বিদ্যমান পরিস্থিতি ও যুদ্ধাপরাধীদের বিচার by ডা. এম এ হাসান

মহাজোট সরকার ক্ষমতার তিন বছর অতিক্রমের পর বর্তমান সময়ে নানা সংকট ও অস্থিরতার মধ্য দিয়ে বিপদসংকুল পথ অতিক্রম করছে। ইতিমধ্যে বিপুল ভোটে বিজয়ী সরকার নানা কারণে জনঅসন্তোষের শিকার হচ্ছে। সেই সঙ্গে তারা মরমে মরমে ভাটির টান অনুভব করছে।


এ সরকার অনেক বৈপ্লবিক তথা ভালো কাজ করেছে, তেমনি ভয়াবহ অবিমৃশ্যকারিতার কারণে অনাবশ্যকভাবে বিতর্কিত হয়ে জনস্বার্থকে বিপন্নও করেছে। সরকারের ইতিবাচক অর্জনগুলো মুখ্যত শিক্ষা ও কৃষিখাতে। এ ছাড়া কৃষিবান্ধব তথা নারীবান্ধব অসংখ্য নীতি প্রণয়ন ছাড়াও মুক্তিযুদ্ধের স্বপ্ন বাস্তবায়নে অনেক ইতিবাচক কাজ করেছে সরকার। অর্থ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ ব্যাংক এবং কৃষি ব্যাংকের কৃষিবান্ধব নীতিগুলো এক অর্থে বৈপ্লবিক।
আইন মন্ত্রণালয় যেভাবে কাজ করতে চেয়েছে, সেভাবে না করতে পারলেও নানা ধরনের সংস্কারসাধনে সফল হয়েছে। সেই সঙ্গে যুদ্ধাপরাধ ও মানবতাবিরোধী অপরাধীদের বিচারের বিষয়টিকে দৃশ্যমান করার কৃতিত্ব তাদের। তবে বিকল্প বিচার বা Transitional justice systems তৃণমূল পর্যায়ে নিতে এবং তা কার্যকর করার বিষয়টি এখন সফলতার মুখ দেখেনি। এ বিষয়ে আইনমন্ত্রীর আন্তরিকতার ও উদ্যোগের অভাব নেই। অনেক ভালো কাজ তিনি করতে চান এবং ন্যায় প্রতিষ্ঠিত করতে চান। তার পরও তিনি অদৃশ্য সুতোয় বাঁধা। হয়তো এ সব কারণে বিচার বিভাগের বিকেন্দ্রীকরণ এবং ফৌজদারি আইনের নানা সংস্কার অদ্যাবধি সম্ভব হয়নি। এ ছাড়া মানবতাবিরোধী অপরাধে বিচারকে তৃণমূল পর্যায়ে নেওয়াসহ এর প্রকৃত লক্ষ্য স্পষ্ট করা সম্ভব হয়নি। এ বিচারে সাক্ষী সুরক্ষা আইনটি দৃশ্যমান ও কার্যকর না হওয়ায় নানা মানবিক সংকট ও বিপত্তি হচ্ছে। এ সব ব্যর্থতার মধ্যে বিচারটি যে চলমান এটাই অনেক পাওয়া। মুখ্য অপরাধী পাকিস্তানিদের অপরাধ নিবন্ধন এ বিচারের মাত্রা ও গুরুত্ব বাড়াতে পারে।
সাম্প্রতিক সময়ে ওবায়দুল কাদের যোগাযোগ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে এসে যে ধরনের কাজ করছেন তা প্রথম থেকে হলে সরকারের জনপ্রিয়তা যেমন অনেক উচ্চে থাকত তেমনি জনদুর্ভোগও কম হতো। প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপে বিকল্প শক্তির বিকাশ হচ্ছে। সোলার বিদ্যুৎ এবং বায়োগ্যাস প্রকল্পগুলোর ব্যাপক বিস্তার হলে দেশে বিশাল বিপ্লব হয়ে যাবে।
প্রধানমন্ত্রীর উদ্যোগে স্থানীয় সরকারগুলো সত্যিকার অর্থে স্বশাসিত এবং কার্যকর হলে দেশের উন্নয়ন তুলনামূলকভাবে দৃশ্যমান হবে। এতে গণতন্ত্রই শক্তিশালী হবে। গণতন্ত্রের শত্রু তথা লুটেরাতন্ত্রের প্রতিভুরাই এই ভালো কাজে বাধা দিচ্ছে।
সুপেয় পানির জন্য মেঘনাসহ হাওরের পানি ব্যবহার এবং উজানে জলাধার নির্মাণে সেনাবাহিনীকে সম্পৃক্ত করা গেলে অনেক ইতিবাচক ফলাফল আসতে পারে। কিন্তু এসব ভালো কথা প্রধানমন্ত্রীকে কে বলবে? কাভার্ড পদ্ধতিতে কয়লা উত্তোলনসহ জ্বালানি হিসেবে তরল হাইড্রোজেন বেছে নিলে অনেক সমস্যা সমাধান হতে পারে। বায়ুদূষণ রোধে 'মালে ঘোষণা' অনুসরণসহ বিপুলসংখ্যক গাছ রোপণ, পরিবেশদূষণ রোধসহ ব্যাপক কর্মসংস্থান সৃষ্টি করতে পারে।
প্রধানমন্ত্রী শতভাগ দেশপ্রেমিক হিসেবে অনেক কিছুই করতে চেয়েছেন; কিন্তু স্বপ্ন ও বাস্তবতার মধ্যে একটা দূরত্ব রয়েছে। নষ্ট প্রশাসন তথা অকার্যকর প্রশাসন, অক্ষম ও অদক্ষ মন্ত্রী এবং কিছু নষ্ট উপদেষ্টাসহ একটি দুষ্টচক্র দ্বারা পরিবেষ্টিত হওয়ায় তিনি বাস্তবতা অনুধাবন করতে পারছেন না। নানা কারণে অসময়ের সঙ্গী তথা চাটুকারদের প্রতি দুর্বল হওয়ায় তিনি অনেক ক্ষেত্রে শক্তহাতে পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হচ্ছেন। '৭২ সালে যেমন বঙ্গবন্ধুকে ঘিরে থাকা একটা চক্র শত্রু-মিত্র শনাক্ত করতে বাধা দিয়েছিল, সঠিক সময় সঠিক সিদ্ধান্ত গ্রহণে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করেছিল, অনেক ক্ষেত্রে সরকারকে বিভ্রান্ত করে ভুল পথে পরিচালিত করেছিল, তেমনি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে আজ নষ্ট জালে আবদ্ধ করা হচ্ছে। তাঁর নিরাপত্তার কথা বলে, দলের স্বার্থের কথা বলে, সন্ত্রাসীদের কথা বলে বিরোধী দলসহ নানা জুজুর ভয় দেখিয়ে, প্রকৃত শুভাকাঙ্ক্ষীদের থেকে তাঁকে দূরে রাখা হচ্ছে। প্রধানমন্ত্রী ভুলে যাচ্ছেন যে কতিপয় মৌসুমি পাখি, মিথ্যাচারে অভ্যস্ত বহুরূপী কিংবা স্বার্থান্বেষী নিকটজন তাঁর ক্ষমতার উৎস নয়।
তাঁর ক্ষম

No comments

Powered by Blogger.