তরুণ লেখকদের পাঠশালা by আল-আমিন হক

ছোটবেলায় দু-এক ছত্র কবিতা লেখেননি এমন কেউ কি আছেন? অনেক খুঁজে দু-একজন হয়তো পাওয়া যেতে পারে, কিন্তু না পাওয়ার পাল্লাই ভারী হবে। লেখক হওয়ার পথ আরও প্রশস্ত ও মসৃণ করে দিতে বাংলা একাডেমী তরুণ লেখকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে যাচ্ছে।


শীত শেষে বসন্তের ঝরাপাতা মাড়িয়ে বেলা ১১টার মধ্যেই ঢাকার বাংলা একাডেমীর আঙিনা মুখর করে তোলেন সম্ভাবনাময় তরুণ লেখকেরা। কেউ চুপচাপ বসে আছেন; আবার কেউ নিজের কবিতা শোনাচ্ছেন অন্যদের। আর যাঁরা শুনছেন, তাঁরা সেই কবিতার ব্যবচ্ছেদ করতেও ছাড়ছেন না।
তরুণ লেখকদের একজন মাহমুদউল্লাহ বলেন, ‘প্রথম দুটো ক্লাস করেই বুঝে গেছি এ ধরনের প্রশিক্ষণ আমাদের অনেক প্রয়োজনীয়।’ তাঁর কথা যে শতভাগ সত্য, তাতে দ্বিমত করলেন না কেউ। আর করবেনই বা কী করে, এখানে যে দেশের নামকরা লেখকেরা প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকেন।
এই প্রশিক্ষণ কোর্সের মেয়াদ ছয় মাস। প্রাণবন্ত এই প্রশিক্ষণে নিজেকে শামিল করতে চাইলে বয়স ত্রিশের কম হওয়া চাই। শিক্ষাগত যোগ্যতা হতে হবে স্নাতক পাস অথবা তার সমপর্যায়ের। তবে বিশেষ ক্ষেত্রে তা শিথিলযোগ্য। কবির ক্ষেত্রে দেশের স্বীকৃত সাহিত্য-সাময়িকীতে কমপক্ষে ২০টি কবিতা প্রকাশিত হতে হবে। প্রবন্ধকার, গল্পকার, নাট্যকার ও কথাসাহিত্যিকের ক্ষেত্রে যথাক্রমে ১০টি প্রবন্ধ, ১০টি ছোটগল্প, দুটো নাটক বা দুটো উপন্যাস প্রকাশিত হতে হবে। ছয় মাস মেয়াদি এই প্রশিক্ষণে প্রত্যেক প্রশিক্ষণার্থীকে বাংলা একাডেমী থেকে প্রতি মাসে চার হাজার ৫০০ টাকা করে দেওয়া হয়।
ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতি ও পত্রিকা বিভাগের পরিচালক মোহাম্মদ আবদুল হাই জানান, সরকারের বরাদ্দকৃত অর্থ থেকে এই প্রশিক্ষণের খরচ দেওয়া হচ্ছে। তিনি বলেন, ‘আমাদের পঞ্চম ব্যাচ চলছে। আমরা এসব লেখককে বাংলা একাডেমী থেকে যেকোনো বিষয়ে সব সময় অগ্রাধিকার দেব। বাংলা একাডেমীর উত্তরাধিকার সহ যে পাঁচটি পত্রিকা আছে, তাতে তাঁরা নিয়মিত লিখতে পারবেন।’
এ ব্যাপারে কথা হয় বাংলা একাডেমীর মহাপরিচালক শামসুজ্জামান খানের সঙ্গে। তিনি বলেন, ‘লিখতে হলে একটা সত্যিকারের ভিত্তি দরকার। আর সেই ভিত্তি গঠনে আমরা সহায়তা করছি। এই প্রশিক্ষণ থেকে আমরা যদি ভালো ফল পাই, তাহলে ভবিষ্যতে তা অব্যাহত রাখব।’

তরুণ লেখকদের প্রেরণায়
প্রেরণার উৎস শক্তি জোগালে স্বর্ণশিখর ছোঁয়া সহজ হয়। আর তাই তরুণ লেখকদের আরও এগিয়ে নিয়ে যেতে এইচএসবিসি ব্যাংক ও বাংলা সাহিত্যপত্রিকা কালি ও কলম মিলে প্রতিবছর পুরস্কার দিয়ে থাকে। ‘কালি ও কলম তরুণ কবি ও লেখক পুরস্কার’ নামের এই প্রয়াস তরুণ লেখকদের স্বপ্ন ছোঁয়ার পালক। আর বাংলা একাডেমীর মতো প্রশিক্ষণের ঘরগুলোর সদর দরজা যত উন্মুক্ত হবে, সাহিত্যসমুদ্রে ভাসতে থাকা তরুণ লেখকদের তরণীর তীর খুঁজে পাওয়া তত সহজ হবে।

No comments

Powered by Blogger.