বিনিময়ের সময়সীমা ঘোষণা করুন-ছিটমহলবাসীর আন্দোলন

ভারতের প্রধানমন্ত্রী মনমোহন সিংয়ের ঢাকা সফরের সময় সীমান্ত বিরোধ নিষ্পত্তির পাশাপাশি ছিটমহল বিনিময়ের ব্যাপারে দুই দেশ সম্পূরক চুক্তি করলেও নির্দিষ্ট সময়সীমা বেঁধে না দেওয়ায় সেখানকার বাসিন্দারা আন্দোলনে নেমেছে। ইতিমধ্যে তারা সভা-সমাবেশ, মশাল মিছিল, নিষ্প্রদীপ মহড়া ও অনশন কর্মসূচি পালন করেছে এবং এক মাসের সময়সীমা বেঁধে দিয়ে বলেছে, ২ নভেম্বরের মধ্যে দাবি পূরণ করা না হলে আরও কঠোর কর্মসূচিতে যাবে।


১৯৪৭ সালের দেশ বিভাগের পর থেকে ছিটমহল সমস্যাটি ঝুলে আছে । ১৯৭৪ সালে এ ব্যাপারে দুই দেশের শীর্ষ রাজনৈতিক পর্যায়ে চুক্তি হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি। এমনকি সেই চুক্তিটি বাংলাদেশের জাতীয় সংসদ অনুমোদন করলেও ভারতীয় সংসদে তা অনুমোদন পায়নি। এরপর গঙ্গা পদ্মায় অনেক পানি গড়িয়েছে। দুই দেশের মধ্যে দফায় দফায় আলোচনা ও বৈঠকের পর গত ৭ সেপ্টেম্বর যে সম্পূরক চুক্তি সই হয়েছে, তা ছিটমহলবাসীকে আশ্বস্ত করতে পারেনি। তবে দুই দেশের নীতিনির্ধারকদের পক্ষ থেকে দাবি করা হয়েছে, অবিলম্বে ছিটমহল সমস্যার সমাধান হবে।
সম্পূরক চুক্তি বাস্তবায়িত হলে ১১১টি ভারতীয় ছিটমহল বাংলাদেশের এবং ৫১টি বাংলাদেশি ছিটমহল ভারতের অন্তর্ভুক্ত হবে। প্রধানমন্ত্রীর পররাষ্ট্রবিষয়ক উপদেষ্টা গওহর রিজভী বলেছেন, ভারতীয় লোকসভার শীতকালীন অধিবেশনে সম্পূরক চুক্তিটি অনুমোদন করার পর ছিটমহল বিনিময়ের প্রক্রিয়া শুরু হবে। যদিও ভারত সরকারের পক্ষ থেকে সে রকম কোনো আশ্বাস পাওয়া যায়নি।
আমরা আশা করতে চাই, অবিলম্বে ছিটমহল বিনিময়ের কাজ শুরু হবে এবং ছিটমহলবাসীর দুঃখ-দুর্দশার অবসান হবে। ৬৪ বছর ধরে সমস্যাটি ঝুলে থাকায় সেখানকার বাসিন্দারা শুধু নাগরিক অধিকার থেকেই বঞ্চিতই হচ্ছে না, সব ধরনের মৌলিক সুযোগ-সুবিধা থেকেও বঞ্চিত হচ্ছে। ছিটমহলের বাসিন্দারা অন্য দেশের ভেতরে বিচ্ছিন্ন জীবন যাপন করছে, হাটবাজার করা থেকে শুরু করে সন্তানের লেখাপড়া—সবকিছুর জন্য যে দেশটির ওপর নির্ভর তাদের করতে হয়, সেটি পর দেশ। কাগজপত্রে তারা যে দেশের নাগরিক, সেই দেশের সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক নেই।
আমরা এই অমানবিক অবস্থার অবসান চাই। ভাগ্যবিড়ম্বিত মানুষগুলো ‘দাও নাগরিত্ব নয় মৃত্যু’র মতো চূড়ান্ত কর্মসূচি নেওয়ার আগেই দুই দেশের নীতিনির্ধারকেরা ছিটমহল বিনিময়ের সময়সীমা বেঁধে দেবেন।

No comments

Powered by Blogger.