শিল্প খাতে ঋণ-সুদহার কমানো হোক

শিল্পঋণের সুদহার কমাতে উদ্যোক্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। সোমবার এফবিসিসিআই, বিজিএমইএ, অ্যাসোসিয়েশন অব ব্যাংকার্স, ঢাকা স্টক এক্সচেঞ্জ, উইমেন এন্টারপ্রিনিয়ার্স অ্যাসোসিয়েশনসহ ব্যবসায় ও শিল্প খাতের কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তারা বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ও অন্যান্য শীর্ষ কর্মকর্তার সঙ্গে


সাক্ষাৎ করে বলেন, সুদের উচ্চ হারের কারণে শিল্প খাত হুমকির মুখে পড়ছে। শিল্পঋণের ক্ষেত্রে সুদের হার সাড়ে ১৫ শতাংশ বেঁধে দেওয়া হলেও বেশিরভাগ ব্যাংক তা মানছে না। ২১ শতাংশ হারে সুদ আদায়ের ঘটনাও রয়েছে। এ ধরনের উচ্চ হারের সুদের কারণে শিল্প-কারখানা পরিচালনার পরিবর্তে অনেকে ব্যাংকে আমানত রেখে নিরাপদ উপার্জনের পথে চললে বিস্ময়ের কিছু থাকবে না। বাংলাদেশ ব্যাংক, সরকারি-বেসরকারি বাণিজ্যিক ব্যাংক এবং সংশ্লিষ্ট সব পক্ষ এ বিষয়টি বিবেচনায় নেবে_ এটাই কাম্য। বাজার অর্থনীতিতে কেন্দ্রীয় ব্যাংক সুদের হার বেঁধে দিতে পারে না_ এটা তত্ত্বের কথা। কিন্তু বাংলাদেশ ব্যাংকের মনিটরিংয়েই দেখা যায়, অনেক ব্যাংক ঘোষিত হারের চেয়ে বেশি সুদ নিচ্ছে। বাংলাদেশ ব্যাংক সম্প্রতি যে বার্ষিক প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে তাতে দেখা যায়, গত অর্থবছরে জিডিপিতে শিল্প খাতের অবদান ছিল ৩০ দশমিক ৪ শতাংশ এবং প্রবৃদ্ধি হার ৮ দশমিক ২ শতাংশ। বৃহৎ, মাঝারি ও ক্ষুদ্র_ সব ধরনের শিল্পেই অগ্রগতি ধারাবাহিক ও আশাব্যঞ্জক। এ ধারা বজায় রাখতে বিশেষ প্রণোদনা প্রয়োজন। কেন্দ্রীয় ব্যাংক কৃষি এবং ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প খাতে রিফাইন্যান্স কর্মসূচির মাধ্যমে সহায়তা দিচ্ছে। বর্গাচাষিরাও এখন স্বল্প হার সুদে ঋণ পাচ্ছে। ম্যানুফ্যাকচারিং খাতের জন্য এ ধরনের সুবিধা প্রদানের বিষয়টি বিবেচনা করা যায়। ব্যাংকগুলোর মুনাফা-চিত্রও সুদের হারে ছাড় দেওয়ার দাবি সমর্থন করে। ২০১০ সালে বেসরকারি ব্যাংকগুলোর সমষ্টিগত মুনাফা ছিল ৮২৮০ কোটি টাকা এবং পরের ছয় মাসে ছিল ৪২২০ কোটি টাকা। বিদেশি ব্যাংকগুলো সীমিত আমানত নিয়ে মাত্র ছয় মাসে মুনাফা করেছে ৮৪০ কোটি টাকা। এক সময়ে লোকসানি খাত হিসেবে অপবাদ কুড়ানো সরকার পরিচালিত ব্যাংকগুলোও এখন নিয়মিত লাভের মুখ দেখছে। ব্যবসায় লাভ থাকবেই এবং সর্বোচ্চ লাভের জন্য চেষ্টা চালানোও দূষণীয় নয়। কিন্তু এ প্রক্রিয়ায় শিল্প খাতের অস্তিত্ব সংশয়ে পড়ূক_ সেটা কাম্য হতে পারে না। শিল্পায়ন প্রক্রিয়া এগিয়ে চললে পরনির্ভরতা কমবে; বেকারদের জন্য নতুন নতুন কাজের সুযোগ সৃষ্টি হবে। সরকারের রাজস্ব আয় বাড়াতেও তা অবদান জোগাবে। কৃষি খাতে তুলনামূলক কম সুদ হারে ঋণ প্রদান করতে গিয়ে রিফাইন্যান্সিং বাবদ সরকারি কোষাগার থেকে কিছু অর্থ বের হয়ে যাচ্ছে ঠিকই, কিন্তু দেশ ক্রমে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে ওঠায় খাদ্য আমদানি প্রায় শূন্যে নেমে এসেছে এবং এভাবে এক হাতে দেওয়া সুবিধা আরও বেশি হারে অন্য হাতে ফিরে আসছে। শিল্প খাত যে সম্ভাবনা সৃষ্টি করেছে, তাতে এ ধরনের সুবিধা প্রদানের কথা ভাবাই যায়। কিন্তু তারও আগে ব্যাংকগুলোর উচিত ব্যবসার স্বার্থকে বড় করে দেখা। ঋণ জোগানোর জন্য উপযুক্ত প্রতিষ্ঠানের অভাব নেই। ঋণখেলাপি হওয়ার শঙ্কাও এখন কমে এসেছে। এ অবস্থায় আকর্ষণীয় প্রতিষ্ঠানকে ঋণ জোগাতে ব্যাংকগুলো কিন্তু নিজেদের মধ্যে প্রতিযোগিতাতেও নামতে পারে।

No comments

Powered by Blogger.