র‌্যাবের অভিযানে পাঁচজন নিহত

র‌্যাপিড অ্যাকশন ব্যাটালিয়নের (র‌্যাব) সদস্যদের অভিযানে গতকাল মঙ্গলবার সকালে বাগেরহাটের শরণখোলায় পূর্ব সুন্দরবনে চারজন ও বগুড়া শহরে একজন যুবক নিহত হয়েছেন। র‌্যাবের ভাষ্যমতে, সুন্দরবনে নিহত চার ব্যক্তি বনদস্যু গামা বাহিনীর সদস্য।


তাঁদের মধ্যে রয়েছেন বাগেরহাটের মোরেলগঞ্জের বাচ্চু (৩৮), রামপালের জামাল (২৮) ও মন্টু (৫০)। অন্যজনের নাম জানা যায়নি।
বগুড়ায় নিহত মো. রাঙ্গা (২৪) অস্ত্র ব্যবসায়ী বলে দাবি করেছে র‌্যাব। তবে রাঙ্গার পরিবার জানিয়েছে, রাঙ্গা বগুড়া শহরের ঠনঠনিয়া এলাকায় অবস্থিত ওয়াইএমসিএ স্কুলের বাসচালকের সহকারী। অস্ত্র ব্যবসার সঙ্গে জড়িত নন। তাঁদের অভিযোগ, র‌্যাব সদস্যরা রাঙ্গাকে ধরে নিয়ে হত্যা করেছেন।
র‌্যাব-৮-এর পটুয়াখালী ক্যাম্পের লেফটেন্যান্ট কমান্ডার মো. নূরুজ্জামান প্রথম আলোকে বলেন, বনদস্যু গামা বাহিনীর একটি আগ্নেয়াস্ত্রের চালান সুন্দরবনে আসছে জেনে র‌্যাব-৮-এর একটি দল সকালে পূর্ব সুন্দরবনের শরণখোলা রেঞ্জের দুধমুখী খালে অবস্থান নেয়। সকাল নয়টা ৫০ মিনিটের দিকে র‌্যাব একটি ট্রলারের লোকজনকে চ্যালেঞ্জ করলে ট্রলার থেকে র‌্যাবের ওপর গুলি ছোড়া হয়। র‌্যাবও পাল্টা গুলি ছোড়ে। প্রায় এক ঘণ্টা বন্দুকযুদ্ধ শেষে দস্যুরা পিছু হটে। পরে র‌্যাব এলাকায় তল্লাশি চালিয়ে চার দস্যুর মৃতদেহ দেখতে পায়। উদ্ধার করা হয় ১২টি ওয়ান শুটারগান, চারটি এয়ারগান, দুটি এলজি, একটি বিদেশি নাইন এমএম পিস্তল, একটি দেশি পিস্তল, একটি একনলা বিদেশি বন্দুক, তিনটি চায়নিজ কুড়াল, বন্দুকের ৬৮টি তাজা গুলি, বন্দুকের ২২টি গুলির খোসা এবং একটি ট্রলার।
এদিকে গতকাল র‌্যাব-১২ বগুড়া কার্যালয়ের এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়েছে, র‌্যাবের একটি দল ক্রেতা সেজে বগুড়া শহরের সূত্রাপুর এলাকার মো. রেজাউল ও বেজোড়া এলাকার শাকিলের (২৮) সঙ্গে অস্ত্র কেনার বিষয়ে কথা বলে। সোমবার রাতে সাদা পোশাকে র‌্যাবের একটি দল শহরের কলোনি বাজার থেকে ৩০৩ রাইফেলের একটি গুলিসহ রেজাউলকে গ্রেপ্তার করে। এরপর গ্রেপ্তার করা হয় শাকিল ও রাঙ্গাকে। রাঙ্গার তথ্য অনুযায়ী, পাঁচটি হাতবোমা, কিছু বিস্ফোরক দ্রব্য ও ধারালো অস্ত্র, সম্মিলিত সামরিক হাসপাতালের বিভিন্ন ধরনের আট বস্তা ওষুধ উদ্ধার করা হয়। অন্যদিকে রেজাউলের তথ্য অনুযায়ী, মালগ্রাম মধ্যপাড়ার একটি বাসা থেকে একটি পিস্তল ও দেশীয় অস্ত্রসহ মোস্তফাকে (৩০) গ্রেপ্তার করা হয়।
র‌্যাবের বিজ্ঞপ্তিতে আরও দাবি করা হয়, গতকাল সকাল আটটার দিকে রাঙ্গা র‌্যাবকে জানান, শহরের দ্বিতীয় বাইপাস মহাসড়কের রবিবাড়িয়া এলাকার একটি নার্সারিতে অস্ত্র রয়েছে। সঙ্গে সঙ্গে সেখানে অভিযান চালায় র‌্যাব। নার্সারি ঘরের বেড়া ঠেলে ভেতরে ঢোকার সময় ওত পেতে থাকা রাঙ্গার দুই সহযোগী র‌্যাবের দিকে গুলি করে পালাতে থাকে। সন্ত্রাসীদের ছোড়া গুলিতে মাটিতে লুটিয়ে পড়েন রাঙ্গা। এ সময় র‌্যাব ফাঁকা গুলি চালায়। গুলিবিদ্ধ রাঙ্গাকে বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে নিয়ে গেলে কর্তব্যরত চিকিৎসক তাঁকে মৃত ঘোষণা করেন।
ওই নার্সারি তল্লাশি করে ছয়টি গুলিসহ একটি বিদেশি রিভলবার ও কয়েকটি ধারালো অস্ত্র উদ্ধার করেছে বলে র‌্যাব দাবি করেছে।
নিহত রাঙ্গা মা ও এক বোনকে নিয়ে শহরের মালতীনগর পাইকারপাড়ায় থাকতেন।
বগুড়া সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এ কে এম খালেকুজ্জামান বলেন, ‘যতটুকু বলা যায়, নিহত রাঙ্গার নামে কোনো মামলা নেই।’
রাঙ্গার মা হালিমা বেগম প্রথম আলোকে বলেন, সোমবার রাত নয়টার দিকে তাঁর ছেলে তাঁকে মুঠোফোনে জানায়, র‌্যাব তাকে ধরে নিয়ে গেছে। সকালে জানতে পারেন, রাঙ্গা গুলিতে মারা গেছে।
হালিমা বেগম বলেন, তাঁর ছেলে অস্ত্র ব্যবসায়ী নয়। র‌্যাব তাঁর ছেলেকে মেরে ফেলেছে বলে তিনি অভিযোগ করেন।
র‌্যাব-১২ বগুড়ায় কর্মরত সহকারী পুলিশ সুপার সুমিত চৌধুরী প্রথম আলোর কাছে দাবি করেন, রাঙ্গাকে গ্রেপ্তার করে অস্ত্র উদ্ধারে গেলে সন্ত্রাসীরা র‌্যাব সদস্যদের গুলি করে। র‌্যাবও পাল্টা গুলি চালায়। এতে সন্ত্রাসীদের গুলিতে রাঙ্গা মারা যান।

No comments

Powered by Blogger.