নিয়মিত নজরদারি থাকতে হবে-সেতুর সুরক্ষাবেষ্টনীর নিরাপত্তা

কথায় বলে, ‘আগে গেলে বাঘে খায়, পিছে গেলে সোনা পায়’! সড়ক ও জনপথ বিভাগ বোধ হয় স্বর্ণ পাওয়ার লোভেই সেতুর রক্ষণাবেক্ষণের কাজ বিলম্বিত করে। না হলে ঢাকার দ্বিতীয় বুড়িগঙ্গা সেতুর বেশ কয়েকটি ভিত্তিস্তম্ভের চারপাশের সুরক্ষাবেষ্টনীগুলো ভেঙেচুরে যাওয়ার পরও তারা গা লাগাল না কেন? সেতুর ভিত্তিস্তম্ভগুলো ক্ষতিগ্রস্ত হয়ে পুরো সেতুই হুমকির মুখে পড়তে পারে বলে প্রথম আলোয় শনিবার প্রকাশিত খবরে আশঙ্কা করা হয়েছে।


তিন দিন আগে প্রথম আলোর প্রতিবেদক সরেজমিনে লক্ষ করেন যে বেষ্টনীর চারপাশ ভেঙে রডগুলো বেরিয়ে পড়েছে। এটা আবার ট্রলারচালকদের জন্য হয়েছে পোয়াবারো। তারা সেই সব রডে ট্রলার বেঁধে রেখে ভাঙা বেষ্টনীগুলোকে আরও ভাঙার ব্যবস্থা করছে। আর লঞ্চ-জাহাজ-ট্রলারের ধাক্কা তো চলছেই।
এই দুরবস্থার জন্য দায়ী কে? সেতুর ইজারাদারের দায়িত্ব কেবল টোল আদায় ও সেতুর উপরিভাগ পরিষ্কার-পরিচ্ছন্ন রাখা। সেতুর নিরাপত্তা দেখা ও রক্ষণাবেক্ষণের দায়িত্ব সড়ক ও জনপথ অধিদপ্তরের। এই সম্পাদকীয় লেখার আগে গতকাল ওই সংস্থার অতিরিক্ত প্রধান প্রকৌশলীর সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি জানান, সেতু দেখাশোনা করে রাখা, ক্ষয়ক্ষতি হলে মেরামত ও রক্ষণাবেক্ষণের জন্য নিয়ম অনুযায়ী সংশ্লিষ্ট প্রকৌশলীদের দায়িত্ব দেওয়া আছে। কিন্তু তাঁদের লোকবল কম। ফলে রক্ষণাবেক্ষণের কাজে কিছু ঘাটতি থাকতে পারে। খবর প্রকাশের পর গতকালই সেতুর ক্ষয়ক্ষতি দেখার জন্য প্রকৌশলীদের সেখানে পাঠানো হয়েছে। প্রয়োজনীয় মেরামত করা হবে বলে তিনি জানিয়েছেন।
লঞ্চ-ট্রলারগুলো চলার পথে যেন সেতুর ভিত্তিস্তম্ভ বা তার চারপাশের বেষ্টনীতে ধাক্কা না লাগে, সেটা দেখার দায়িত্ব অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন সংস্থার ওপরও বর্তায়। তারা কী করে? নদীপথে চলাচলের নিয়ম লঙ্ঘনের দায়ে জলযানচালকদেরও তো শাস্তি হওয়া উচিত।
আমরা দেখেছি, রক্ষণাবেক্ষণ ও তদারকির অভাবে মেঘনা সেতু দুটি কালক্রমে ব্যবহারের অনুপযোগী হয়ে পড়ছে। এখন জরুরি ভিত্তিতে সেতুতে ভারী যান চলাচল বন্ধ রেখে বিকল্প ফেরি চালু করতে হয়েছে। এতে পণ্য ও যাত্রী পরিবহনে সময় ও ব্যয় বৃদ্ধি পায়; অর্থনীতির ক্ষতি হয়।
সেতু রক্ষণাবেক্ষণে যথাযথ গুরুত্ব দিতে হবে। প্রয়োজনীয় লোকবল ও তহবিল জোগান রাখতে হবে। যেন যেকোনো ছোটখাটো ত্রুটি যথাসময়ে শনাক্ত করে মেরামতের ব্যবস্থা করা যায়।

No comments

Powered by Blogger.