পোস্টকার্ড বিড়ম্বনা

শখ হিসেবে ক্রিকেট খেলার সঙ্গে চিঠি লেখার অভ্যাস আমার ছোটবেলা থেকে। রেডিও বা বিভিন্ন সংবাদপত্রে চিঠি লেখা এক ধরনের নেশা হয়ে আছে এখনো। আমি যখন সপ্তম শ্রেণীতে পড়ি তখন থেকে এ নেশার মধ্যে পড়ে যাই। প্রথম অবস্থায় রেডিওতে লেখার জন্য পোস্টকার্ড ব্যবহার করতাম।


কিন্তু আমি জানতাম না, কীভাবে পোস্টকার্ড বা চিঠি লিখতে হয়। প্রেরক বা প্রাপকের ব্যবহার সঠিকভাবে আমি জানতাম না। প্রতি সপ্তাহে বিজ্ঞাপন তরঙ্গে লিখতাম আর অনুষ্ঠানের দিন নিজের নাম শোনার জন্য অধীর আগ্রহে বসে থাকতাম। কিন্তু আমার নাম আর বলে না। কী যে করি। সঠিক উত্তর দেওয়ার পরও নাম না শুনতে পারলে খুব খারাপ লাগা শুরু করল। এভাবে তিন মাস চলে গেল। তবু আমার নাম শুনতে পারি না। স্কুলজীবনে বাঁচানো সামান্য টাকার সব ফুরাতাম এই চিঠির পেছনে, তবু কোনো কাজ হয় না। একদিন প্রথম আলোর পাঠকসংখ্যার ভোলানাথের মতো পোস্ট অফিসে ছুটলাম, আসলে আমার চিঠি না যাওয়ার কারণ কী, তা খতিয়ে দেখার জন্য। পোস্ট মাস্টার আমাকে যা বললেন, তা শুনে আমি তো থ হয়ে গেলাম। তাহলে আমি এত দিন কী করেছি?
প্রেরকের স্থানে প্রাপক আর প্রাপকের স্থানে স্থানীয় পোস্ট অফিসের নাম লিখতাম। তিনি বললেন, ‘তাহলে তোমার চিঠি যাবে কী করে। সব এই অফিসে পড়ে আছে।’ আমার এত দিনের সব লেখা বৃথা! মনে মনে বললাম, এই ভুল কি কেউ করে? এই ভুল এখনো মাঝেমধ্যে কাজ করে। প্রথম আলোর প্রায় প্রতিটি পাঠকসংখ্যায় লেখা পাঠাই কিন্তু ছাপা হয় না। এখন অবশ্য পোস্টকার্ড দুর্বল, তাই খামে বা ই-মেইল করে লেখা পাঠাই। লেখা যখন ছাপা না হয়, তখন মনের ভেতর পোস্টকার্ড বিড়ম্বনার কথা বারবার উঁকি মারে। কোথাও আবার ভুল করলাম নাকি? যদি এই লেখা না ছাপা হয়, তাহলে এই বিড়ম্বনা হয়তো থেকেই যাবে।
 মো. কোরবান আলী
আদাবাড়িয়া, কুমারখালী, কুষ্টিয়া।

No comments

Powered by Blogger.