচ হয়েছে মাত্র ৭১ হাজার টাকার। এই সামঞ্জস্যহীনতা প্রমাণ করে, বড় ধরনের অনিয়ম ঘটছে জ্বালানি তেল ব্যবহারের ক্ষেত্রে। এটাকে নিছক অপব্যবহার বা অপচয় হিসেবে দেখার সুযোগ নেই।
ভাড়াভিত্তিক কেন্দ্রে এমনিতেই বিদ্যুত্ উত্পাদনের খরচ অনেক বেশি। এর পরও সরকারকে এই পথটি বেছে নিতে হয়েছিল অসহনীয় বিদ্যুত্-ঘাটতি সামাল দিতে। বৈদেশিক মুদ্রা খরচ করে আমদানি করা জ্বালানি তেলও সরকারকে ভর্তুকিমূল্যে দিতে হচ্ছে সেই বিবেচনা থেকেই। এখন সেই জ্বালানি তেল নিয়ে যদি নয়ছয় হয়, তবে সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেওয়ার বিকল্প নেই। কোনো কোনো বিদ্যুেকন্দ্রের মালিক বলেছেন যে যন্ত্রপাতি কিনে তাঁরা ঠকেছেন। যে রকম সার্ভিস পাওয়া যাবে বলে তাঁদের কাছে যন্ত্রপাতি বিক্রি করা হয়েছিল, তাঁরা তা পাচ্ছেন না। এ ক্ষেত্রে আমাদের বক্তব্য হচ্ছে, যেসব প্রতিষ্ঠান থেকে তাঁরা যন্ত্রপাতি কিনেছেন, সেগুলো মানসম্মত না হয়ে থাকলে সেই প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে তাঁদের বোঝাপড়া করতে হবে। আর একটি বিদ্যুেকন্দ্রের জন্য মানসম্মত যন্ত্রপাতি কিনতে পারা সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানটির প্রধান ও প্রাথমিক যোগ্যতা। সেটা করতে যদি তাঁরা ব্যর্থ হয়ে থাকেন, সে ক্ষেত্রে তো তাঁদের যোগ্যতা নিয়েই প্রশ্ন তুলতে হয়।
আমরা মনে করি, ভাড়াভিত্তিক বিদ্যুেকন্দ্রগুলোর এই বাড়তি তেলের জোগান দেওয়ার দায় কোনোভাবেই সরকার নিতে পারে না। আর এটা অনেকটা স্পষ্ট যে শুধু যান্ত্রিক বা কারিগরি কারণে এই বাড়তি খরচ হচ্ছে না। দুর্নীতি ও অনিয়ম ছাড়া এই পরিমাণ বাড়তি খরচ হওয়ার কথা নয়। পিডিবির এক কর্মকর্তা জানিয়েছেন, নির্ধারিত তেলের চেয়ে যে বাড়তি খরচ হচ্ছে, চুক্তি অনুযায়ী তার দাম কেটে নেওয়া হবে। এ ক্ষেত্রে সিপিডির নির্বাহী পরিচালক যথার্থই প্রশ্ন তুলেছেন, বাড়তি ব্যবহারের বিপরীতে যে টাকা কেটে নেওয়া হবে, তা কি জ্বালানি তেলের প্রকৃত দাম, নাকি ভর্তুকিমূল্য?
আমরা মনে করি, নির্ধারিত মাত্রার বাইরে যদি কোনো বিদ্যুেকন্দ্র বাড়তি তেল খরচ করে, তবে তা অবশ্য সেই প্রতিষ্ঠানটিকে বাজারমূল্যে বা তেলের প্রকৃত মূল্যে কিনতে হবে। আমরা এ ব্যাপারে সরকারের কঠোর ও জোরালো অবস্থান প্রত্যাশা করছি।

No comments

Powered by Blogger.