স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর বক্তব্যের সঙ্গে বাস্তবের মিল নেই-নিরাপত্তাহীন জনজীবন

স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী সাহারা খাতুন মঙ্গলবার কেরানীগঞ্জে নির্মাণাধীন কারাগার পরিদর্শনকালে আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়েছে বলে যে বক্তব্য দিয়েছেন, তা সত্য হলে দেশবাসী আশ্বস্ত হতে পারত। দুর্ভাগ্যজনক হলো, বাস্তবতার সঙ্গে মন্ত্রীর বক্তব্যের কোনো মিল নেই। স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যখন এসব কথা বলছেন, তখন দিনদুপুরে রাজধানীতে ছিনতাই, ডাকাতি এবং বিভিন্ন স্থানে
গণপিটুনিতে মানুষ খুনের ঘটনা ঘটছে। সবচেয়ে উদ্বেগজনক যে, অনেক অপরাধের ঘটনায় পুলিশ সদস্যদের জড়িত থাকার প্রমাণ পাওয়া গেছে।
ঈদ সামনে রেখে সারা দেশেই অপরাধী চক্র বেপরোয়া হয়ে উঠেছে। কিন্তু এর বিরুদ্ধে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের তেমন সক্রিয়তা লক্ষ করা যাচ্ছে না। সোমবার রাজধানীর মাতুয়াইলে একটি তৈরি পোশাক কারখানার হিসাবরক্ষককে গুলি করে প্রায় ৩৭ লাখ টাকা ছিনতাই করে নিয়ে যায় সন্ত্রাসীরা । পুলিশের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, ব্যাংক থেকে অর্থ উত্তোলন করার আগে জানানো হলে তারা নিরাপত্তার ব্যবস্থা নেবে। কিন্তু আবাসিক ভবন, দোকানপাটে ডাকাতি, পরিবহন খাতে চাঁদাবাজির ঘটনা তো আগাম জানানোর উপায় নেই। সেখানে মানুষ কাকে খবর দেবে? কার কাছে ভরসা রাখবে? আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর নিষ্ক্রিয়তায় মানুষ নিরাপত্তাহীন জীবন যাপন করছে।
আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে বলে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী যে দাবি করেছেন, তার ভিত্তি কী? থানায় মামলার পরিসংখ্যান দেখে আইনশৃঙ্খলার অবনতি বা উন্নতি বোঝা যাবে না। অনেক সময় থানা-পুলিশ মামলা নেয় না, মানুষও হয়রানির ভয়ে থানামুখো হতে চায় না। এর অর্থ এই নয় যে দেশে অপরাধের ঘটনা কমেছে।
পুলিশ প্রকৃত অপরাধীদের পাকড়াও করতে না পারলেও আমিনবাজারে গণপিটুনিতে ছাত্র হত্যায় কিংবা কোম্পানীগঞ্জে কিশোর মিলন হত্যায় তারা সহায়তা করছে। পুলিশ সদস্যদের কাজ কি গণপিটুনিতে সহায়তা করা, না উচ্ছৃঙ্খল মানুষকে নিবৃত্ত করা? আইনশৃঙ্খলা রক্ষায় নিয়োজিত একটি প্রশিক্ষিত বাহিনীর সদস্যরা কীভাবে বেআইনি কাজে লিপ্ত থাকতে পারে? তাদের বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগগুলো হালকা করে দেখার সুযোগ নেই। যারা এসব অপরাধ করেছেন, তাঁদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে—জনগণ সেটাই দেখতে চায়।
যেখানে ছিনতাইকারী ও চাঁদাবাজদের সঙ্গে থানা-পুলিশের দহরম-মহরম থাকে, সেখানে মানুষ স্বভাবতই পুলিশের কাছে যেতে চাইবে না। মোহাম্মদপুর এলাকায় নির্মাণাধীন বাড়ির মালিক-কর্মচারীরা এ রকম অভিযোগ করে কোনো ফল পাননি। বরং চাঁদাবাজেরা থানায় নিয়মিত মাসোহারা দেয় বলে জানিয়েছেন ভুক্তভোগীরা।
এ অবস্থায় স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর ‘আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে’ বক্তব্য ভুল বার্তা পৌঁছে দেবে জনগণের কাছে। এতে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা যেমন আত্মপ্রসাদে ভুগবে, তেমনি অপরাধীরা হয়ে উঠবে আরও বেপরোয়া। অতএব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির উন্নতি হয়েছে—এই মুখস্থ কথা বারবার না আউড়িয়ে স্বরাষ্ট্রমন্ত্রীর উচিত অপরাধ ও অপরাধীদের দমনে তাঁর পুলিশ বাহিনীকে আরও সক্রিয় করা। সত্যি সত্যি যদি আইনশৃঙ্খলার উন্নতি হয়, মানুষ সরকারকে বাহবা দেবে, এভাবে নিজের ঢাক নিজে পেটানোর প্রয়োজন পড়বে না।

No comments

Powered by Blogger.