ভূমিকম্প-কারিগরি উপায়ে ঝুঁকি হ্রাস by মেহেদী আহম্মদ আনসারী

ঢাকা শহরে ভূমিকম্পের ঝুঁকি নিয়ে কয়েক বছর ধরে ব্যাপক আলোচনা হচ্ছে। গত ১৮ সেপ্টেম্বর ৬ দশমিক ৯ মাত্রার ভূমিকম্প হয় সিকিমে, যা ঢাকা থেকে প্রায় ৬০০ কিলোমিটার দূরে। এতে ঢাকার দালানকোঠার ক্ষতি না হলেও ভূমিকম্পটির স্থায়িত্বকাল ছিল ১০০ সেকেন্ডের মতো। ভূমিকম্পটির কেন্দ্রস্থলে তীব্রতা ছিল ৭ থেকে ৮। তবে ঢাকা শহরে এর তীব্রতা ৩ থেকে ৪-এর মধ্যে ছিল।


গবেষণায় দেখা গেছে, রাজধানীর সবচেয়ে কাছের এলাকা মধুপুরচ্যুতিতে ৭ মাত্রা অথবা সিলেটে ডাউকিচ্যুতিতে ৮ মাত্রার ভূমিকম্প হলে ঢাকার ৬০ শতাংশ লাল মাটি এলাকায় ভূমিকম্পের তীব্রতা ৮ এবং বাকি ৪০ শতাংশ ভরাট মাটি এলাকায় তীব্রতা ৯ থেকে ১০ হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।
ভরাট মাটির এলাকাগুলো স্থানভেদে ৪০ থেকে ১০০ ফুট গভীরতা পর্যন্ত নরম মাটি বা দুর্বল বালু দিয়ে ভরাট করা। দুর্বল এই ভরাট মাটি ভূমিকম্প-সহনীয় করার অনেক পদ্ধতি রয়েছে। এই পদ্ধতিগুলোর মধ্যে কতগুলো নির্মিত ভবনের নিচেও ব্যবহার করা সম্ভব । ভরাট করা মাটিতে নির্মাণের আগেই দুর্বল মাটি ওপরে উল্লিখিত যেকোনো পদ্ধতিতে উন্নয়ন করা জরুরি। মাটি উন্নয়নের পরবর্তী সময়ে ভবনকে ভূমিকম্প-সহনীয় করা প্রয়োজন। একটি ভবনের কলামের চুড়িগুলো ১৩৫ ডিগ্রিতে বাঁকিয়ে স্থাপন করতে হবে। ভবনের বিম ও কলামের জোড়া এবং তার ওপরে, নিচে ও দুই পাশে অন্তত দুই ফুট পর্যন্ত ঘন ঘন চুড়ি স্থাপন করতে হবে। তা ছাড়া ভবনের একতলায় উন্মুক্ত কার পার্কিং না রাখাই শ্রেয়। অন্ততপক্ষে কার পার্কিং রাখতে হলে ভবনের কম্পিউটার মডেলিংয়ের মাধ্যমে কলামগুলো শক্তিশালী অথবা যথাযথ স্থানে কংক্রিটের তৈরি শক্ত দেয়াল অথবা ব্রেসিং দিতে হবে।
ভবন ভূমিকম্প-সহনীয় করার জন্য যেমন প্রয়োজন যথাযথ নকশা প্রণয়ন, তেমনি ভবন নির্মাণ-উপকরণের মান নিয়ন্ত্রণ ও ভবন নির্মাণ-নকশা অনুযায়ী হচ্ছে কি না, তার যথাযথ তদারকি প্রয়োজন।
ড. মেহেদী আহম্মদ আনসারী: অধ্যাপক, পুরকৌশল বিভাগ, বুয়েট; প্রতিষ্ঠাতা মহাসচিব, বাংলাদেশ ভূমিকম্প সমিতি এবং বিশ্ব সাইসমিক সেফটি কমিশনের (ডব্লিউএসএসআই) পরিচালক।

No comments

Powered by Blogger.