খুলনা-এলপি গ্যাস কিনতেই গ্রাহকদের নাভিশ্বাস by শেখ আবু হাসান

খুলনা বিভাগে এলপি গ্যাসের দাম আরও বেড়েছে। গত এক মাসে প্রতিটি সিলিন্ডারের দাম ১০০-১৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। সরকারি নজরদারি না থাকায় বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো ইচ্ছেমতো দাম বাড়াচ্ছে বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। এতে সাধারণ গ্রাহকদের নাভিশ্বাস উঠে গেছে।


খুলনা জেলা এলপি গ্যাস ডিলার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ডিসেম্বর মাসে খুলনা অঞ্চলে এলপি গ্যাসের প্রতিটি সিলিন্ডার এক হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। গত ২ জানুয়ারি ৫০ টাকা দাম বাড়ানোর কারণে প্রতি সিলিন্ডার ১৩০০-১৩১০ টাকায় বিক্রি হয়। ফেব্রুয়ারি মাসে পুনরায় দাম বাড়ানোর কারণে সেই গ্যাসই ১৩৮০-১৪২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বাজার ঘুরে দেখা গেছে, বসুন্ধরা গ্যাসের প্রতিটি সিলিন্ডার ১৩৮০-১৪০০, ক্লিনহিট ১৩৮০, টোটাল গ্যাস ১৪০০-১৪২০ এবং যমুনা (প্রাইভেট) ১৩৮০-১৪০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। দফায় দফায় গ্যাসের দাম বাড়ায় গ্রাহকেরা চিন্তিত হয়ে পড়েছেন।
উন্নয়নকর্মী শামীমা সুলতানা বলেন, মাসিক আয়ের একটি বড় অংশই গ্যাসের সিলিন্ডার কিনতে গিয়ে ব্যয় করতে হচ্ছে। তাই সিলিন্ডার কিনতে গিয়ে সংসারের অন্যান্য খরচ কমাতে হচ্ছে।
আবদুর রাজ্জাক নামে নগরের এক সিলিন্ডার গ্রাহক জানান, গত এক মাসে দুই দফা গ্যাসের দাম বেড়ে যাওয়ায় রান্না বন্ধ হওয়ার উপক্রম হয়েছে। প্রতি মাসে তাঁর দুটি সিলিন্ডারের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দাম বাড়ায় এখন একটি সিলিন্ডার কিনতে হচ্ছে।
খুলনা বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক দিলীপ দত্ত প্রথম আলোকে জানান, যেভাবে জ্বালানি তেল ও গ্যাসের দাম বাড়ছে, তাতে জ্বালানি কাঠের ওপর চাপ বেড়েই চলেছে। পরিবেশ রক্ষার জন্য বেশি বেশি গাছ লাগানোর কথা বলা হচ্ছে। জ্বালানি কাঠের চাহিদা মেটানোর জন্য গাছ কেটে ফেলায় পরিবেশের ওপর বিরূপ প্রভাব পড়বে।
কয়েকজন ডিলার জানান, বাংলাদেশ পেট্রোলিয়াম করপোরেশনের (বিপিসি) প্রতি সিলিন্ডার গ্যাসের সরকারি দাম ৭৫০ টাকা। কিন্তু বাজারে এ গ্যাস পাওয়া যায় না। ফলে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের গ্যাস দিয়েই এ অঞ্চলের মানুষের চাহিদা পূরণ করা হচ্ছে।
খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, গত বৃহস্পতিবার খুলনা মহানগরের সব ডিলারের দোকানে বেসরকারি কোম্পানির এলপি গ্যাস বর্ধিত দামেই বিক্রি হয়েছে। বিপিসির গ্যাসের সিলিন্ডার ডিলারদের কাছে নেই।
খুলনা জেলা এলপি গ্যাস ডিলার ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক শেখ আবুল কাশেম বলেন, খুলনা অঞ্চলে বিপিসির গ্যাসের সরবরাহ চাহিদার তুলনায় অনেক কম। এ কারণে বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো সিলিন্ডারের দাম কয়েক দফা বাড়িয়েছে। আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম কমলেও দেশের বাজারে তা আর কমানো হয় না। এ ব্যাপারে দেখার কেউ নেই। নেই কোনো নীতিমালা। দাম বাড়ানোর চাপ সাধারণ মানুষের ওপর পড়ছে।
বৃহত্তর খুলনা উন্নয়ন সংগ্রাম সমন্বয় কমিটির মহাসচিব শেখ আশরাফ-উজ-জামান বলেন, কোনো কারণ ছাড়াই দফায় দফায় এলপি গ্যাসের দাম বাড়ায় খুলনা অঞ্চলের সাধারণ মানুষ অসহায় হয়ে পড়েছে। বর্তমানে জীবনযাত্রার ব্যয় বৃদ্ধির পাশাপাশি গ্যাসের দাম লাগামছাড়া বৃদ্ধি পাওয়ায় জনজীবনে নাভিশ্বাস উঠেছে।
ক্লিনহিটের খুলনা অঞ্চলের বিপণন কর্মকর্তা গিয়াস উদ্দিন দাবি করেন, ডলারের দাম বৃদ্ধি, মধ্যপ্রাচ্যে রাজনৈতিক অস্থিরতা এবং আন্তর্জাতিক বাজারে গ্যাসের দাম বাড়ায় দেশে সিলিন্ডারের দাম বাড়াতে হয়েছে। মংলার কোম্পানির কারখানা থেকে ডিস্ট্রিবিউটরের কাছে ১২ কেজি ওজনের সিলিন্ডার ১৩৪০ এবং সাড়ে ১২ কেজি ওজনের ১৩৭০ টাকায় সরবরাহ করা হচ্ছে।
পদ্মা অয়েলের খুলনা অঞ্চলের ব্যবস্থাপক (বাণিজ্য) শেখ আল মামুন জানান, অপরিশোধিত তেলের আমদানি কম হওয়ায় ইস্টার্ন রিফাইনারিতে গ্যাসের উৎপাদন কমে গেছে। এ কারণে খুলনা অঞ্চলে বিপিসির গ্যাসের সরবরাহ কমে গেছে।

No comments

Powered by Blogger.