আইজি প্রিজনের অমার্জনীয় অসদাচরণ-কারাগার পরিদর্শনে বাধা

জাতীয় মানবাধিকার কমিশনের চেয়ারম্যান ড. মিজানুর রহমানের কারাগার পরিদর্শন ছিল এমন একটি প্রয়োজনীয় উদ্যোগ, যা ছিল কমিশন আইনের সঙ্গে সংগতিপূর্ণ। কিন্তু তাতে বাধা দিয়েছেন আইজি প্রিজন। কমিশনের তরফে কারাগার পরিদর্শন কোনোভাবেই কারও অনুমোদনের ওপর নির্ভর করে না।


তবে যেটা লক্ষণীয় সেটা হলো, সিলেটের জনপ্রশাসন যথাযথভাবে কমিশন চেয়ারম্যানের প্রস্তাবিত পরিদর্শনকে সফল করতে আয়োজনের কোনো ত্রুটি রাখেনি। আমরা যে বিবরণ পেয়েছি তাতে মনে হচ্ছে, আইজি প্রিজন তাঁর কোনো ব্যক্তিগত ভ্রান্তি বা অহম থেকে কমিশন চেয়ারম্যানের কর্তব্যকাজে বাধা দিয়েছেন। এটাও লক্ষণীয় যে ক্ষুব্ধ কমিশন চেয়ারম্যান এ জন্য রীতিমতো আইজি প্রিজনের অপসারণ দাবি করেছেন।
এ প্রসঙ্গে আমরা স্মরণ করতে পারি যে গত বছর কমিশন চেয়ারম্যান খাগড়াছড়ি সফরে গিয়েছিলেন। সেখানে তিনি পিলখানা বিদ্রোহের দায়ে বিচারের জন্য অপেক্ষমাণ কয়েদিদের সঙ্গে কথা বলেন। পরে তিনি সাংবাদিকদের বলেছিলেন, কয়েদিরা বিচার চান। কিন্তু চলমান বিচার-প্রক্রিয়ার স্বচ্ছতা নিয়ে তাঁরা সন্দিহান। এ নিয়ে তাঁদের উদ্বেগ আছে। তাঁর এই মন্তব্যের পর তাঁকে রাঙামাটি কারাগার পরিদর্শন করতে দেওয়া হয়নি। সে ক্ষেত্রেও আইজি প্রিজনের নির্দেশ ছিল। আমরা যত দূর বুঝতে পারি, দেশের কারাগারগুলোকে ঘিরে দুর্নীতির ডালপালা বিস্তার করেছে। এমনকি এমন অভিযোগও রয়েছে যে কোনো কোনো ক্ষেত্রে দুর্নীতির অর্থ বহু প্রভাবশালী ব্যক্তির মধ্যে ভাগাভাগির ঘটনাও ঘটছে।
অতীতে কারা সংস্কার কমিশনের সুপারিশ যথাযথভাবে বাস্তবায়িত হয়নি। বেশির ভাগ কারাগারে স্থান সংকুলান একটা বিরাট সমস্যা। সেখানে দুর্নীতির কারণে বিচারাধীন কয়েদি ও দণ্ডিতদের মানবাধিকারের লঙ্ঘন ঘটছে। এ রকম প্রেক্ষাপটে কমিশন চেয়ারম্যান পর্যায়ক্রমে কারাগারগুলো পরিদর্শন করছিলেন। আইজি প্রিজনের পক্ষে কমিশন চেয়ারম্যানের নিরাপত্তাগত যে প্রশ্ন তোলা হয়েছে বলে খবর বেরিয়েছে, তা আমাদের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয় না। কারণ, কারাগারগুলোতে ভিআইপি পরিদর্শনের বিধিবদ্ধ ব্যবস্থা এমনিতেই বজায় থাকার কথা।
প্রসঙ্গক্রমে আমরা মানবাধিকার কমিশনের প্রতি বর্তমান সরকারের সার্বিক ও অব্যাহত বিমাতাসুলভ আচরণের নিন্দা না জানিয়ে পারি না। প্রায় চার বছর হতে চলল, অদ্যাবধি কমিশনের বিধি চূড়ান্ত হয়নি। তাদের লোকবল এখনো অপ্রতুল। কমিশন স্বাধীনভাবে একটি তদন্তও করতে পারেনি। কমিশন বানিয়ে এ রকম অবস্থায় ফেলে রাখার কারণে জাতিসংঘ সম্প্রতি বাংলাদেশ মানবাধিকার কমিশনকে দ্বিতীয় শ্রেণীর ক্যাটাগরিতে ফেলেছে। অথচ আফগানিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কার কমিশন ‘এ’ ক্যাটাগরিভুক্ত। আমরা আশা করব, স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটি কমিশনকে সক্রিয় করতে উদ্যোগী এবং আইজি প্রিজনের বিরুদ্ধে আনা শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ খতিয়ে দেখতে উদাসীন থাকবে না।

No comments

Powered by Blogger.