সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতি গড়ে উঠুক by ড. খুরশীদা বেগম

প্রথম কথা হলো, বাংলাদেশে গোঁজামিলের অথবা জগাখিচুড়ির রাজনীতি বিদ্যমান। এখানে সুস্থ রাজনৈতিক সংস্কৃতির আবহ গড়ে ওঠেনি এবং ভবিষ্যতের ক্ষেত্রেও অশনিসংকেত ঝুলছে। এমতাবস্থায় প্রশ্ন হচ্ছে_রাজনীতিতে অসংলগ্ন সংগঠনগুলোকে আমরা রাজনৈতিক দল বলছি কেন? রাজনীতির শাস্ত্র কি সেটি সমর্থন করে? বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্বাচন


কমিশন নির্বাচন পরিচালনা করার ক্ষেত্রে একমাত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে সক্ষম হচ্ছে। মৌলিক প্রতিষ্ঠান হিসেবে এই সংস্থাটি বিগত চার দশকেও আমাদের দেশে কেন শক্তিশালী রূপ পায়নি, সেটাই বড় প্রশ্ন। এর একটা কারণ হচ্ছে উপর্যুপরি সৈনিক বা সেনাপতিদের শাসন। আরো একটি কারণ হলো_তাদের বেসামরিকীকরণ ঠেকাতে প্রকৃত রাজনৈতিক দলগুলোর ব্যর্থতা। পাকিস্তান আমলে রাজনীতিকরা এই কাজটি সফলভাবেই সমাপ্ত করতে সক্ষম হয়েছিলেন। স্বাধীন বাংলাদেশের রাজনীতির ক্ষেত্রে যেসব ব্যর্থতা পরিলক্ষিত হচ্ছে, এই ব্যর্থতারও নানা কারণ আছে। প্রকৃত রাজনৈতিক দলগুলোর অন্যতম কাজ হলো জনগণকে রাজনৈতিক শিক্ষা ও দীক্ষা প্রদান করা। সেই ক্ষেত্রে তারা ব্যর্থ হয়েছে। এই ব্যর্থতার সুযোগে জগাখিচুড়ির রাজনীতির বিস্তার ঘটেছে এবং দেশের রাজনৈতিক অঙ্গনে শৃঙ্খলা ভেঙে পড়েছে। এই ভেঙে পড়ার কারণেই রাজনীতির ক্ষেত্রে সৃষ্টি হয়েছে হ-য-ব-র-ল পরিস্থিতির। স্বাধীনতার মাত্র কিছুদিন পর থেকেই বাংলাদেশবিরোধী ষড়যন্ত্র ক্রমেই পোক্ত হতে থাকে এবং ধর্মীয় আধিপত্যবাদিতাসহ নানা রকম নেতিবাচক কর্মকাণ্ড বাড়তে থাকে যা প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলো ঠেকাতে পারেনি। এখন সংলাপের কথা হচ্ছে; কিন্তু সংলাপের বিষয় কী? একটি অরাজনৈতিক সরকারের অধীনে আগামী জাতীয় নির্বাচন সম্পন্ন করার বিষয়টিকে সামনে রেখেই সংলাপের কথা উঠেছে। প্রশ্ন হচ্ছে, কার সঙ্গে কার সংলাপ হবে? এটি তো পুরনো বিষয়। সংলাপের সুফল নিয়েও শঙ্কা আছে। সংলাপের আগে ঠিক করে নিতে হবে আমাদের রাজনীতিকদের আস্থার বিষয়টি। আস্থার সংকট এখানে প্রকট বিধায়ই নানা রকম নেতিবাচকতার জন্ম হচ্ছে। রাজনীতি অবশ্যই সর্বাগ্রে প্রকৃত রাজনৈতিক দলগুলোর নিয়ন্ত্রণে আসতে হবে। রাষ্ট্র ও সমাজের জন্য রাজনীতি ভিন্ন বিকল্প কিছু নেই। রাজনীতির সংজ্ঞা যাঁরা উপেক্ষা করেছেন কিংবা যেসব অগণতান্ত্রিক শাসক এ দেশের রাজনীতির অঙ্গনে দাপিয়ে বেড়িয়ে সব শুভচেতনার মূলে কুঠারাঘাত করেছেন, তাঁদের বর্তমান কর্মকাণ্ডও ভবিষ্যতের শঙ্কাকে আরো বেশি পুষ্ট করছে। নির্বাচন কমিশনকে শক্তিশালী প্রতিষ্ঠান হিসেবে দাঁড় করাতে পারলে সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে আর কি কোনো প্রতিবন্ধকতা থাকতে পারে? এই প্রশ্নের উত্তর এবং দৃষ্টান্ত আমাদের সামনেই আছে। গণতন্ত্রকে প্রাতিষ্ঠানিক রূপদানের কথা বলা হবে, কিন্তু সে পথটি হবে একটি অগণতান্ত্রিক ব্যবস্থার মধ্য দিয়ে তৈরি_এটা বিস্ময়কর নয় কি? ব্যক্তিস্বার্থ, ভোগবাদিতা, দুর্নীতি ইত্যাদি অসংলগ্ন সংগঠনগুলোর মূল পুঁজি এবং এই সংগঠনগুলোও এ দেশের রাজনীতিতে জায়গা করে নিয়েছে। এর ফলে রাজনীতির ক্ষেত্র কলুষিত হয়েছে। নির্বাচন অনুষ্ঠানের নামে এ দেশে প্রহসন কম হয়নি। সংলাপ যদি হয়, সেগুলো সামনে রাখা জরুরি। প্রকৃত রাজনীতিকদের যেমন দেশ-জাতির খুব দরকার, তেমনি দরকার প্রকৃত প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলগুলোর রাজনীতি শক্তিশালীকরণও।
গ্রন্থনা : ফরহাদ মাহমুদ ও দেবব্রত চক্রবর্তী বিষ্ণু

No comments

Powered by Blogger.