ভরসার জায়গাটি কোথায়?

রক্ষকও যে ভক্ষক হতে পারে_তারই একটি উদাহরণ যেন তৈরি হলো। তুলকালাম কাণ্ড ঘটে গেছে দিনাজপুরের কাহারোলে। ডাকাতির অভিযোগে অভিযুক্ত পুলিশ। গণপিটুনির শিকার হতে হয়েছে পুলিশকে। অভিযুক্ত পুলিশ সদস্যদের উদ্ধার করতে গেলে বীরগঞ্জ ও কাহারোল থানার অন্য পুলিশ সদস্যদেরও আটকে রাখে স্থানীয় জনগণ।


জনতা লাঞ্ছিত করেছে দিনাজপুরের জেলা প্রশাসক ও কাহারোলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তাকেও। পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে পুলিশের গাড়ি। ডাকাতির ঘটনায় পুলিশের সংশ্লিষ্টতার পর স্বাভাবিকভাবেই প্রশ্ন ওঠে, জনগণ শেষ ভরসা তাহলে কোথায় রাখবে?
ঘটনাটি ঘটেছে গত সোমবার মধ্যরাতে দিনাজপুরের কাহারোল থানা এলাকায়। বীরগঞ্জ থানা পুলিশ পেট্রল ডিউটির জন্য একটি মাইক্রোবাস ভাড়া করে। রাতে পেট্রল ডিউটির কথা বলে সাদা পোশাকের আট পুলিশ সদস্য আসে কাহারোল থানার বলেয়া বাজার এলাকায়। স্থানীয় বাসিন্দারা সংবাদমাধ্যমকে জানিয়েছে, সোমবার রাত দেড়টার দিকে কাহারোলের বলেয়া বাজারের কাছে ঘাসিয়ারা গ্রামের বাসিন্দা পল্লী চিকিৎসক ও বলেয়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক রাজেন্দ্র দেবনাথের বাড়িতে ডাকাতির ঘটনা ঘটে। ডাকাতি করে যাওয়ার সময় ডাকাতরা দুটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায়। ডাকাতরা দুটি পরিবার থেকে তিন লাখ টাকা, আট ভরি স্বর্ণালংকার ও ছয়টি মোবাইল ফোনসেট নিয়ে যায়। পরে চিৎকার-চেঁচামেচিতে গ্রামবাসী জেগে ডাকাতদের ধাওয়া করে। এ সময় স্থানীয় বাজারে একটি মাইক্রোবাস আটক করে জনগণ। মাইক্রোবাসের লোকজন পালানোর চেষ্টা করলে জনতা তাদের পিটুনি দেয়। জনতা পাঁচজনকে আটক করে, তিনজন পালিয়ে যায়। আটক পাঁচজন নিজেদের পুলিশের সদস্য বলে পরিচয় দেয়। জেলার সহকারী পুলিশ সুপার রাতেই ঘটনাস্থল পরিদর্শনে গেলে গ্রামবাসী তাঁকে ও তাঁর সঙ্গের পুলিশ সদস্যদেরও আটকে রাখে। পরদিন জেলা প্রশাসক এবং কাহারোলের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা ঘটনাস্থলে গেলে বিক্ষুব্ধ জনতার হাতে তাঁরাও লাঞ্ছিত হন। পরে বেলা ৩টার দিকে বাংলাদেশ বর্ডার গার্ড (বিজিবি) সদস্যরা তাঁদের উদ্ধার করেন। ঘটনাস্থল থেকে উদ্ধার করা হয়েছে একটি চাইনিজ রাইফেল। পুলিশ বলেছে, রাইফেলটি তাদের। এ ঘটনার পর বীরগঞ্জ থানার সব পুলিশ সদস্যকে প্রত্যাহার করে নেওয়া হয়েছে।
এলাকাবাসী ও রাজেন্দ্র দেবনাথের বাড়ির লোকজন সংবাদমাধ্যমের কাছে যা বলেছেন, তা থেকে এটাই প্রতীয়মান হয় যে পুলিশ সদস্যরা ডাকাতির জন্যই ওই বাড়িতে যায়। অন্যথায় বীরগঞ্জ থানা পুলিশ কেন কোনো কারণ ছাড়া কাহারোলের একটি বাড়িতে হানা দিতে যাবে? বীরগঞ্জ থানার পুলিশ পেট্রল ডিউটির কথা বলে সাদা পোশাকে নিজেদের থানার মধ্যে কোথাও গেলে আপত্তি উঠবে না। কিন্তু যখন অন্য আরেকটি থানা এলাকায় কোনো অপারেশন করতে যাবে, তখন সংশ্লিষ্ট থানার সেটা জানা থাকার কথা। কাহারোল থানা কি সেটা জানত? তা ছাড়া নিজেদের এলাকা ছেড়ে অন্য এলাকায় ঢুকে একটি বাড়িতে অনধিকার প্রবেশ কেন করবে পুলিশ? কোথাও কাউকে গ্রেপ্তার করতে গেলে বা কোনো অপারেশনে গেলে তার সুনির্দিষ্ট নিয়ম আছে। সে নিয়ম কতখানি মানা হয়েছে এখানে?
পুলিশের দায়িত্ব আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ঠিক রাখা। সেখানে পুলিশই যদি আইন ভাঙে, শৃঙ্খলাপরিপন্থী কাজ করে, তাহলে কী হবে? এখন পর্যন্ত যে খবর পাওয়া গেছে তাতে এটাই স্পষ্ট হয় যে বীরগঞ্জ থানা পুলিশ ডাকাতিই করতে গিয়েছিল। সেটা প্রমাণিত হলে এই ডাকাতরূপী পুলিশদের অবশ্যই বিচারের মুখোমুখি করতে হবে। কারণ একটি বিভাগের বিশ্বাসযোগ্যতা প্রশ্নের সম্মুখীন হতে পারে না। মানুষ পুলিশের ওপর আস্থা রাখতে চায়, পুলিশের ওপর ভরসা করতে চায়। পুলিশের কতিপয় দুর্বৃত্ত সদস্যের কারণে সেই ভরসার জায়গাটি নষ্ট হতে দেওয়া যায় না।

No comments

Powered by Blogger.