নীতিনির্ধারকদের অসময়োচিত সিদ্ধান্ত ক্ষতি করেছে by মির্জ্জা আজিজুল ইসলাম

বাংলাদেশ বিশ্বের সবচেয়ে খারাপ পুঁজিবাজারের একটি, এমন কথা কেউ বললে বলতেও পারেন। এটা তাঁর ব্যাপার। তবে আমি এ বিষয়ে মন্তব্য করতে চাই না। কারণ বিশ্বের অন্তত ১০০টি দেশে পুঁজি বিনিয়োগ ব্যবসা হয়ে থাকে। এত দেশের মধ্যে বাংলাদেশের অবস্থান কোথায়- এমন কোনো পরিসংখ্যান আমার জানা নেই। তবে এটা তো ঠিক, বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের অবস্থা ভালো নয়।
অস্থিতিশীল বাজার পরিস্থিতিকে কি অস্বীকার করা যাবে? বাংলাদেশের পুঁজিবাজারের যে উত্থান-পতন অবস্থা, তা সত্যিই উদ্বেগজনক। এত দ্রুত উত্থান ও এত দ্রুত পতন পুঁজিবাজারকে অস্থিতিশীল করে দিয়েছে। পুঁজি বিনিয়োগকারীদের মধ্যে আতঙ্ক বিরাজ করছে। বাজার উত্থান ও পতনের কিছু কারণ রয়েছে। একটি মহলও বাজার অস্থিতিশীল করার জন্য দায়ী। তারা পুঁজিবাজারে চাহিদা বৃদ্ধির ব্যাপারে সক্রিয় হয়। এটা ব্রোকার্সরাও করেছে। অন্যদিকে দেখুন- বিনিয়োগকারীরা করলেন কী? তাঁরা অতি দ্রুত মুনাফাপ্রাপ্তির প্রত্যাশায় ব্যাপকভাবে বিনিয়োগ করে বসে আছেন বাজারে। বেহিসাবি বিনিয়োগের পরিণতি কী হতে পারে তাঁরা তাৎক্ষণিক চিন্তা করেননি। মূল্যস্ফীতির ব্যাপারটিও আমাদের খেয়াল করতে হবে। মূল্যস্ফীতি বৃদ্ধি হয়েছে কী পরিমাণ খেয়াল করুন। তার প্রভাব কি পুঁজিবাজারে পড়বে না? ব্যাংকগুলোতে তারল্য সংকট তৈরি হয়েছে। ব্যাংকগুলোতে বড় রকমের তারল্য সংকট থাকলে পুঁজিবাজার ভালো হয় না। এখানেও তা-ই হয়েছে। নীতিনির্ধারকদের সিদ্ধান্ত পুঁজিবাজারকে নিয়ন্ত্রণ করবে- এটাই তো স্বাভাবিক। নীতিনির্ধারকদের মধ্যে যদি ভুলভ্রান্তি থাকে তাহলে এর দায় বাজারে পড়বে। তাঁদের ঘোষণাগুলো বাজারের স্থিতিশীলতা বজায় রাখার ক্ষেত্রে বিরূপ প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি করেছে। তাঁদের অধিকাংশ ঘোষণাই হয়েছে অসময়োচিত। এসব কারণেই তো বাজারের এ দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি।
এখন আমাদের ভাবতে হবে, কিভাবে এই দুর্যোগ থেকে উত্তরণ ঘটানো যায়। প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের আগ্রহী করে তোলা গেলে বাজার পরিস্থিতি শান্ত হওয়ার সম্ভাবনা আছে। বিনিয়োগ পরিস্থিতির উন্নতি করার জন্য ব্যাংকার্স অ্যাসোসিয়েশন যে ঘোষণা প্রদান করেছিল, তা কিন্তু কার্যকর হয়নি। যত দ্রুত সম্ভব তাদের ঘোষণা কার্যকর করা হোক। এটা করতে পারলে ইতিবাচক একটি পদক্ষেপ হিসেবে গণ্য হবে। মার্চেন্ট ব্যাংকগুলো রাইট শেয়ার বাড়াতে পারে। তাদের তারল্য সংকট কাটানোর প্রচেষ্টা নিতে হবে।
বাজারে যখন অস্বাভাবিক উত্থান হয়েছিল, তখন যেমন কারসাজির অভিযোগ আনা হয়েছিল। পরবর্তী সময় কারসাজি নিয়ে যেমন হৈচৈ হয়েছে, তার মধ্যেই রয়েছে কারণ।
স্পন্সর ডাইরেক্টরদের ভূমিকা নিতে হবে। ৩০ শতাংশ শেয়ার কিনতে হবে তাঁদের। পরবর্তী সময় আমরা খন্দকার ইব্রাহিম খালেদকে একটি প্রতিবেদন প্রদান করতে দেখেছি। তিনি বেশ কিছু অনুসন্ধানের সুপারিশ করেছিলেন। তাঁর সুপারিশগুলোর ব্যাপারে কতটুকু ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে, তাও ভেবে দেখতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.