রেল খাত-চাঙ্গা করতে দূরদর্শী উদ্যোগ দরকার

অতীতের গৌরবময় বাংলাদেশ রেলওয়ে ক্রমেই যেন স্মৃতি হয়ে যাচ্ছে। তবে আশার কথা হলো, বর্তমান সরকার বিলম্বে হলেও এর গুরুত্ব অনুধাবন করে পৃথক মন্ত্রণালয় গঠন করে ইতিমধ্যে একজন রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন ব্যক্তিকে মন্ত্রী নিয়োগ করেছে। রেলমন্ত্রী সুরঞ্জিত সেনগুপ্ত খাতটির বিবর্ণ চিত্র মুছে ফেলার যে চেষ্টা চালাচ্ছেন তাতে তিনি সফলকাম


হবেন_এমন প্রত্যাশা জনমনে বিরাজ করছে। এ দেশে রেলের যাত্রা শুরু হয়েছিল সেই ব্রিটিশ শাসনামলে। ইস্ট বেঙ্গল রেলওয়ে কালক্রমে ইস্ট পাকিস্তান রেলওয়ে এবং অবশেষে বাংলাদেশ রেলওয়েতে পরিণত হয়েছে। কিন্তু রেলওয়ের সার্বিক দুরবস্থা কাটেনি।
গত ২৭ ফেব্রুয়ারি কালের কণ্ঠ ও একটি সহযোগী দৈনিকে এ-সম্পর্কিত কয়েকটি প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়েছে। প্রতিটি প্রতিবেদনেই এই খাতের করুণ চিত্রই ফুটে উঠেছে। 'রেলের দুই বছর হয় এক যুগে!' বিস্ময়সূচক চিহ্নযুক্ত এই শিরোনামে কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দুই বছরের মধ্যে কাজ শেষ হওয়ার কথা থাকলেও রেলওয়ের ঢাকা-জয়দেবপুর মিটারগেজ সেকশনকে দ্বৈত গেজে রূপান্তরে সময় লেগেছে এক যুগ। প্রকল্পের মেয়াদ দুই দফা বাড়ানোর ফলে সরকারকে গচ্চা দিতে হয়েছে প্রায় ২৩২ কোটি টাকা। আরো বিস্ময়কর হলো, খরচ হয়নি অথচ প্রকল্পের আওতায় আট কোটি টাকা বেশি ব্যয় দেখানো হয়েছে। সহযোগী দৈনিকে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে বলা হয়েছে, অনিশ্চয়তার মধ্যে পড়ে গেছে চট্টগ্রাম-কঙ্বাজার রেললাইন স্থাপন প্রকল্প। অর্থের অভাবে ঝুলে গেছে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার অগ্রাধিকারভুক্ত বহুল আলোচিত এ প্রকল্পটি। একই দৈনিকের অন্য প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সিলেটের সীমান্তবর্তী কোম্পানীগঞ্জ উপজেলার ভোলাগঞ্জে ধলাই নদীর অববাহিকায় দেশের বৃহত্তম পাথর কোয়ারিতে রেলওয়ের সংরক্ষিত এলাকার কোটি কোটি টাকার সম্পদ লুটে নিচ্ছে দুর্বৃত্তচক্র। এটি একটিমাত্র দৃষ্টান্ত। এ রকম ঘটনা প্রায় সর্বত্রই ঘটে চলেছে। রেলের উন্নয়ন থেকে শুরু করে সম্পদ রক্ষা, সব ক্ষেত্রেই প্রশ্নবোধক চিহ্ন। রেল ক্রমেই যাত্রী হারাচ্ছে এবং যাতায়াতের জন্য নিরাপদ ও আরামদায়ক এই যোগাযোগ মাধ্যমটির দিক থেকে যাত্রীরা ত্যক্ত-বিরক্ত হয়ে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রেও প্রায় একই চিত্র। রেলের চাহিদা ও জনপ্রিয়তা দুটিই যথেষ্ট হওয়া সত্ত্বেও খাতটি কেন শ্বেতহস্তীতে পরিণত হচ্ছে, এর উত্তর অনুসন্ধান ও তার প্রতিকার সময়ের দাবি।
রেলের হৃত গৌরব পুনরুদ্ধারে পরিকল্পিত দূরদর্শী উদ্যোগ অত্যন্ত জরুরি। রেল খাতকে চাঙ্গা করতে হলে এর কোনো বিকল্প নেই। যে দুষ্টচক্র রেলের ওপর চেপে বসে রাষ্ট্রীয় কোষাগারের বিপুল ক্ষতি করছে, যাত্রীদের রেলবিমুখ করছে, এদের মূলোৎপাটনও সমভাবে জরুরি। বিশ্বব্যাপী গণপরিবহন হিসেবে রেলওয়ে এখনো তালিকার শীর্ষে থাকলেও বাংলাদেশে খাতটি নানা কারণে ধুঁকে ধুঁকে মরছে। এখন যেহেতু রেলওয়ে একটি পৃথক মন্ত্রণালয় হিসেবে স্বীকৃতি পেয়েছে, সেহেতু রেলওয়ের উন্নয়নসহ সার্বিক চিত্র উজ্জ্বল করতে ত্বরিত পদক্ষেপ নেওয়া দুরূহ কোনো বিষয় নয়। রেলের জমি ও সম্পদ যাতে বেহাত না হয়, সেদিকে কঠোর দৃষ্টি দেওয়ার পাশাপাশি হৃত সম্পদ পুনরুদ্ধারেও জোরদার পদক্ষেপ নিতে হবে। বন্ধ স্টেশন চালুসহ রেললাইন বিস্তৃতকরণ ও উন্নীতকরণের কাজ গতিশীল করা দরকার।

No comments

Powered by Blogger.