কেবল মেধার ভিত্তিতে শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে-বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের যাত্রা শুরু

অপূর্ব প্রাকৃতিক সৌন্দর্যময় দক্ষিণবঙ্গে যাত্রা শুরু করতে যাচ্ছে একটি নতুন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়—বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়। শিক্ষার্থী ভর্তির মাধ্যমে আনুষ্ঠানিকভাবে কার্যক্রম শুরু করতে ২১ সেপ্টেম্বর থেকে ২০ অক্টোবর পর্যন্ত ভর্তি ফরম সংগ্রহ করা যাবে বলে বিজ্ঞপ্তি প্রকাশ করা হয়েছে।
ভর্তি ফরম সংগ্রহ ও জমা দেওয়া—উভয় প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করা যাবে ইন্টারনেটের মাধ্যমে। ভর্তি পরীক্ষা শুরু হবে ২ ডিসেম্বর থেকে; সে লক্ষ্যে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ সব ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে বলে জানানো হয়েছে।
চারটি অনুষদ ও ছয়টি বিভাগ নিয়ে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করতে যাচ্ছে নতুন এই বিশ্ববিদ্যালয়। প্রথম শিক্ষাবর্ষে মোট ৪০০ শিক্ষার্থী ভর্তি হবে, শিক্ষকসংখ্যা হবে ২৪। তাঁদের মধ্যে সাতজনের নিয়োগ-প্রক্রিয়া চূড়ান্ত হয়েছে। অন্যদের নিয়োগ দ্রুতই সম্পন্ন হবে বলে আশা করা হচ্ছে। বরিশাল জিলা স্কুলের বহিঃক্যাম্পাসে অস্থায়ীভাবে শুরু হবে শিক্ষা কার্যক্রম। বিশ্ববিদ্যালয়টির নিজস্ব ক্যাম্পাস নির্মাণের জন্য জমি অধিগ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে; ২০১৩ সালের মধ্যেই সেখানে স্থায়ীভাবে ও বড় পরিসরে কার্যক্রম শুরু করা হবে বলে পরিকল্পনা রয়েছে।
বরিশালের ব্রজমোহন কলেজ একটি ঐতিহ্যবাহী শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান হিসেবে খ্যাত ছিল সারা দেশেই। সেখানে একটি পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার দাবি ছিল দীর্ঘদিনের। সে দাবি পূরণ হয়েছে এবং বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়ের কার্যক্রম শুরু হতে যাচ্ছে বলে বরিশাল বিভাগসহ দক্ষিণবঙ্গের মানুষ স্বভাবতই বেশ আনন্দিত। উচ্চশিক্ষা প্রতিষ্ঠান হিসেবে বিশ্ববিদ্যালয়টি যে সত্যিকারের এক মানুষ গড়ার পীঠস্থান হয়ে উঠতে পারে, সেটাই এখন সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।
প্রাথমিকভাবে অবকাঠামো নির্মাণ, পর্যাপ্ত শ্রেণীকক্ষ, গবেষণাগার, পাঠাগার, শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের আবাসন—এসব অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ এবং এই কাজগুলো দ্রুততার সঙ্গে করা প্রয়োজন। তবে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে শিক্ষক নিয়োগ। দেশের পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়গুলো, এমনকি প্রাচ্যের অক্সফোর্ডখ্যাত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ও অতীত ঐতিহ্য হারিয়ে হতাশাব্যঞ্জক পরিবেশে নিমজ্জিত। শিক্ষা, গবেষণা, পঠন-পাঠন, মননশীলতা-সৃজনশীলতার চর্চার পরিবেশ হারিয়ে গিয়ে সৃষ্টি হয়েছে কেমন এক অশিক্ষাপ্রতিষ্ঠানসুলভ বা মননবৈরী পরিবেশ। এর অনেক কারণের মধ্যে প্রধান যে কারণটি সবাই কমবেশি উপলব্ধি ও স্বীকার করেন, তা হচ্ছে বিশ্ববিদ্যালয় পরিচালনা ব্যবস্থা ও শিক্ষক নিয়োগের ক্ষেত্রে দলীয় রাজনৈতিক বিবেচনা। বরিশাল বিশ্ববিদ্যালয়কে এই প্রচলিত ধারার বাইরে প্রকৃতই একটি বিশ্ববিদ্যালয় হিসেবে গড়ে তুলতে হলে শুরু থেকেই দলীয় রাজনৈতিক দৃষ্টিভঙ্গি পরিহার করতে হবে। শিক্ষক নিয়োগ দিতে হবে সম্পূর্ণ মেধাভিত্তিক বিচার-বিবেচনা থেকে।

No comments

Powered by Blogger.